তরী আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিলো। আমি আর কিছু বলার সময় পেলাম না। তবে মনে মনে রিমির উপর প্রচন্ড রাগ উঠলো। হারামজাদি আমার জীবনের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। ওকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।
আমি রাগে ক্ষীপ্ত হয়ে বাড়ির পথে রওনা হলাম। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখি আরেক কান্ড। যেটার জন্য আমি তৈরি ছিলাম না।
.
বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় আয়োজন চলছে। কিন্তু তরীর সাথে তো আমার বিয়েটা ভেঙে গেছে। এতক্ষণে বাড়ির সবার সেটা জেনে যাওয়ার কথা। তবুও কেন বিয়ের আয়োজন চলছে বাড়িতে.? নাকি এখনো কেউ জানে না আমার বিয়েটা ভেঙে গেছে.? মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। আজ সারাদিনে শুধু অবাক হয়েই চলেছি। আরো কত কি যে দেখতে হবে কে জানে।
.
আমি এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে। সুই ফেলার জায়গাটাও নেই। আমি ঠেলাঠেলি করে রিমিকে খুঁজছি। শয়তান্নী'টা যে কই যে লুকিয়ে আছে কে জানে। হাতের কাছে পেলে চামড়া তুলে নিবো। এমন সময় আমার বন্ধুরা আমাকে দেখা মাত্রই ছুটে এলো। তারিফ হন্তদন্ত হয়ে বললো,
.
-- এইটুকু পথ আসতে এত সময় লাগে.? তরী ফোন করে বললো তুই অনেক আগেই চলে এসেছিস। এতক্ষণ কই ছিলি.? (তারিফ)
.
তারিফের কথা শেষ হতেই পাশে থেকে ইমন বলে উঠলো,
.
-- এসব কথা এখন বাদ দে তো। চল আগে শাহিনকে রেডি করাই। (ইমন)
.



-- কিসের জন্য রেডি করাবি.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
-- কিসের জন্য মানে.? তোর বিয়ের জন্য। বিয়ে করার ইচ্ছা নেই নাকি.? (তারিফ)
.
তারিফের কথা শুনে প্রচন্ড হাসি পেলো। তার মানে এরা এখনো জানে না আমার বিয়েটা ভেঙে গেছে। তরী আমাকে বিয়ে করবে না। ইশ, সবাই কত আশা নিয়ে বসে আছে আমার বিয়ে দেখার জন্য। কিন্তু আফসোস শুধুমাত্র রিমির জন্য সবার আশায় পানি ঢেলে গেছে। আমি কিছু সময় চুপ থেকে বললাম,
.
-- আমার বিয়ে হবে না। তরী বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। (আমি)
.
-- আরে সেটা তো আমরা জানি। তরীর বাবা অনেক আগেই ফোন করে আমাদের জানিয়ে দিয়েছে তোর সাথে তরীর বিয়ে হবে না। (তারিফ)
.
-- তাহলে বেকুবের মত আমার বিয়ে নিয়ে এত নাচানাচি করছিস কেন.? (আমি)
.
-- কারণ তোর বিয়ে এখন রিমির সাথে হবে। (ইমন)
.
-- মাথা খারাপ নাকি.? রিমির সাথে আমার বিয়ে হবে সেটা তোদের কে বললো.? (আমি)
.
-- তোর বাবা-ই তো বললো। সেজন্যই তো আমরা আবার নতুন করে সব আয়োজন করছি। (তারিফ)
.
তারিফের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কি শুনলাম এটা.? আমার বিয়ে এখন রিমির সাথে হবে.? অসম্ভব.! বেঁচে থাকতে আমি রিমিকে বিয়ে করবো না। আমি আরো ভেবেছিলাম সবটা জানার পর বাবা রিমিকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। কিন্তু বাবা সেটা না করে উল্টো আমার সাথে রিমির বিয়ে দিতে চাইছে। এই মূহুর্তে আমি ঠিক কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। রিমিকেও কোথাও দেখছি না। ওকে পেলে বিয়ের সাধ মিটিয়ে দিতাম। হারামজাদি আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
আমি মনে মনে এসব বিরবির করছিলাম হটাৎ বন্ধুদের ডাকে ঘোর কাটে। আমার বন্ধু রিফাত তাগাদা দিয়ে বললো,
.
-- কি ভাবছিস এত.? চল, তাড়াতাড়ি তোকে রেডি করাতে হবে। কাজি সাহেব কিছুক্ষনেই মর্ধেই চলে আসবে। (রিফাত)
.
