.



.
হটাৎ কে যেন আমাকে পিছন থেকে টান মারলো। আমি তরীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি, রিমি দাঁড়িয়ে আছে। ইসসস, তাড়াহুরোয় দরজা লাগাতে ভুলে গেছি। রিমি আমার দিকে কিছুক্ষণ রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে থেকে ঠাস করে একটা চড় মারলো। আমি ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলাম। রিমি চড়টা এত জোরে মেরেছে আমার চাপার ২টা দাঁত পর্যন্ত হিলে গেছে।
শুধু চড় মেরেও রিমি ক্ষান্ত হলো না। সেই সাথে আমার মাথার বড় বড় চুল টেনে ধরে মুখটা তার কাছে নিয়ে আসলো। আমি কিছু বলার আগেই রিমি ঝাঝালো গলায় বলল,
.
-- বিয়ের আগে এসব কি শুরু করেছিস, হ্যা.? কেউ দেখে ফেললে তো মুখে থু-থু দিবে। (রিমি)
.
আমি ঝাটকা দিয়ে রিমির থেকে নিজেকে ছাড়ালাম। রাগী গলায় বললাম,
.
-- তাতে তোর কি.? আমি আমার বউয়ের সাথে যা ইচ্ছা তাই করবো। তুই আমাকে বাঁধা দেওয়ার কে.? (আমি)
.
আমার কথা শুনে রিমি মুখ বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। তারপর মুখ ভেটকে বলল,
.
-- এ্যাহ, বউ রে... ঢং দেখলে বাঁচি না। শোন, তোদের বিয়ের এখনো অনেক দেরি আছে। তাই স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর। আর হ্যা, লুচ্চামি একটু কম কর। আমরা এখানে পাত্রী দেখতে এসেছি। (রিমি)
.
রিমির কথার প্রত্ত্যুতরে আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই তরী আমাকে থামিয়ে দিল। তারপর তরী রিমির মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালো। চোখ-মুখ কুচকে রিমিকে বলল,
.
-- শাহিনকে নিয়ে তোমার এত না ভাবলেও চলবে। তাকে নিয়ে ভাবার জন্য আমি আছি। আর হ্যা, নেক্সট টাইম শাহিনের গা'য়ে হাত তুলবে না বলে দিলাম। (তরী)
.
-- হাত তুললে কি করবে.? শাহিন আমার ভাই। তাই ওকে আমি মারবো, কাটবো, দরকার হলে উল্টো করে ঝুলিয়ে পিটাবো। তুমি কথা বলার কে.? তুমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছো তাই কথা একটু কম বলবে। না হলে তোমার কানের নিচেও তবলা বাজাবো। (রিমি)
.
-- কি.? এত বড় কথা.! আমি তোমাকে আমার বন্ধু ভাবতাম আর তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছো.! শাহিন তুমি রিমিকে কিছু বলবে না.? (তরী)
.
-- ওর কথায় কান দিও না। ওর মাথায় সমস্যা আছে। (আমি)
.
-- আমার না, এই সাদা বকটার মাথায় সমস্যা আছে। ওকে ডাক্তার দেখাইস। আর এসব ফালতু রোমান্স বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয়। সবাই ওয়েট করছে। (রিমি)
.
কথাটা বলে রিমি চলে গেল। আমিও রিমির পিছে পিছে যেতে লাগলাম। পিছন ফিরে একবার তরীর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে রাগে সাপের মত ফোঁসফোঁস করছে। আমি মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি। যাতে তরী রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা কিছু করে না বসে। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
.
একটুপর তরী একদম নতুন বউয়ের মত সেজেগুজে, মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে, আমাদের সামনে উপস্থিত হল। তরীর হাতে চা'য়ের ট্রে। তরী একে একে সবাইকে সালাম করে চা দিল। তরীর হাতে বানানো চা খেয়ে সবাই তার প্রসংশা করলো। শুধু রিমি আর রিপা বাদে। রিমি চা'য়ে চুমুক দিয়ে মুখ কুচকে বলল,
.
-- চা একদম ফালতু হয়েছে। মনে হচ্ছে শরবত খাচ্ছি। (রিমি)
.
পাশ থেকে রিপাও রিমির সাথে তাল মেলালো। মুখ উল্টিয়ে বলল,
.
-- চা'য়ে আরেকটু চিনি দিলে ভাল হত। কড়াও হয়নি। (রিপা)
.
রিমি আর রিপার কথা শুনে আমার গা জ্বলে উঠলো। এরা দু'জন মনে হয় আমার বিয়ে ভেঙেই শান্ত হবে। সবার সামনে পেত্নী দু'টোকে কিছু বলতেও পারছি না।
রিমি তরী'কে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবা রিমি'কে থামিয়ে দিল। রিমিকে চোখ পাকিয়ে বলল,
.
