.
আমি মাঝখানে বালিশ রেখে শুয়ে পরলাম। জানি না কেন, রিমির পাশে শুয়ে খুব শান্তি লাগছে। আমি আড় চোখে রিমির দিকে তাকালাম। রিমি উল্টোদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আমি আর কিছু বললাম না। চোখ বন্ধ করতেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম।
.
সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই নিজেকে রিমির উপর আবিষ্কার করলাম। আমি রিমির বুকের উপর শুয়ে আছি আর রিমি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে.! আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম আমি। আসলে আমার শোয়া ভালো না। ঘুমের ঘোরে সারা বিছানা দৌড়াদৌড়ি করি। তাই হয়তো ঘুমের ঘোরে রিমির এতটা কাছাকাছি চলে এসেছি।
.
আমি তাড়াতাড়ি রিমির উপর থেকে সরতে যাবো তখন-ই রিমির ঘুম ভেঙে গেল। রিমি আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো।
রিমির পরণে পাতা একটা সুতি শাড়ি ছিল। ঘুমানোর ফলে রিমির শাড়ি ঠিক জায়গায় নেই। শরীরের অনেক অংশ দেখা যাচ্ছে। রিমি নিজেকে সামলে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে তার বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। তারপর শাড়ি ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
.
-- আমি দুঃখিত, রিমি। আসলে ঘুমের ঘোরে তোর এত কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। আমি ইচ্ছে করে এমনটা করি নি। (আমি)
.
-- সমস্যা নেই, আমি কিছু মনে করি নি। এই যুগে এসব কমন বিষয়। (রিমি)
.
-- তবুও তুই যদি.... ???? (আমি)
.
-- আরে, বললাম তো সমস্যা নেই। এসব বাদ দে। (রিমি)
.
-- যাক, বাঁচলাম। আচ্ছা, আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবি.? অনেকদিন ধরে তোর হাতের চা খাই না। (আমি)
.
-- তুই ফ্রেশ হ, আমি নিয়ে আসছি। (রিমি)
.
তারপর রিমি চলে যেতে লাগলো। দরজার কাছে গিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে ধন্যবাদ জানালো। আমি ভ্রু-কুঁচকে বললাম,
.
-- হটাৎ আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছিস কেন.? (আমি)
.
-- আমাকে হেল্প করার জন্য। (রিমি)
.
-- আমি আবার তোকে কি হেল্প করলাম.? (মাথা চুলকে)
.
-- সেটা খুব শিঘ্রই জানতে পারবি। (রিমি)
.
তারপর রিমি রহস্যময়ী এক ঝলক হাসি দিয়ে চলে গেল। আমি হাবলুর মত বসে রইলাম। রিমির কথার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। যাইহোক, এসব ভাবাভাবি বাদ দিয়ে ফ্রেশ হলাম। একটুপর রিমি আমার জন্য চা নিয়ে এলো। আমি চা খেলাম।
.
.
.
আমার বিয়ে উপলক্ষ্যে সব আত্মীয় স্বজন চলে এসেছে। বাড়ি ভর্তি লোক। আমার সব বন্ধুরাও চলে এসেছে। তারা সবাই মিলে হাতে হাতে বিয়ে বাড়ির সব কাজ করছে। ডেকোরেশনের লোকজন ইতিমর্ধ্যে পুরো বাড়ি সাজিয়ে ফেলেছে। চারিদিক ঝলঝল করছে।
.
এসব দেখে আমার মন আরো খারাপ হয়ে গেল। হটাৎ করে আমার মনের কি অসুখ হয়েছে বুঝতে পারছি না। চারিদিকে সবার এত আনন্দ, হইহুল্লোড়, হাসিখুশি মুখ দেখেও আমি শান্তি পাচ্ছি না। সবসময় মনে হয় হচ্ছে, কি যেন একটা নেই, কি যেন একটা নেই।
.
সকাল থেকে ঘরের মর্ধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছি। বিয়ে বাড়িতে সবাই আনন্দ করছে। শুধু আমার মনেই কোন আনন্দ নেই।
কিছুক্ষণ পর আমার সব বন্ধুরা আমার ঘরে এলো। এসেই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। আশিক আমার পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে বলল,
.
-- কিরে হারামি, একা একা ঘরে কি করিস.? (আশিক)
.
-- কিছু না। এমনি বসে আছি। (আমি)
.
-- সবাই আনন্দ করছে আর তুই বসে আছিস.? নিচে চল, ব্যাটা.! (রবি)
.
-- আমার ভালো লাগছে না। আমাকে একটু একা থাকতে দে, প্লিজ.! (আমি)
.
-- কেন, কি হয়েছে তোর.? তরী কি অন্য ছেলের সাথে পালিয়েছে.? (অনিক)
.