-- রিমিকে আমি বিয়ে করবো না। মরে গেলেও না। রিমি কোথায় আছে এখন.? ডাক ওকে। কিভাবে আমাকে বিয়ে করে সেটাই দেখবো আজ। (আমি)
.
কথাটা বলতে বলতে দেখলাম মা আমার কাছে আসছে। সাথে বাবাও আছে দেখছি। বুঝতে পারছি না রিমির মত এদের দু'জনের মাথাও খারাপ হয়ে গেছে নাকি.? রিমি আমার সাথে এমন একটা খারাপ কাজ করার পরও কোন হিসাবে আমার সাথে ওর বিয়ে দিতে চায়। রিমি যে মা-বাবার উপর কোন জাদু করেছে আল্লাহ মালুম। তা না হলে এমন হওয়ার কথা না। আমি এসব ভাবতে ভাবতে মা-বাবা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো আমাদের মাঝে। তারপর মা ধমক দিয়ে বললো,
.
-- এখনো রেডি হোস নি কেন.? বিয়ে কি মাঝরাতে করবি.? সন্ধ্যা তো হয়ে এলো। যা, জলদি রেডি হ। (মা)
.
-- মা, তোমরা এসব কি শুরু করেছো বলো তো। তুমি জানো রিমি আমার সাথে কি করেছে.? (আমি)
.
-- আমি সব জানি। (বাবা)
.
-- তাহলে রিমির সাথে বিয়ে দিতে চাইছো কেন.? ও আমার জীবনটা শেষ করে দিবে। (আমি)
.
-- রিমি তোকে ভালোবাসে বলেই এসব করেছে। তুই রিমিকে যতটা খারাপ ভাবিস সে কিন্তু ততটা খারাপ না। (মা)
.
-- আমি জানি সেটা। আমি রিমিকে যতটা খারাপ ভাবি রিমি তার চেয়েও হাজারগুণ বেশি খারাপ। আর আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো, কাউকে ভালোবাসলেই কি এমন কাজ করতে হবে.? আমি তো এখানে কোনো ভালোবাসা দেখছি না। রিমির মাঝে শুধু আমাকে পাওয়ার জেদ ও কামনাবাসনা ছিল। ভালোবাসা ছিল না। (আমি)
.
-- তুই সবসময় একটু বেশি বুঝিস। এটাই হচ্ছে তোর সমস্যা। তুই শুধু রিমির খারাপ দিকটাই দেখলি। ভালোবাসাটা আর বুঝলি না। (মা)
.
-- আমার অতকিছু বোঝার দরকার নেই। আমি রিমিকে বিয়ে করবো না, ব্যস। (আমি)
.
-- বিয়ে তোকে করতেই হবে। আজকে এবং এক্ষুণি। (মা)
.
-- আচ্ছা তুমি হটাৎ রিমির বিয়ে নিয়ে এত মাতামাতি করছো কেন.? আমার সাথে যে তরীর বিয়ে ভেঙে গেছে এটা নিয়ে তোমার কোনো ভ্রু-ক্ষেপ নেই। সামান্য কষ্ট ও দেখছি না তোমার মাঝে। (আমি)
.
-- কষ্ট কেন পাবো.? বরং তোর আর তরীর বিয়ে ভাঙাতে আমি খুশি হয়েছি। (মা)
.
-- কেন.? (অবাক হয়ে)
.
-- কারণ অনেক আগে থেকেই আমি রিমিকে তোর বউ করার কথা ভেবে রেখেছিলাম। রিমিকে আমার খুব পছন্দ, কত ভালো মেয়ে, তোর সাথে মানাবেও ভালো। তাছাড়া ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকবে। তাই তোর সাথে রিমির দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তোর বাবা হুট করে তার কলিগের মেয়ের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলে। তোর বাবার মুখের উপর আমি কোনোদিন কথা বলিনি। সে যা বলেছে বা করেছে আমি তা মেনে নিয়েছি। তাই তোর সাথে তরীর বিয়ে ঠিক করাতে আমি কিছু বলিনি। কিন্তু সত্যি বলতে তরীকে আমার কখনোই পছন্দ হয় নি। আমি মানছি তরী খুব ভালো মনের মেয়ে। কিন্তু তারপরও কোথায় যেন অপূর্ণতা রয়েই যায়। তাই আজ যখন তোর সাথে তরীর বিয়েটা ভেঙে গেল তখন আমি খুশি না হয়ে পারলাম না। এখন রিমি তোর বউ হবে। আমার মনের আশা পূরণ হবে। (মা)
.
-- তোমার মনের আশা কোনো দিন-ই পূরণ হবে না। আমি রিমিকে বিয়ে করবো না। দেখি কিভাবে আমার বিয়ে দাও। (আমি)
.
