.
আমি ফ্রেশ হয়ে ছাদে গেলাম। কিন্তু ছাদে গিয়ে আমি আরও অবাক হলাম। দেখি, শোভন রিমিকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি চোখ বড় বড় করে তাদের দিকে তাকালাম। রিমি আর শোভনের আমাকে খেয়াল করে নি। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
.
আমি তাদের ধ্যান ভাঙার জন্য শব্দ করে কাঁশি দিলাম। রিমি আর শোভন কাঁশির শব্দ শুনে আমার দিকে তাকালো। আমাকে দেখে রিমি বিরক্ত কন্ঠে বলল,
.
-- তুই এখানে কি করছিস.? (রিমি)
.
-- এমনি আসলাম। (আমি)
.
-- এখান থেকে যা। দেখছিস না, আমি আর শোভন সময় কাটাচ্ছি। (রিমি)
.
-- শোভনের সাথে আমার কিছু কথা ছিল। (আমি)
.
-- কি কথা.? (রিমি)
.
-- সেটা তোর না জানলেও চলবে। আর শোভন একটু এদিকে আসবে.? তোমার সাথে জরুরি কথা আছে। (আমি)
.
শোভন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি শোভনকে টেনে নিয়ে ছাদের পশ্চিম পাশে নিয়ে গেলাম যাতে রিমি আমাদের কথা শুনতে না পায়। রিমি আমাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলো। সে আমাদের কথা শুনতে পাবে না। আমি শোভনকে বললাম,
.
-- তুমি সত্যি-ই রিমিকে ভালবাসো তো.? (আমি)
.
-- হ্যাঁ, বাসি। কেন রিমিকে ভালবাসাতে তোমার কোন সমস্যা আছে নাকি.? (শোভন)
.
-- আমার আবার কি সমস্যা থাকবে। তুমি শুধু ওকে কষ্ট দিও না। রিমি তোমাকে অনেক ভালবাসে.! (আমি)
.
আমার কথা শুনে শোভন দাঁত বের হাসতে লাগলো। কুৎসিত এক হাসি.! আমি আমার লাইফে এমন বিশ্রী হাসি দেখি নি। কিন্তু শোভন কোন কারণ ছাড়া হাসছে কেন সেটা আমার বোধগম্য হলো না। আমি শোভনকে কিছু বলার আগেই সে আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
.
-- আমি রিমিকে একটুও ভালবাসি না। ওকে শুধু ভোগ করার জন্য এসেছি। আসলে, আমি যতগুলো রিলেশন করেছি সবার সাথেই বিছানায় শুয়েছি। শুধু রিমি বাদ আছে। তাই যেভাবেই হোক রিমিকে ভোগ করবো। তাছাড়া রিমির যে ফিগার.! উফ, পুরাই মাখন.! ওকে না পেলে আমার দেহের জ্বালা মিটবে না। তাই রিমির সাথে বিয়ের নাটক করে ওকে লুটেপুটে খেয়ে ছেড়ে দিব। (শোভন)
.
শোভনের এসব কুরুচিপূর্ণ কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমি শুরু থেকেই ধারণা করেছিলাম, শোভন ছেলেটা খারাপ কিন্তু ও যে এতটা খারাপ আর জঘন্য হবে সেটা জানা ছিল না।
.
এমনিতেই শোভনের উপর আমি রেগে ছিলাম কিন্তু এখন ওর কথাগুলো শুনে আমার রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেল। রাগে আমার শরীরের শক্ত টগবগ করে ফুটতে লাগলো। আমি সাতপাঁচ না ভেবে সজোরে শোভনের গালে একটা চড় মারলাম। চড় খেয়ে শোভন দু'পা পিছিয়ে গেল।
.
আমি শুধু চড় মেরেই ক্ষান্ত হলাম না। শোভনের শার্টের কলার চেপে ধরে সমস্ত শক্তি দিয়ে তার নাক বরাবর ঘুষি মারলাম। জোরে ঘুষি মারার ফলে শোভনের নাক দিয়ে দরদর করে রক্ত পড়তে লাগলো। শোভন নাক চেপে ধরে রক্ত থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
.
এদিকে,
শোভনকে মারতে দেখে রিমি দৌড়ে আমার কাছে এলো। তারপর শোভনকে আমার থেকে ছাড়ালো। আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বলল,
.
-- পাগল হয়ে গেছিস নাকি.? শোভনকে মারছিস কেন.? (রিমি)
.
-- হ্যাঁ, আমি পাগল হয়ে গেছি। এই কুত্তার বাচ্চাকে আমি আজ মেরে কুচিকুচি করে কাটবো। (প্রচন্ড রেগে)
.
-- ঠাস.! (রিমি)
.
