তরী আমার দিকে তার ফোনটা এগিয়ে দিলো। আমি ফোনটা নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম.!
.
ফোনের স্ক্রিনে আমার আর রিমির কয়েকটা ফটো ভাসছে। যেখানে আমি আর রিমি অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছি।
ফটোগুলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আমার শরীরে তেমন কোন পোষাক নেই। শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছি, বাদ বাকি শরীর খালি। আর রিমি শুধু একটা ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে আছে। শাড়ির কোন হদিস নেই।
.
রিমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ফটোগুলো তুলেছে। ফটোতে রিমি আমার এতটাই কাছাকাছি এসেছে যে কি বলবো.! বাইরের কেউ দেখলে খারাপ কিছু ভেবে বসবে। রিমি আমার শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। কয়েকটা ফটো আমার ঠোঁটে কিস করার সময় তুলেছে আর বাকিগুলো আমাকে বিভিন্ন ভাঙ্গিতে জড়িয়ে ধরে তুলেছে।
.
তবে একটা জিনিস পরিষ্কার, রিমি ফটোগুলো গতকাল রাতে তুলেছে যখন রিমি আমার সাথে থাকতে এসেছিল। কারণ প্রত্যেকটা ফটোতেই আমার চোখ বন্ধ। আমি যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন-ই রিমি এসব কান্ড ঘটিয়েছে।
আমি ফটোগুলো ভালভাবে দেখার পর আমতা আমতা করে তরীকে বললাম,
.
-- এসব সম্পূ্র্ণ মিথ্যা। আমাকে বিশ্বাস
করো, তরী। (আমি)
.
-- ঠাস.! (তরী)
.
কথাটা বলার সাথে সাথে তরী আবার আমাকে চড় মারলো। তবে এবার চড়টা আগের'টার চেয়ে আস্তে মেরেছে। তবুও ভালই ব্যথা পেয়েছি।
এদিকে,
তরী আমাকে মারাতে রাস্তার কয়েকজন লোক থমকে দাঁড়ায়। তারা ভেবেছে, আমি তরীকে বিরক্ত করছি। তাই লোকগুলোও আমাকে মারতে আসে। কিন্তু তরী তাদের বাঁধা দেয় এবং যেতে বলে। লোকগুলো চলে যায়।
তরী আমার মুখ বরাবর এসে দাঁড়ায়। চোখে-মুখে কঠিন রাগ। আমি কিছু বলার আগেই তরী ঝনঝনে গলায় বলে উঠলো,
.
-- চোখের দেখাকে আমি কিভাবে অবিশ্বাস করবো.? ফটোগুলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, তুমি আর রিমি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছো, কিস করছো.! কারও শরীরে কাপড় ও নেই। এরপরও আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো.? (তরী)
.
-- সবসময় চোখের দেখা সত্যি হয় না, তরী। মাঝে-মাঝে চোখ ও মানুষকে ধোকা দেয়। কি হয়েছিল আমি তোমাকে বলছি। গতকাল রাতে রিমি আমার কাছে এসে বলে, সে আমার ঘরে ঘুমাবে। তার একা একা ঘুমাতে ভয় করছে। কারণ বাড়িতে আমি আর রিমি ছাড়া কেউ ছিল না। আমি প্রথমে না-না করলেও রিমির জোরাজুরিতে তাকে ঘরে থাকতে দেই। রিমি বিছানায় ঘুমায় আর আমি সোফাতে। কিন্তু আমার সোফায় ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছিল। রিমি তা দেখে আমাকে বিছানায় ঘুমাতে বলে।
বলে আমরা ভাই-বোন, একসাথে ঘুমালে কিছু হবে না। আমিও সরল মনে রিমির সাথে বিছানায় ঘুমাই। তারপর আর কিছু মনে নেই। আর এখন তুমি আমাকে এসব ফটো দেখাচ্ছো যার কিছুই আমি জানি না। (আমি)
.
আমার কথা শুনে তরী আমাকে মারার জন্য আবার হাত উঠালো। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ভেবেছিলাম তরী আমাকে চড় মারবে কিন্তু মারলো না। হাত নামিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। আমি একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তরী একটু দম নিয়ে কড়া গলায় বলল,
.
-- তুমি আবার মিথ্যা বলছো তাই না.? সবকিছু তোমার বানানো গল্প। (তরী)
.
-- আমি সত্যি বলছি। তুমি আমাকে বিশ্বাস
করো না.? (আমি)
.
-- তাহলে রিমি আমাকে ওসব বলল কেন.? (তরী)
.
-- কি বলেছে রিমি.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
-- তুমি নাকি রিমিকে ছোটবেলা থেকেই ভালবাসো। তোমাদের মর্ধ্যে নাকি অনেকবার ফিজিক্যাল রিলেশনও হয়েছে। আর তুমি শুধু আমাকে ভোগ করার জন্য বিয়ে করবে। তারপর বিয়ের কিছুদিন পর আমাকে ডিভোর্স দিয়ে রিমিকে বিয়ে করবে। (উত্তেজিত হয়ে)
.