-- আস্তে আস্তে শিখে নিবে। এটা নিয়ে এত কথা বলার দরকার নেই। (বাবা)
.
বাবার ভয়ে রিমি আর কিছু বলল না। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
চা দেওয়া শেষে মা তরী'কে কিছু প্রশ্ন করলো আর তরী সব প্রশ্নের উত্তর দিল। আমাদের সব আত্মীয় স্বজন তরীর প্রসংশায় পঞ্চমুখ.! তরী আচার-আচরণ, চালচলন, আদব-কায়দা সবার পছন্দ হয়েছে। আমাদের বিয়েতে কারো কোন আপত্তি নেই। সবাই আমাদের দু'জনের জন্য দোয়া করলো। মা রিমিকে বলল,
.
-- রিমি, আঙটি টা দে তো। (মা)
.
-- কিসের আঙটি, আম্মু.? (রিমি)
.
-- কিসের আঙটি মানে.? আরে, এ্যাঙ্গেজমেন্টের আঙটি। সকালবেলা তুই যে দেখার জন্য নিলি সেটা। (মা)
.
-- উফফ, আম্মু... আঙটি টা তো ভুলে বাড়িতে রেখে এসেছি। (রিমি)
.
-- কি.? রেখে এসেছিস.? (চোখ বড় বড় করে)
.
-- স্যরি, আম্মু.! তাড়াহুরোয় আনতে ভুলে গেছি। (মুখ গোমড়া করে)
.
রিমির চেহেরা দেখে যে কেউ বলবে, রিমি আঙটি টা ভুলক্রমে রেখে এসেছে কিন্তু আমি ভালোভাবেই জানি রিমি ইচ্ছা করেই আঙটি টা নিয়ে আসে নি। রিমিকে যে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েটা আমার বিয়ে ভাঙার জন্য আর কত নিচে নামবে.? সবচেয়ে বড় কথা রিমি আমার বিয়ে ভেঙে কি পাবে.? এই প্রশ্নটার উত্তর এখনো খুজে পেলাম না।
.
এদিকে,
রিমির কথা শুনে তো মা রেগে আগুন। মা রিমিকে ধমক দিয়ে বলল,
.
-- তোকে যে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। এতটা কেয়ারলেস কেন তুই.? একটা কাজও ঠিকভাবে করতে পারিস না। আঙটি ছাড়া বিয়ে পাকা করবো কিভাবে.? (রেগে)
.
-- থাক, বেয়ান সাব আপনি আর রাগারাগি করিয়েন না। আঙটি না পড়ালেও চলবে। আপনাদের মুখের কথাই যথেস্ট। (তরীর মা)
.
অতঃপর, আঙটি না পড়িয়েই আমার আর তরীর বিয়ে পাকা হলো। তারপর আমরা কিছুক্ষণ গল্পগুজব করার পর তরীর মা আমাদের খেতে ডাকলো। তরী নাকি আজ নিজে হাত সবকিছু রান্না করেছে। আমরা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসলাম। রিমি আমার ডান পাশে আর রিপা আমার বাম পাশে বসলো। ডাইনিং টেবিল নানা পদের খাবার দিয়ে সাজানো। তবে বেশির ভাগ-ই আমার পছন্দের খাবার। আমার জিভে জল চলে এল। তরী আমাদের সবাইকে খাবার বেড়ে দিল। আমরা খাওয়া শুরু করলাম।
.
খাবার মুখে দিতেই সবাই বাহ্, বাহ্ বলে তরীর প্রসংশা করতে লাগলো। রান্নাটা সত্যি-ই দারুণ হয়েছে। তরী যে এত ভালো রান্না করতে পারে আমার জানা ছিল না। মনে হচ্ছে, আমি অমৃত খাচ্ছি।
.
কিন্তু রিমি আর রিপার মুখটা কালো হয়ে আছে। তারা খাবার নাড়াতে নাড়াতে কি যেন ভাবছে। নিশ্চয় কোন প্ল্যান করছে। আমার ধারণাটাই সত্যি হলো। রিমি আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলল,
.
-- রান্না খুব একটা ভালো হয় নি। (রিমি)
.
-- হ্যাঁ আপু, ঠিক বলেছো। তরকারিতে লবণ আর ঝালটা একটু বেশি হয়ে গেছে। (রিপা)
.
-- সারাদিন সাঁজগোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে রান্না তো খারাপ হবেই। এখনি যেই অবস্থা দেখছি না জানি বিয়ের পর কি করবে। বেচারা আমার ভাইটাকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে। (রিমি)
.
-- রিমি, কি হচ্ছে এসব.? রান্না তো ঠিকই হয়েছে। সবকিছু পরিমাণ মত দেওয়া আছে। (মা)
.
