-- এখানে একটা ভিডিও ক্লিপ আছে। সেটা দেখো, সব বুঝতে পারবে। (তরী)
.
আমি তরীর কথামতো ফোনটা নিয়ে ভিডিও প্লে করলাম। কিন্তু আমি যে পৃথিবীর সবচাইতে বড় সারপ্রাইজ'টা পাবো সেটা কল্পনাও করিনি। বিষ্ময়ে আমার গা'য়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। ভিডিও'তে রিমি আর আমি অন্তরঙ্গ অবস্থায় রয়েছি। এবং ভিডিও'টা গতকাল রাতের।
গতকাল রাতে যখন রিমি আমার ঘরে এসেছিল তখনকার। আমি চোখ বড় বড় করে পুরো ভিডিও'টা দেখলাম।
.
সত্যি বলতে রিমির সাথে আমার এমন কিছু ঘটবে কল্পনাই করিনি। ভিডিও'তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রিমির চেয়ে আমার আগ্রহ বেশি। অথচ রিমিকে নিয়ে এসব চিন্তা কখনো আমার মাথাতেই আসেনি। তাহলে হুট করে আমি রিমির এত কাছাকাছি গেলাম কিভাবে.? নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল আছে। আমি মনে মনে এসব ভাবছিলাম তখন তরী বললো,
.
-- এখন সবকিছু বুঝতে পেরেছো তো.? (তরী)
.
-- এজন্যই কি তুমি বিয়ে ভেঙেছো.? (আমি)
.
-- হ্যাঁ। (তরী)
.
-- তোমার কি মনে হয় আমি এমন জঘন্য কাজ
করতে পারি.? (আমি)
.
-- না, কখনোই না। রিমি তোমার কফিতে নেশার ঔষধ মিশিয়েছিল। যার কারণে তুমি উত্তেজিত হয়ে এসব করেছো। (তরী)
.
-- তাহলে তো তুমি সবটাই জানো। তবুও কেন এসব করছো.? সব দোষ তো রিমির। (আমি)
.
-- আমি জানি সব দোষ রিমির। কিন্তু রিমি তোমাকে ভালোবাসে তাই এসব করেছে। (তরী)
.
-- হাহাহা.! রিমি আমাকে ভালোবাসে.? (আমি)
.
-- হুমম। (তরী)
.
-- রিমি কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি। আসলে রিমি আমার উপর হিংসা করতো। যে কারণে আমাকে ছোট করার জন্য এসব করেছে। (আমি)
.
-- না, শাহিন। তুমি রিমিকে এখনো বুঝতে পারলে না। বেচারি তোমাকে পাওয়ার জন্য এসব করেছে। (তরী)
.
-- আচ্ছা, তুমি আজ হটাৎ রিমির হয়ে ওকালতি করছো কেন বলো তো.? (আমি)
.
-- কারণ এখন আমি সবটা জানি। আমার প্রথম দিন থেকেই সন্দেহ হয়েছিল রিমি আর তোমার সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়। রিমি তোমাকে অন্যকিছু ভাবে। (তরী)
.
-- রিমি আমাকে নিয়ে যা খুশি ভাবুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আসল কথা হচ্ছে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি প্লিজ রিমির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আমাদের কথা ভাবো। আমাকে বিয়ে করবে কি-না বলো। (আমি)
.
-- সেটা পরে বলছি। আগে আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিবে.? সত্যি বলবে কিন্তু। (তরী)
.
-- বলো। (আমি)
.
-- তুমি সত্যি-ই আমাকে ভালোবাসো তো.? (তরী)
.
-- কেন.? তোমার বিশ্বাস হয়না.? (আমি)
.
-- না, তুমি জাস্ট আমাকে পছন্দ করো। আর সেটাকেই ভালোবাসা ভেবে বসে আছো। (তরী)
.
-- এটা তোমার ভুল ধারণা তরী। আমি তোমাকে সত্যি-ই অনেক ভালোবাসি। (আমি)
.
-- তাই নাকি.? আচ্ছা আমি তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো। তুমি যদি সেসবের উত্তর দিতে পারো তবেই আমি বুঝবো তুমি আমাকে ভালোবাসো। (তরী)
.