তরীর কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। রিমি আমার সম্পর্কে এসব বলেছে.! পেত্নীটাকে আমি ছাড়বো না। তার আগে তরীকে সামলাতে হবে। অনেক রেগে আছে সে। উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারে। আমি তাগাদা দিয়ে বললাম,
.
-- তওবা, তওবা.! বিশ্বাস করো তরী, রিমি মিথ্যা বলছে। ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করা তো দূরের কথা, আমি এসব কোনদিন কল্পনাও করি নি। সবকিছু রিমির একটা চাল। আরে রিমি আমাদের বিয়েটা ভাঙতে চাচ্ছে। এই সহজ জিনিসটা তুমি কেন বুঝছো না.?
তাছাড়া ফটোগুলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় রিমি ফটোগুলো তুলেছে। তারপরেও কোন হিসেবে আমাকে সন্দেহ করছো, হ্যাঁ.? (আমি)
.
আমার কথা শুনে তরী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। সে চোখ দু'টো ছোট করে এদিক-সেদিক তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করছে না। রিমির বলা কথাগুলোকে সত্যি ভাবছে। ভাবাটাই স্বাভাবিক। আসলে রিমি এত সিরিয়াস ভাবে মিথ্যা বলে যে, অন্যকেউ সেটা খুব সহজেই সত্যি ভেবে বসে।
.
আমি তরীকে কিছু বলতে যাবো হটাৎ সে আমার কাছে এগিয়ে এলো। খপ করে আমার শার্টের কলার চেপে ধরলো। মুখটা আমার কাছে এনে চোখ গরম করে বলল,
.
-- আমি ওসব কিছুই শুনতে চাই না, কিছুই বুঝি না। তুমি এক্ষুণি বাড়ি যাবে। বাড়ি গিয়ে রিমিকে ফোন দিয়ে বলতে বলবে, সে যা বলেছে সব মিথ্যা, তোমার কোন দোষ নেই। তবেই আমি কালকে বিয়ের পিড়িতে বসবো। নয়তো আমাকে বিয়ে করার আশা ছেড়ে দাও। (তরী)
.
কথাগুলো বলে তরী আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলো। দু'কদম এগিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকালো। কপাল কুঁচকে বলল,
.
-- তোমার হাতে শুধু আজকের রাতটাই আছে। আর হ্যা, আমি তোমার চেয়ে রিমিকে বেশি বিশ্বাস করি। (তরী)
.
তারপর তরী চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলাম।
রিমির উপর প্রচন্ড রাগ উঠলো। আজ ওর রেহায় নেই। কি ভেবেছে রিমি, আমার সাথে যা ইচ্ছা করবে আর আমি সব মেনে নিবো.? কিছুতেই না। শোভনের সাথে থেকে থেকে রিমিও খারাপ হয়ে গেছে। আজ আমার হি হবে হোক, রিমিকে শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো।
.
আমি রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি ফিরলাম। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে ভাবিদের সাথে দেখা হলো। আরহি ভাবি আমাকে রাগ দেখিয়ে বললেন,
.
-- কোথায় ছিলে এতক্ষণ.? বিয়ে করার ইচ্ছা নেই নাকি.? হলুদ মাখাতে হবে না.? (আরহি ভাবি)
.
-- সেসব পরে দেখা যাবে। আগে বলেন রিমি
কোথায়.? (আমি)
.
-- হটাৎ রিমির দরকার পড়লো কেন.? আমরা কি কম আছি নাকি.? (দুষ্টুমি করে)
.
-- ভাবি মজা কইরেন না তো। রিমি কোথায় বলেন। (আমি)
.
-- দেখো হয়তো আশেপাশে কোথাও আছে। (আরহি ভাবি)
.
আমি রিমিকে এদিক-সেদিক খুঁজতে লাগলাম। বিয়ে বাড়িতে মানুষজন গিজগিজ করছে। ঠেলাঠেলি করে রিমিকে খুঁজছি। কিছুক্ষণ পর রিমির দেখা পেলাম। রিমি ওর বান্ধবীদের সাথে নাচের প্র্যাকটিস করছে। রাতে নাচ-গানের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা আছে।
আমি দ্রুত পা চালিয়ে রিমির কাছে গেলাম। সবার সামনে রাগান্বিত না হয়ে শান্ত গলায় বললাম,
.
-- একটু ওদিকে চল, কথা আছে। (আমি)
.
-- আমি এখন ব্যস্ত আছি। পরে বলিস। (রিমি)
.
আমি আর কিছু না বলে রিমির হাত ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলাম। আত্মীয়-স্বজন'সহ বিয়ে বাড়ির সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ না দিয়ে টানতে টানতে রিমিকে ঘরে নিয়ে এলাম। তারপর.... ????
.
চলবে..... ?????