-- ধুরর, বাজে কথা রাখ তো। তোরা যা। (আমি)
.
-- তুই ও আমাদের সাথে চল। সবাই মিলে মস্তি করবো.! (আশিক)
.
তারপর বন্ধুরা আমাকে জোর করে বাইরে নিয়ে গেল। আমি মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে সবার সাথে কথা বলতে লাগলাম।
.
এদিকে,
শাহিনের মামাতো বোন রিপা হনহন করে রিমির ঘরে ঢুকলো। রিমি তখন টেবিলে বসে চিরকুটে কিছু একটা লিখছিল আর কান্না করছিল। তার দু'চোখের পানিতে চিরকুটের অনেকটা অংশ ভিজে গেছে। রিপাকে দেখে সে চিরকুটটা ভাজ করে লুকিয়ে ফেলে। তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। রিপা, রিমির সামনে এসে তার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকায়। চোখ দু'টো সরু করে বলে,
.
-- কান্না করছিলে, তাই না.? (রিপা)
.
-- না তো। আমি কাঁদবো কেন.? (রিমি)
.
-- এত বড় হলে অথচ এখনো মিথ্যাটা ভালভাবে বলতে পারলে না। (রিপা)
.
-- বাজে কথা রেখে কি জন্য এসেছিস সেটা বল। (রিমি)
.
-- শুনলাম তুমি নাকি শোভন নামের কোন এক
ছেলেকে বিয়ে করবে.? (রিপা)
.
-- হুমম, ঠিকই শুনেছিস। (রিমি)
.
-- এসবি কি আপু.? তুমি তো শাহিন ভাইয়াকে ভালবাসো তাহলে শোভনকে বিয়ে করবে কেন.? (রিপা)
.
-- What.?? কি বললি তুই.? আমি শাহিনকে ভালবাসি.! (অবাক হয়ে)
.
-- অবশ্যই বাসো.! (রিপা)
.
-- হা-হা, পাগলী বলে কি.! আমি শাহিনকে ভালবাসতে যাবো কেন.? সে আমার ভাই.! (রিমি)
.
-- দেখো, আপু একদম মিথ্যা কথা বলবে না। আমি মিথ্যা বলা পছন্দ করি না। আমাকে রাগাবে না বলে দিলাম। (উত্তেজিত হয়ে)
.
-- আরে, এত উত্তেজিত হচ্ছিস কেন.?
আয়, বস এখানে। (রিমি)
.
রিপা চেয়ার টেনে রিমির পাশে বসলো। রিমি একটু দম নিয়ে শান্ত গলায় বলল,
.
-- আচ্ছা, তোর কেন মনে হচ্ছে আমি শাহিনকে
ভালবাসি.? (রিমি)
.
-- কারণ আমি একটা মেয়ে। তাই তোমার মনের কথা
একটু হলেও বুঝি। তাছাড়া আমাদের সবার থেকে শাহিন ভাইয়ার গুরুত্ব তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি.!
তোমার মনে আছে, আমি শাহিন ভাইয়াকে পছন্দ করতাম। কয়েকমাস আগে তোমার কাছে হেল্প চেয়েছিলাম যে, তুমি আমার হয়ে শাহিন ভাইয়াকে ভালবাসার কথা বলো। কিন্তু তুমি এই সামান্য বিষয়টাকে নিয়ে আমার সাথে রাগারাগি করেছিলে। আমাকে মারতে পর্যন্ত চেয়েছিলে।
আমি সেদিন-ই বুঝেছিলাম তুমি শাহিন ভাইয়াকে ভালবাসো। তাই আমি আর কিছু বলি নি। তোমার জন্য নিজের ভালবাসাকে সেক্রিফাইজ করেছি। (রিপা)
.
-- মিথ্যা কথা। আমি শাহিনকে ভালবাসি না। (রেগে)
.
-- তাহলে সেদিন যখন গাড়িতে বসে তরীদের বাড়িতে যাচ্ছিলাম তখন শাহিন ভাইয়ার গালে তুমি কিস
করেছিলে কেন.? (রিপা)
.
-- ওটাতো মজা করে। তাছাড়া তুই ও তো কিস
করেছিলি। (রিমি)
.
-- আমি জাস্ট তোমাকে রাগানোর জন্য শাহিন ভাইয়াকে কিস করেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার উপর রাগ করে তুমি শাহিন ভাইয়াকে ভালবাসার কথা বলে দিবে। কিন্তু সেসব না করে ধৈ-ধৈ করে পাত্রী দেখতে চলে গেলে। শাহিন ভাইয়ার ঐ ডায়নিটার সাথে বিয়েও ঠিক হয়ে গেল। আর তুমি এখন কিছু না করে বসে বসে কান্না করছো। (রিপা)
.