-- ঠিক আছে... করো। (আমি)
.
-- আমার প্রিয় রঙ কি.? (তরী)
.
-- ইয়ে... মানে... প্রিয় রঙ..... (আমতা আমতা করে)
.
-- ভুলে গেছো.? কোনো ব্যাপার না। আমার পছন্দের খাবারগুলোর নাম বলো। (তরী)
.
-- তোমার পছন্দের খাবার তো অনেক। এতগুলোর নাম মনে নেই। (আমি)
.
-- সমস্যা নেই, মাত্র ২টা বললেই হবে। (তরী)
.
-- ইয়ে... মানে... মনে নেই। (মাথা চুলকে)
.
-- এটাও পারলে না.? ওকে সমস্যা নেই। তোমাকে আরও সহজ প্রশ্ন করছি। আমার প্রিয় ফুলের নাম কি.? (তরী)
.
-- তুমি অনেকদিন আগে একবার বলেছিলে। কিন্তু এই মূহুর্তে ঠিক মনে করতে পারছি না। (আমি)
.
-- সো স্যাড.! আচ্ছা এসব বাদ দাও। তোমাকে অতকিছু বলতে হবে না। তুমি শুধু আমার সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলো। যেকোনো কিছু। (তরী)
.
-- তুমি দেখতে খুব সুন্দর। (আমি)
.
-- আর কি.? (তরী)
.
-- আর তুমি খুব ভালো মেয়ে, ভদ্র, মার্জিত, শিক্ষিত। আরেকটা কথা হচ্ছে তোমার গলার কন্ঠ খুব মিষ্টি। খুব সুন্দর করে কথা বলো তুমি। খালি শুনতেই ইচ্ছা করে। (আমি)
.
-- ব্যস এটুকুই.? আর কিছু বলার নেই আমার
সম্পর্কে.? (তরী)
.
-- আর কি বলবো.? যা জানি সবই তো বললাম। (আমি)
.
-- আমার বোঝা হয়ে গেছে। তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসোনি। জাস্ট আমার বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে আমার উপর মুগ্ধ হয়েছো। সহজ ভাবে যাকে ক্রাশ বলে। (তরী)
.
-- বাজে কথা রাখো তো। ভালোবাসি না মানে কি.? তুমি এসব আজেবাজে কথা বলে আমার ভালোবাসা যাচাই করবে নাকি.? প্রিয় রঙ কি, প্রিয় খাবার কি, প্রিয় ফুল কি ব্লা ব্লা ব্লা। আরে এসব ছোটোখাটো বিষয়কে কে গুরুত্ব দেয় শুনি.? (রেগে)
.
-- কেউ গুরুত্ব না দিলেও আমি দেই। তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন-ই তোমার সাথে ফোনে কথা বলেছি। যার মর্ধ্যে বেশিরভাগ সময় আমি আমার পছন্দের জিনিসগুলো, কথাগুলো, এমনি প্রতিটি মূহুর্তের কথা তোমার সাথে শেয়ার করেছি। কিন্তু আজ যখন তোমাকে আমার সম্পর্কে কিছু বলতে বললাম তুমি আর দশটা মানুষের মত আমার সৌন্দর্য নিয়ে কথা বললে। বিশেষ কিছু বলতে পারলে না। অথচ তুমি রিমির সম্পর্কে সবটা জানো। রিমির প্রিয় রঙ কি, খাবার কি, সে কি করতে পছন্দ করে A to Z জানো। এমনকি রিমিও তোমার সম্পর্কে সব জানে। যেসব আমি জানি না সেসবও রিমি জানে। অথচ সবার আগে আমার জানার অধিকার রয়েছে। (তরী)
.
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে তরী একটু থামলো। আমি নির্বাক হয়ে তরীর সব কথা শুনলাম। আসলে তরী যেসব বললো তার এক চুল ও মিথ্যা নয়। কেন জানি না আমি রিমির ব্যাপারে আর রিমি আমার ব্যাপারে সব জানে। প্রত্যেকটা সিক্রেট জানে। তারচেয়েও বড় কথা রিমি আমার চোখ দেখেই অনেক কিছু বলে দিতে পারে।
তরী কিছুসময় আমর দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলা শুরু করলো,
.
