.
বাড়িতে এসে আমি হন্তদন্ত হয়ে রিমির ঘরে গেলাম। রিমি বিছানার উপর বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমি রিমির সামনে গিয়ে বলতে লাগলাম,
.
-- জানিস, শোভন কি করেছে.? ও একটা মেয়ের...... ????? (আমি)
.
-- ঠাসস.! (রিমি)
.
আমার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই রিমি ঠাস করে আমার গালে চড় মারলো। আচমকা চড় মারাতে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। গালে হাত দিয়ে রিমির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।
.
রিমি রাগে সাপের মত ফোঁসফোঁস করছে। নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় তার সরু নাকের পাটি বারবার ফুলে উঠছে। রাগের কারণে চোখ-মুখ ও লাল হয়ে গেছে। আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
.
-- আমাকে মারলি কেন.? (আমি)
.
-- তোর কপাল ভাল তাই শুধু চড় মেরেছি। আমার তো ইচ্ছা করছে তোকে খুন করি.! তুই শোভনকে কি বলেছিস, হ্যা.? (রিমি)
.
-- কি এমন বলেছি যার কারণে আমাকে চড় মারতে হবে.? (আমি)
.
-- তুই নাকি শোভনকে বলেছিস, আমার আর শোভনের বিয়ে হতে দিবি না। (রিমি)
.
-- হ্যা, বলেছি কিন্তু সেটারও কারণ আছে। (আমি)
.
-- রাখ তোর কারণ। তুই কে আমাদের বিয়ে আটকানোর.? (প্রচন্ড রেগে)
.
-- আরে, এত রেগে যাচ্ছিস কেন.? শান্ত হ। আগে আমার কথা শোন। জানিস, শোভন আজ কি করেছে.? (আমি)
.
-- কি করেছে.? (শান্ত গলায়)
.
-- শোভন রাস্তার মাঝখানে একটা মেয়ের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আমি 'মেয়েটা কে' জিজ্ঞেস করাতে শোভন তেঁতে উঠে বলে, মেয়েটার সাথে নাকি সে প্রেম করছে। আবার আমাকেই গরম দেখায়। (আমি)
.
-- ঐ মেয়েটা শোভনের বন্ধু ছিল। তাই হাত ধরাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। উল্টো তুই নাকি শোভনকে থ্রেট দিয়েছিস.! (দাঁতে দাঁত চেপে)
.
-- হ্যা দিয়েছি কারণ শোভন ছেলেটা খুব একটা সুবিধার না। ও তোকে ঠকাচ্ছে। দেখ, তুই শোভনকে বিয়ে করিস না। প্লিজ.! (আমি)
.
-- তুই কে আমাকে বিয়ে করতে না বলার। আমি তোর খাই না পড়ি.? শুনে রাখ, শোভন তোর চেয়ে হাজারগুনে ভাল। আর আমি তাকে ভালবাসি। তাই প্লিজ, আমাদের মাঝে আসিস না। (রিমি)
.
-- তুই আমাকে ভুল বুঝছিস, রিমি। আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি। (আমি)
.
-- আমার ভাল আমি বুঝি। তোর আমাকে নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। (রিমি)
.
-- চিন্তা কি আর সাধে করি। শোভনের সাথে বিয়ে হলে তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আর আমি সেটা চাই না। প্লিজ, বোঝার চেষ্টা কর। যে ছেলেটা একবার তোকে ছেড়ে চলে গেছে সে আবার তোকে ছেড়ে যাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে.? তাছাড়া শোভনকে দেখলেই মনে হয় শালা একটা গুন্ডা.! (আমি)
.
-- তুই কিন্তু আবার শোভনের নামে বাজে কথা বলছিস.! তুই কি চাস আমি আবার তোর গা'য়ে হাত তুলি.? দেখ, তুই আবার বড় তাই বারবার তোর গা'য়ে হাত তুললে বিষয়টা সত্যি-ই খুব খারাপ দেখাবে। তুই আমার সামনে থেকে চলে যা। (প্রচন্ড রেগে)
.
-- তার মানে তুই আমার কথা শুনবি না.? (আমি)
.
-- না। প্লিজ, আর বিরক্ত করিস না। যা এখান থেকে। ফালতু জ্ঞান দিস না। (বিরক্ত হয়ে)
.
আমি আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে রিমির ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।
আমার ঘরে এসে একটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেটে লম্বা টান দিচ্ছি আর রিমির কথা ভাবছি।
.
পেত্নীটা শোভনের জন্য এত পাগল কেন.? শোভন কি
ওকে যাদু-টোনা করলো নাকি.?
না হলে এমন তো হওয়ার কথা না।
কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, রিমিকে নিয়ে আমি এত ভাবছি কেন.? কই আমি তো আগে রিমিকে নিয়ে কোনদিন ভাবি নি তাহলে আজ কেন ভাবছি.?
.
আমি সারারাত নির্ঘুমে কাটিয়ে দিলাম। এই সারারাত শুধু রিমির কথায় ভেবেছি।
ভাল লাগছিল না তাই একটু ফেসবুকে ঢুকলাম। ফেসবুকে ঢুকতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।
.
রিমি একটা ফটো আপলোড দিয়েছে, যেখানে রিমি আর শোভন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। ক্যাপশনে দিয়েছে, 'My Love.!' ♥♥♥♥
আবার রিমি শোভনের সাথে রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস ও দিয়েছে। সেই পোস্টে লাইক, কমেন্টের ছড়াছড়ি.! সবাই রিমিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
.
এসব দেখে আমার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। আমি ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
.
ভাবলাম ছাদে থেকে একটু ঘুরে আসি। তাহলে হয়তো মন টা ভালো হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি ফ্রেশ হয়ে ছাদে গেলাম। কিন্তু ছাদে গিয়ে আমি আরও অবাক হলাম। দেখি, শোভন রিমিকে জড়িয়ে ধরে আছে।
.
চলবে...... ??????