-- কই আমার কাছে তো ঠিক মনে হচ্ছে না। তরীর রান্না খেয়ে আমার বমি বমি পাচ্ছে।
.
-- রিমি, এবার কিন্তু মাইর খাবি। বেশি কথা না বলে চুপচাপ খা। (বাবা)
.
রিমির কথা শুনে বাবা ধমক দিয়ে বলল। তাতেও কোন কাজ হলো না। রিমি এবার গর্জে উঠে বলল,
.
-- এরকম ফালতু খাবার আমি খাব না। তোমাদের ভালো লাগছে, তোমরা খাও। (রিমি)
.
কথাটা বলে রিমি প্লেটে থাকা খাবারের মর্ধ্যে হাত ধুয়ে বাইরে চলে গেল। পিছন পিছন রিপাও গেল। রিমির এমন ব্যবহারে আমরা সবাই অবাক হলাম। রান্না তো ঠিকই আছে তবু্ও রিমি এমন করলো কেন.?
.
আমি আড় চোখে তরীর দিকে তাকালাম। তরী মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। আমার তাকানো দেখে তরী সাথে সাথে চোখের পানি মুছে হাসার চেষ্টা করলো। তরীর মন খারাপ করাটা স্বাভাবিক। রান্না ভালো হওয়ার পরও কেউ যদি বলে রান্না খারাপ হয়েছে তাহলে তো মন খারাপ হবেই।
.
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি আর বড় মামা তরীদের বাড়ির আশপাশটা ঘুরতে গেলাম।
অন্যদিকে,
তরী সকলের চোখ ফাকি দিয়ে রিমিকে টানতে টানতে তার রুমে নিয়ে গেল। তারপর ধাক্কা দিয়ে রিমিকে বিছানায় বসালো। তরী রুমের দরজা আটকিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে রিমির মুখ বরাবর বসলো। তারপর রিমিকে ধমক দিয়ে বলল,
.
-- তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন.? (তরী)
.
-- কি করেছি.? (রিমি)
.
-- রান্না ভালো হওয়ার পরও কেন বলেছো রান্না ভালো হয় নি.? (তরী)
.
-- যা সত্যি তাই বলেছি। রান্নাটা সত্যি-ই ভালো হয় নি। (রিমি)
.
-- ঠিক আছে মানলাম কিন্তু তুমি আমাদের বিয়ে ভাঙতে চাইছো কেন.? (তরী)
.
-- পাগলের মত কি সব বলছো। আমি কেন তোমাদের বিয়ে ভাঙতে যাব.? (রিমি)
.
-- একদম নাটক করবে না। শাহিন আমাকে সব বলেছে। (তরী)
.
-- তা কি বলেছে.? (রিমি)
.
-- বলেছে, তুমি নাকি আমাদের বিয়েটা হতে দিবে না। (তরী)
.
-- ইশশ, বড্ড দেরি করে বলেছে তোমাকে। আগে বললে হয়তো তুমি কিছু করতে পারতে কিন্তু এখন আর কিছু করতে পারবে না। (রিমি)
.
-- মানে.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
-- মানে আমি সত্যি-ই তোমাদের বিয়েটা হতে দিব না। (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে তরী প্রচন্ড রেগে যায়। রাগে তরী হাত কাচলাতে থাকে। তরীর এমন অবস্থা দেখে রিমি বেশ মজা পায়। সে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। এতে তরী আরো রেগে যায় এবং রাগের মাথায় রিমির গালে ঠাস করে একটা চড় মারে.!
.
চলবে..... ??????

========================

 ডেঞ্জারাস মামাতো বোন (পার্ট-32)romantic love story
.
-- ইশশ, বড্ড দেরি করে বলেছে তোমাকে। আগে বললে হয়তো তুমি কিছু করতে পারতে কিন্তু এখন আর কিছু করতে পারবে না। (রিমি)
.
-- মানে.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
-- মানে আমি সত্যি-ই তোমাদের বিয়েটা হতে দিব না। (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে তরী প্রচন্ড রেগে যায়। রাগে তরী হাত কাচলাতে থাকে। তরীর এমন অবস্থা দেখে রিমি বেশ মজা পায়। সে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। এতে তরী আরো রেগে যায় এবং রাগের মাথায় রিমির গালে ঠাস করে একটা চড় মারে.!
.
রিমিকে চড় মারার পর তরী বুঝতে পারে বড্ড ভুল করে ফেলেছে সে। তার রিমিকে চড় মারাটা ঠিক হয় নি। রাগকে কন্ট্রোল করা উচিত ছিল।
.
এদিকে,
চড় খেয়ে রিমি ভ্রু-কুঁচকে তরীর দিকে তাকিয়ে আছে। রিমির চোখে-মুখে রাগের আভা.! সে চোখ বড় বড় করে অগ্নিদৃষ্টিতে তরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তরী রিমির এভাবে তাকানো দেখে ভয় পেয়ে গেল। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আর রিমি তরীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
.