-- তুমি আবার ভেবো না শুধু এসব কারণেই আমি বিয়েটা ভেঙে দিয়েছি। আসলে তোমার প্রতি রিমির ভালোবাসা তীব্র থেকে তীব্রতর.! আমি তোমাকে না পেলে বড় জোর কষ্ট পাবো। কিন্তু রিমি তোমাকে না পেলে মরেই যাবে। আমি ও তো একটা মেয়ে। তাই মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের কষ্ট বুঝি। (তরী)
.
কথাগুলো বলে তরী আমার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলো। তারপর সেটা পড়তে বললো। আমি কাগজটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তরীর দিকে তাকালাম। বললাম,
.
-- কি এটা.? (আমি)
.
-- এটা রিমি আমাকে দিয়েছে। তুমি পুরোটা পড়, সব জানতে পারবে। (তরী)
.
আমি আর কিছু না বলে কাগজের ভাজ খুলে পড়তে লাগলাম,
.
প্রিয় তরী,
চিঠিতে তোমাকে প্রিয় বললেও আমার জীবনে সবচেয়ে অপ্রিয় মানুষটা তুমি। জানো আমি সবসময় সবার ভালো চাই। সবার জন্য দোয়া করি। কিন্তু তুমি-ই একমাত্র মানুষ যার মৃত্যুর জন্য আমি সবসময় আল্লাহকে বলি। বললে হয়তো বিশ্বাস করবে না, আমি তোমাকে খুন করে জেলে যেতেও চেয়েছিলাম। এর কারণ কি জানো.? তুমি শাহিন কে ভালোবাসো বলে। আচ্ছা দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পড়েছে.? কত সুন্দর-সুন্দর, হ্যান্ডসাম ছেলে আছে পৃথিবীতে। কিন্তু তুমি তাদের ছেড়ে শাহিনের পিছনে পড়লে কেন.? তুমি জানো আমি শাহিনকে কতটা ভালোবাসি.? এতটাই যে ওর জন্য আমি মরতেও পারি আবার কাউকে মারতেও পারি। তাহলে ভাবলে কি করে আমি শাহিনকে তোমার হতে দিবো.? একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, শাহিন শুধুই আমার। আমি অনেকবার শাহিনকে ভালোবাসার কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শাহিন আমার কথা গুরুত্ব দেয়নি। তাছাড়া বললেও হয়তো বিশ্বাস করতো না বা ফিরিয়ে দিতো। আমি শুধু শাহিনের মন জয় করে তাকে নিজের করে পেতে চেয়েছিলাম। ঠিক তখনি তোমার সাথে শাহিনের বিয়ে ঠিক হয়। তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না, যেদিন থেকে তুমি শাহিনের জীবনে এসেছো আমি একটা রাতও ঘুমাতে পারিনি। তোমরা দু'জন যতই ক্লোজ হচ্ছিলে ততই আমার যন্ত্রণা বাড়ছিল। আমি যেভাবেই হোক শাহিনকে পেতে চেয়েছি। আর ওকে পাওয়ার জন্যই আমি এসব করেছি। আমি জানি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার মাধ্যমটা হয়তো খারাপ ছিল। কিন্তু আমার ভালোবাসায় কোনো খাঁদ নেই। তুমি আবার ভেবো না, শুধু মাত্র জেদের বসে আমি এসব করেছি। আসলে আমি তোমার চেয়েও শাহিনকে সুখে রাখবো। আমি এটাও জানি শাহিনও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু বোকাটা এখনো সেটা বুঝে উঠতে পারলো না। সবকিছু হাসির ছলে উড়িয়ে দিয়েছে। আর হ্যাঁ, তুমিও আমার ভালোবাসাকে মজা ভেবে উড়িয়ে দিও না। পরিণাম ভালো হবে না কিন্তু। তাই ভালো হবে তুমি শাহিনকে ভুলে যাও। না হলে সামনে আরো কি কি হবে ভাবতে পারবে না।
.
ইতি তোমার ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নেওয়া,
রিমি আক্তার
.
রিমির চিঠি পড়ে আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার মাথা যেন বনবন করে ঘুরছে।
.
চলবে...... ???????