রিপার কথা শুনে রিমি কিছু বলে না। সে চুপ করে রিপার কথাগুলো শুনে। রিপা একটু দম নিয়ে আবার বলে,
.
-- আপু, আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে। চলো শাহিন ভাইয়াকে কিডন্যাপ করি। তারপর জোর করে তোমার সাথে বিয়ে দিবো। আর একবার বিয়ে হয়ে গেলে শাহিন ভাইয়া কিছু করতে পারবে না। তুমি শুধৃ হ্যাঁ বলো, বাকিটা আমি দেখে নিবো। সব আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছি। (রিপা)
.
-- এই তখন থেকে কি সব আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছিস। আমার হাতের মাইর খাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি.? বলছি তো, আমি শাহিনকে ভালবাসি না। (রেগে)
.
-- সত্যি-ই কি তুমি শাহিন ভাইয়াকে ভালবাসো না.? (রিপা)
.
-- না। আমি শোভনকে ভালবাসি.! (রিমি)
.
-- এই কথাটা কিছুদিন আগে বললে কি হতো.? তাহলে এতদিনে আমি যেভাবেই হোক শাহিন ভাইয়াকে বিয়ে করে ফেলতাম। পোড়া কপাল.! এখন শাহিন ভাইয়া তোমার ও হলো না, আমার ও হলো না। মাঝখান থেকে তরী ডাইনিটা শাহিন ভাইয়াকে পটিয়ে নিলো।
.
কথাগুলো বলে রিপা রাগে গজগজ করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রিমি, রিপার এসব কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলে। মনে মনে রিপার উদ্দেশ্যে বলে, 'ইসস, শখ কত আমার হবু বরকে বিয়ে করতে চায়.!'
তারপর রিমি চিরকুট'টা বের করে লিখতে থাকে। রিমির চোখে আবার পানি চলে আসে। সে ফুঁফিয়ে-ফুঁফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চিরকুট লিখতে থাকে.!
.
.
.
বিকালে শুয়ে থেকে রিমির কথা ভাবছি। মেয়েটা আমাকে কি জাদু করেছে আল্লাহ জানে। কাল আমার বিয়ে.! যেখানে আমার এখন তরীর কথা ভাবা উচিত সেখানে আমি রিমির কথা ভাবছি। আজব ব্যাপার.!
একটুপর গা'য়ে হলুদের পর্ব শুরু হবে। পাশের বাড়ির ভাবিরা পাটাতে হলুদ বাটছে আর গীত গাইছে।
.
হটাৎ আমার ফোনটা বেঁজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি তরীর ফোন। ইচ্ছা না থাকা সত্তেও ফোন রিসিভ করলাম। ফোনের ওপাশ থেকে তরী বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো,
.
-- কোথায় আছো এখন.? (তরী)
.
-- বাড়িতে। কেন.? (আমি)
.
-- এক্ষুণি ৫ মিনিটের মর্ধ্যে আমার সাথে
দেখা করো। (তরী)
.
-- কেন.? কি হয়েছে.? (আমি)
.
-- কথা আছে। (তরী)
.
-- আরে, একটুপর গা'য়ে হলুদ, এখন যেতে
পারবো না। কি বলবে ফোনে বলো। (আমি)
.
-- তুমি আসবে না আমি বিয়ে ভেঙে
দিবো, কোনটা.? (প্রচন্ড রেগে)
.
-- ঠিক আছে, আমি আসছি। (আমি)
.
তারপর আমি ফোন রেখে কোনমত রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। গেটের কাছে এসে দেখি, রিমি আর কিছু ছোট ছোট বাচ্চারা নাচানাচি করছে। আমাকে দেখে রিমি মুখ বাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিলো। আমি সেই হাসির মানে বুঝলাম না।
.
যাইহোক, আমি তাড়াতাড়ি তরীর কাছে পৌছালাম। তরী রাস্তার পাশে একটা গলির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তরীর সামনে দাঁড়াতেই সে ঠাস করে একটা চড় আমার গালে বসিয়ে দিলো.!
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। গালে হাত দিয়ে তরীর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম। রাস্তা দিয়ে চলাচল করা লোকজন আমার দিকে ট্যারা চোখে তাকাচ্ছে। আমি তরীকে কিছু বলার আগেই সে চিৎকার করে বলে উঠলো,
.
-- কুত্তা, বাড়িতেই যখন তোর বিয়ে করার মত পাত্রী ছিল তাহলে আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিলি কেন.?
কেন আমাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখালি.? বল কেন.? (তরী)
.
-- মানে.? কি বলছো এসব.? (আমি)
.
-- ভালই তো নাটক করতে পারিস। দেখতো, এসব চিনতে পারিস কি-না.? (তরী)
.
তরী আমার দিকে তার ফোনটা এগিয়ে দিলো। আমি ফোনটা নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম.!
.
চলবে..... ?????