রাগী গলায় কথাটা বলে আমি চলে যেতে লাগলাম। দু'পা বাড়াতেই আমার বন্ধুরা এসে আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি ভ্রু-কুঁচকে বন্ধুদের দিকে তাকালাম। তাদের চোখে-মুখে শয়তানি হাসি। আমি কিছু বলার আগেই বন্ধুরা ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বললো,
.
-- আন্টি, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমরাও দেখবো এই হারামি কিভাবে বিয়ে না করে। আপনি ফোন করে তাড়াতাড়ি কাজি সাহেবকে আসতে বলেন। ততক্ষণে আমরা শাহিনকে বর সাজাচ্ছি। (সবাই একসুরে)
.
-- দেখ, তোরা খামোখা ঝামেলা করিস না। না হলে ভুলে যাবো তোরা আমার বন্ধু। আর ইচ্ছা মতো পিটাবো। (আমি)
.
কথাটা বলে শেষ করতেই বন্ধু মহলের সবচেয়ে শয়তান বন্ধু হৃদয় ধুরুম করে আমার পিঠে কিল বসিয়ে দিলো। তারপর আমাকে চ্যাংদোলা করে রুমে নিয়ে গেলো এবং জোর করে বর সাজাতে লাগলো। আমি কিছু বলার সুযোগ-ই পাচ্ছি না। কিছু বললেই বন্ধুরা ধুরুম ধারাম করে পিঠে কিল মারছে। দীর্ঘ আধঘন্টা আমার উপর অত্যাচার শেষে বর সাজানো কমপ্লিট হলো। তারপর সবাই নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেল। আমি চুপচাপ মুখ ভার করে বসে আছি। এমন সময় আরহি ভাবি ও রিমির কিছু বান্ধবীরা ঘরে এলো। আরহি ভাবি আমার গাল টেনে বললো,
.
-- আমার দেবরজি কে তো বর বেশে খুব সুন্দর লাগছে। (আরহি ভাবি)
.
-- ভাবি, ইয়ার্কি করো না তো। মন ভালো নেই। (আমি)
.
-- আরে সত্যি বলছি। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। আমি ১০০% সিওর আজ বাসর রাতে রিমি তোমাকে দেখে টাস্কি খাবে। আবার নতুন করে তোমার প্রেমে পড়বে। (আরহি ভাবি)
.
ভাবির কথা শুনে মনে মনে খুব হাসলাম। বিয়ে না হতেই বাসর রাত নিয়ে ভাবছে। আগে বিয়েটা তো হোক। তার আগে রিমিকে একবার খালি হাতের কাছে পাই। বিয়ে কত প্রকার ও কি কি সব বুঝিয়ে দিবো। আমি একটু চুপ থেকে আরহি ভাবিকে বললাম,
.
-- রিমিকে সাজানো শেষ হয়েছে.? কোথায় ও.? (আরহি ভাবি)
.
-- রিমিকে সাজানোর জন্য পার্লারে নিয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মর্ধ্যেই চলে আসবে। (রিমির বান্ধবীরা)
.
-- আসলে একবার আমার সাথে দেখা করতে বলো। (আমি)
.
-- বাব্বাহ্.! বউকে দেখার তর সইছে না দেখছি। তা এতই যখন রিমিকে ভালোবাসো তাহলে তরীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে কেন.? বেচারি রিমি কত কষ্ট পেল। অবশ্য তরীর সাথে তোমার বিয়েটা ভাঙাতে খুশি হয়েছি খুব। রিমি-ই তোমার জন্য পারফেক্ট। তুমি একটু ওয়েট করো, রিমি আসলে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি। (আরহি ভাবি)
.
তারপর আরহি ভাবি আবার আমার গাল টেনে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। আমি হুতুম প্যাচার মত গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। মনে মনে ভাবছি এখান থেকে কিভাবে পাঠানো যায়। তবে তার আগে রিমিকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। যেটা সে মরার আগ পর্যন্ত মনে রাখবে।
.
আমি বসে বসে রিমির জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময় খবর এলো রিমি নাকি পালিয়ে গেছে। আমি আশ্চর্যে আশ্চর্যন্বিত হলাম। এটা কিভাবে সম্ভব.?
রিমি আমাকে বিয়ে করার জন্য এতসব কান্ড ঘটালো। আর এখন সে বিয়ে না করেই পালিয়ে গেল.? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। নাকি এটা রিমির নতুন কোনো প্ল্যান.? কি হচ্ছে এসব.? আর রিমি-ই বা কোথায় পালিয়ে গেল.?
.
চলবে...... ??????