.
রিমির ঘরে গিয়ে দেখি, রিমির কোলে একটা ছেলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর রিমি ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সত্যি বলতে, এমন অবস্থার জন্য আমি মোটেও তৈরি ছিলাম না। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি চিৎকার করে রিমিকে ডাক দিলাম।
.
আমার ডাক শুনে রিমি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকালো। তারপর ইশারা করে জানতে চাইলো কি হয়েছে। ভাবখানা এমন যেন কিছুই হয় নি। আর ছেলেটা এখনো রিমির কোলে শুয়েই আছে।
.
আমি এবার আর রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। দৌঁড়ে রিমির কাছে গেলাম। তারপর ছেলেটাকে টেনে শোয়া থেকে দাঁড় করলাম। ছেলেটার শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরে বললাম,
.
-- হারামির বাচ্চা, আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের-ই বাড়ির মেয়ের উপর নজর দিস.! তোকে আজ কাঁচা চিবিয়ে খাবো। (আমি)
.
কথাটা বলে আমি ছেলেটাকে মারতে যাব তার আগেই রিমি আমার হাত চেপে ধরলো। আমি চোখ গরম করে রিমিকে বললাম,
.
-- হাত ছাড়, রিমি। এই শালাকে আগে সাইজ করি। (আমি)
.
-- খবরদার তুই ওর গা'য়ে হাত দিবি না। (তীক্ষ্ণ চোখে)
.
-- শুধু হাত দিব না, এই শালাকে মেরে ভর্তা বানাবো। (আমি)
.
-- তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে, শাহিন। তুই ওকে ছুঁয়েও দেখবি না, মারা তো দূরে থাক। (প্রচন্ড রেগে)
.
-- কেন রে, কে ও.? কোন রাজ্যের রাজা সে.? (আমি)
.
-- ও হচ্ছে শোভন.! (রিমি)
.
এবার আমার অবাক হওয়ার মাত্রাটা আরো বেড়ে গেল। এই ছেলেটা শোভন.? আমি ভাল করে ছেলেটার দিকে তাকালাম। ছেলেটার পরণে টাইট শার্ট, ছেঁড়া ফাটা একটা প্যান্ট, যাকে আধুনিক ভাষায় স্টাইল বলে।
দু'হাতে মেয়েদের মত চুড়ি জাতীয় কিছু একটা, কানে মেয়েদের মত দুল আর চুলগুলো সজারুর মত খাড়াখাড়া।
.
আমি প্রথম যেদিন শোভনের কথা শুনেছিলাম, ভেবেছিলাম শোভন হ্যান্ডসাম, সুদর্শন কোন পুরুষ হবে কিন্তু আজ সামনাসামনি শোভনকে দেখে মনে হচ্ছে, এটা গাঞ্জাখোর.! আমি ভাবতে পারছি না, রিমি এই টোকাই ছেলেটাকে পছন্দ করলো কিভাবে.? আবার এই মদনের জন্য সুসাইড ও করতে গিয়েছিল।
.
পুরোনো দিনের কথা মনে হতেই আমার রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল। আমি শোভনের শার্টের কলার আরো শক্ত করে চেপে ধরে রিমিকে বললাম,
.
-- এই ছেলেটা সত্যি-ই শোভন তো.? (অবাক হয়ে)
.
-- হুমম কিন্তু তুই এত অবাক হচ্ছিস কেন.? (রিমি)
.
-- অবাক হবো না তো কি করবো... এই ছেলেটা আমাদের বাড়িতে এসেছে কেন.? এত কিছু হওয়ার পর এখানে আসার আগে ওর কলিজা একবারও কাঁপে নি.? (আমি)
.
-- শোভন সবকিছুর জন্য আমাকে স্যরি বলেছে। (রিমি)
.
-- আর তাতেই তুই গলে গেছিস তাই না.? ভুলে যাইস না, ও তোকে ধোকা দিয়েছে। তোকে রেখে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। (আমি)
.
-- শোভন বিয়ে করে নি। ও এখনো আমাকেই ভালবাসে.! (রিমি)
.
-- কি বলিস.! তুই না সেদিন বললি, শোভন বিয়ে করেছে। (আমি)
.