কথাটা বলা শেষ হতেই রিমি আমার গালে চড় মারলো। রাগে গিজগিজ করতে করতে বলল,
.
-- তোর সাহস হলো কি করে শোভনের গা'য়ে তোলার.? যা মন চাইবে তাই করবি নাকি.? (রিমি)
.
-- তুই বুঝতে পারছিস না, শোভন তোকে ভালবাসে না। তোর সাথে নাটক করছে। তাই ওকে মেরেছি। তাছাড়া শোভন তোর নামে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলছিল। (আমি)
.
-- মিথ্যা কথা, রিমি। আমি তোমাকে নিয়ে কিছুই বলি নি। বরং শাহিন-ই আমাকে হুমকি দিয়েছে, আমি যেন তোমাকে বিয়ে না করি। আমি ওর কথা না মানাতে আমাকে মেরেছে। (শোভন)
.
-- বান্দির বাচ্চা, দোষ করে এখন সাধু সাঁজা হচ্ছে.! আমি তোকে মেরেই ফেলবো। (আমি)
.
আমি আবার শোভনের শার্টের কলার ধরে তাকে টেনে আমার কাছে নিয়ে এলাম। শোভনকে মারতে যাব তার আগেই রিমি আমার হাত ধরে ফেললো। আমার দিকে কিছুসময় অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
.
-- আবার শোভনের গা'য়ে হাত তুললে পরিণাম ভালো হবে কিন্তু.! জানোয়ারের মত ব্যবহার করছিস কেন.? (রিমি)
.
-- আমি জানোয়ার.? (আমি)
.
-- তা নয় তো কি... জানোয়ার বলেই এমন ব্যবহার করছিস। আর আমি কি তোকে আমাদের মাঝে আসতে বলেছি.? তাহলে কেন আমাদের বিরক্ত করছিস.? শোভন আমার সাথে যা-ই করুক সেটা আমি বুঝে নিব। তুই বলার কে রে.? (রিমি)
.
-- বাহ্ রে বাহ্.! যার জন্য করি চুরি সে-ই বলে চোর। আমি তোর ভালোর জন্যই এতকিছু করছি আর তুই আমাকেই দোষ দিচ্ছিস.! (আমি)
.
-- আমার ভালো নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমি আমার নিজের ভালো বুঝি। (রিমি)
.
-- ঠিক আছে, আমার আর কিছু বলার নেই। কিন্তু যেদিন শোভন তোকে ব্যবহার করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলবে সেদিন বুঝবি। দোয়া করি সেই দিনটা যেন না আসে। (আমি)
.
কথাটা বলে আমি চলে আসতে লাগলাম। পিছন থেকে রিমি বলল,
.
-- আমাকে জ্ঞান না দিয়ে তরীকে সামলা। না হলে তোকেও রাস্তায় ছুড়ে ফেলবে। (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে আমি পিছন ফিরে তাকালাম। তারপর চোখ-মুখ খিচে শক্ত গলায় বললাম,
.
-- এখানে আবার তরীকে টানছিস কেন.? তরী তোর চেয়ে হাজার গুনে ভালো আছে। (আমি)
.
-- কেমন ভালো তা জানা আছে। নষ্টা মেয়ে একটা.! (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে প্রচন্ড রাগ উঠলো। আমি রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
.
-- মুখ সামলে কথা বল, রিমি। তরী সম্পর্কে একটা বাজে কথাও বলবি না। (আমি)
.
-- তুই ও শোভনকে নিয়ে বাজে কথা বলবি না। (রিমি)
.
-- আমি যা বলেছি সত্যি বলেছি। শোভন আসলেই খুব খারাপ। (আমি)
.
-- আর তরী মনে হয় ধোয়া তুলসি পাতা তাই না.? (মুখ বাকিয়ে)
.
-- ধুরর, তোর সাথে কথা বলায় পাপ। তোর একটা শিক্ষা পাওয়া দরকার আর সেই শিক্ষাটা শোভন-ই তোকে দিবে। সেদিন বুঝবি কত ধানে কত চাল। (আমি)
.
তারপর আমি ছাদ থেকে চলে আসলাম। পিছন থেকে রিমি চিৎকার করে বলতে লাগলো,
.
-- কুত্তা, আর কখনো আমাদের মাঝে আসবি না। (রিমি)
.
আমি রাগে ফুসতে ফুসতে রুমে চলে এলাম। রিমির উপর রাগ উপচে পড়ছে। আমি রিমির ভালোর জন্য এতকিছু করলাম অথচ সে আমাকেই দোষী বানালো। এজন্যই মানুষ বলে, কারো ভালো করতে নেই।
আমি এসব ভেবে বিছানার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। দেখি.... ????
.
চলবে.... ????