-- করতে চেয়েছিল কিন্তু করে নি। আসলে শোভন ওর বাবা-মা মুখের উপর কথা বলতে পারি নি। তাই বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের ঠিক আগের দিন ওর বাবা-মা'কে বুঝিয়ে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে। (রিমি)
.
-- তো এখন কি করতে চাচ্ছিস তুই.? (আমি)
.
-- শোভন কে বিয়ে করবো। (রিমি)
.
-- What.? মাথা ঠিক আছে তোর.? এত কিছু হওয়ার পরও তুই কোন হিসেবে শোভনকে বিয়ে করতে চাস। (আমি)
.
-- কি করবো, ওকে খুব ভালবাসি যে.! তাই সব ভুলে ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। (রিমি)
.
-- রাখ তোর ভালবাসা। তুই একে কি দেখে পছন্দ করেছিস আমার সেটাই মাথায় ঢুকছে না। পুরাই গাঞ্জাখোর একটা.! (আমি)
.
-- শাহিন, কথাবার্তা ঠিক করে বল। (রিমি)
.
-- ঠিকই বলেছি আমি। চেহেরা দেখেছিস ওর, একদম গাঞ্জাখোরের মত দেখাচ্ছে.! (আমি)
.
-- শাহিন, খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু.! ফালতু কথা বন্ধ কর। শোভন তোর চেয়ে হাজারগুনে ভালো আছে। (দাঁতে দাঁত চেপে)
.
-- পাগল হয়ে গেছিস তুই.? এই গাঞ্জাখোর টা তোকে যাদু-টোনা করেছি নাকি.? তুই এই টোকাইটার জন্য আমার মুখের উপর কথা বলছিস.! (আমি)
.
-- এখন তো শুধু কথা বলছি কিন্তু তুই যদি আর শোভনকে আজেবাজে কথা বলিস তাহলে মেরে চাপা ভেঙে দিব.! (রিমি)
.
রাগে কটমট করতে করতে বলল রিমি। তারপর আমার থেকে শোভনকে ছাড়িয়ে নিল। চোখ পাকিয়ে বলল,
.
-- ও সম্পর্কে তোর দুলাভাই হবে, তাই সম্মান দিয়ে কথা বলবি। আর আয়নায় নিজের চেহেরাটা ভালো করে একবার দেখে নিস তারপর অন্যকে নিয়ে কুটুক্তি করিস। (রিমি)
.
আমি রিমিকে কিছু বলতে যাব তার আগেই নিচে থেকে মা, রিমি আর শোভনকে ডাক দিল। ডাক শুনে রিমি আর শোভন নিচে গেল। ওদের পিছে পিছে আমিও গেলাম।
.
রিমি আর শোভন পাশাপাশি সোফার উপর বসলো। আমি গিয়ে বাবার পিছনে দাঁড়ালাম। শোভনের বাবা আমার মা'কে বলল,
.
-- বেয়ানসাব, ভনিতা না করে সরাসরি বলে ফেলি। আপনাদের মেয়েকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আপনাদের মেয়েকে কি আমাদের ঘরে দিবেন.? (শোভনের বাবা)
.
-- দেখুন, শোভন আর রিমি একে অপরকে ভালবাসে তাই আমাদের এখানে আপত্তি করা ঠিক হবে না। তবুও রিমির বাবাকে একবার জানানো উচিত। তারও তো একটা মতামত আছে। (মা)
.
-- রিমির বাবাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। যেভাবেই হোক, রিমিকেই আমার ছেলের বউ করবো। পরের বার এসে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে যাব, ইনশাআল্লাহ.! (শোভনের বাবা)
.
শোভনের বাবার কথা শুনে মা-বাবা খুব খুশি হলো। বুঝতে পারলাম, শোভনের সাথে রিমির বিয়ে দিতে তারা রাজি আছে। আর মা-বাবা রাজি থাকলে রিমির বাবা মানে মামাও রাজি হবে।
.
আমি আমার সামনে বসা রিমির দিকে তাকালাম। বিয়ের কথা শুনে সে মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসছে। লজ্জায় রিমির ফর্সা মুখটা ঈষৎ গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে।
কিন্তু জানি না কেন, রিমির বিয়ের কথা শুনে আমি খুশি হতে পারলাম না।
.
তাই সকলের অগোচরে মুখ গোমড়া করে আমি ঘরে চলে আসলাম। ঘরে এসে ঝিম মেরে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু বুঝতে পারছি না, হুট করে আমার মন খারাপ হলো কেন.? রিমির বিয়ের কথা শুনে আমার তো খুশি হওয়ার কথা। তা না করে মুখ ভার করে বসে আছি। বুকেন বা'পাশে ও কেমন জানি করছে। এমনটা আমার সাথে আগে কখনো হয় নি।
.
আমি মন খারাপ করে সারাদিন ঘরে শুয়ে রইলাম। এই সারাদিনে রিমি একবারও আমার খোজখবর নেয় নি। অন্যান্য দিন, হাজার বার আমার ঘরে আসে কিন্তু আজ একবারও আমার ঘরে আসে নি। রিমির দেখাও পেলাম না। যে কারণে আমার মনটা আরো খারাপ হতে থাকে।
এর মাঝে, তরী আমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছিল কিন্তু আমি ফোন ধরি নি। কেন জানি তরীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না।
.
.
.
পরের দিন, এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো। বেলা তখন অনেক, ১১ টার কাছাকাছি। আমি আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেশ হলাম। তারপর রিমির ঘরে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম রিমি আছে কি-না। না, রিমি নেই। পুরো বাড়ি খোঁজার পরও রিমিকে পেলাম না। মনে হয়, বাইরে কোথাও গেছে।
.
কিছু ভাল লাগছিল না তাই তরীকে সাথে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। ভেবেছিলাম, ঘুরাঘুরি করলে মন ভালো হবে কিন্তু কিসের কি। আমার মন যেমন ছিল তেমন-ই থাকলো। বারবার শুধু রিমির কথা মনে আসছে। কিছুই ভাল লাগছে না। বুকের ভিতর খালি হাসফাস করছে।
তরীকে নিয়ে আর বেশিক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম না। ওকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আমিও বাড়ির পথে রওনা দিলাম।
.
হটাৎ রাস্তায় শোভনকে দেখতে পেলাম। দেখি, শোভন একটা মেয়ের হাত ধরে হাটছে। আমি প্রচন্ড অবাক হলাম। যেখানে রিমির থাকার কথা সেখানে শোভনের সাথে অন্য একটা মেয়ে.!
আমি দৌঁড়ে শোভনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। শোভন আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো কিন্তু মেয়েটার হাত ছাড়লো না। আমি শোভনের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বাজখাঁই গলায় বললাম,
.
-- মেয়েটা কে.? (আমি)
.
শোভন স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল,
.
-- আমার ফ্রেন্ড। (শোভন)
.
-- তাহলে হাত ধরে আছো কেন.? (আমি)
.
-- কেন ফ্রেন্ডের হাত ধরা যাবে না নাকি.? (শোভন)
.
-- যাবে কিন্তু তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে না তোমরা ফ্রেন্ড। (আমি)
.
-- তাহলে কি মনে হচ্ছে, প্রেমিক-প্রেমিকা.? ঠিকই ধরেছো। আমরা দু'জন প্রেম করছি। (শোভন)
.
-- তুমি কিন্তু রিমিকে ধোকা দিচ্ছো। কাজটা মোটেও ঠিক করছো না। (আমি)
.
-- তাতে তোমার কি.? যাও নিজের চরকায় গিয়ে তেল দাও। (চোখ পাকিয়ে)
.
-- দাঁড়া, এক্ষুণি গিয়ে রিমিকে সব বলছি। তারপর দেখিও, রিমি তোমার কি হাল করে। আর আমিও দেখবো, আমি থাকতে তুমি কিভাবে রিমিকে বিয়ে করো। শালা ধান্দাবাজ.! (আমি)
.
কথাগুলো বলে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। তারপর তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসলাম।
.
বাড়িতে এসে আমি হন্তদন্ত হয়ে রিমির ঘরে গেলাম। রিমি বিছানার উপর বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমি রিমির সামনে গিয়ে বলতে লাগলাম,
.
-- জানিস, শোভন কি করেছে.? ও একটা মেয়ের...... ????? (আমি)
.
-- ঠাসস.! (রিমি)
.
আমার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই রিমি ঠাস করে আমার গালে চড় মারলো। আচমকা চড় মারাতে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। গালে হাত দিয়ে রিমির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।
.
চলবে..... ??????