-- তুমি আমাকে চড় মারলে.? (রিমি)
.
-- আই'ম স্যরি, রিমি। রাগের মাথায় চড়টা মেরে দিয়েছি। প্লিজ, কিছু মনে করো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তরী)
.
-- ক্ষমা.? তোমার হাত আমি ভেঙে ফেলবো.! সাহস হলো কি করে আমাকে চড় মারার.? (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে তরী আরো ভয় পেয়ে গেল। একদম জড়সড় হয়ে অপরাধীর মত মাথা নিচু করে রইলো। কিছু সময় চুপ থেকে আমতা আমতা করে রিমিকে বলল,
.
-- আমি স্যরি বললাম তো। (তরী)
.
-- তোমার স্যরি তোমার কাছেই রাখো। তোমাকে আমি পরে দেখে নিব। চড়টা হিসাবের খাতায় তোলা রইলো। সময়মত সুদ সমেত ফেরত দিয়ে দিব। (রিমি)
.
কথাটা বলেই রিমি উঠে দাঁড়ালো। চলে আসতে যাবে এমন সময় তরী পিছন থেকে বলল,
.
-- তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন.? আমি কি দোষ করেছি.? আমি কি তোমার কোন ক্ষতি করেছি.? (তরী)
.
তরীর কথা শুনে রিমি পিছন ফিরে তাকালো। তারপর তরীর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে শান্ত গলায় বলল,
.
-- তোমার কোন দোষ নেই। সব দোষ শাহিনের। (রিমি)
.
-- শাহিন আবার কি করেছে.? (তরী)
.
-- সেটা তোমার না জানলেও চলবে। (রিমি)
.
-- আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে.? (তরী)
.
-- বলো। (রিমি)
.
-- তুমি কি শাহিনকে ভালবাসো.? (তরী)
.
-- What.? তোমার কি মাথা খারাপ.? কি বলছো এসব। (রিমি)
.
তরীর কথা শুনে রিমি এমন রিয়েক্ট করলো যেন শাহিনকে ভালবাসা তো দূরে থাক, রিমি শাহিনকে চিনেই না। রিমি ভেংচি দিয়ে বলল,
.
-- শাহিনের মত ছেলেকে আমি ভালবাসবো.? অসম্ভব। (রিমি)
.
-- কেন শাহিনকে কি ভালবাসা যায় না.? (তরী)
.
-- না। শাহিনের মত অপদার্থ কে কেবল তোমার মত মেয়েই ভালবাসবে, আমি নই। (রিমি)
.
-- তাহলে তুমি কেন আমাদের পিছে লেগেছো.? আমাদের বিয়ে ভেঙে তোমার কি লাভ.? (তরী)
.
-- কোন লাভ নেই কিন্তু তবুও আমি এমনটা করবো। কারণ আমি তোমাকে পছন্দ করি না। (রিমি)
.
-- আমি তোমাকে বন্ধু ভাবি আর তুমি আমার সাথে শত্রুর মত আচরণ করছো.? (তরী)
.
-- তাহলে আজ থেকে তুমিও আমাকে শত্রু ভাবো। খেলাটা জমে উঠবে.! (রিমি)
.
কথাটা বলেই রিমি হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আর তরী হা করে রিমির চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। রিমি কেন এমন করছে তার উত্তর তরীর কাছে নেই।
.
তরী মনে মনে ভেবেছিল, রিমি শাহিনকে ভালবাসে তাই তাদের বিয়েটা হতে দিবে না। কিন্তু রিমি তো সাফ সাফ মানা করে দিল। তাহলে আর কি হতে পারে.?
তরী এসব ভাবতে ভাবতে ছাদে গেল। ছাদে গিয়ে দেখে শাহিন একা দাঁড়িয়ে আছে।
.
তরী পিছন থেকে শাহিন কে জড়িয়ে ধরলো। শাহিন চমকে উঠে। পিছন ফিরে তরীকে দেখে বলে,
.
-- কি ব্যাপার, আজ এত ভালবাসা দেখাচ্ছো কেন.? (আমি)
.
কথাটা বলে আমি ভাল করে তরীর দিকে তাকালাম। দেখি, তরী মুখ ভার করে মাথা নিচু করে আছে। তরীর মন খারাপ দেখে আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি তরীর থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উচু করে ধরলাম। তারপর তরীর চোখে চোখ রেখে বললাম,
.
-- আজকে এমন খুশির দিনেও মুখ ভার করে আছো কেন.? কি হয়েছে.? (আমি)
.
-- রিমি আমাদের সাথে এমন করছে কেন.? (তরী)
.
-- কি করেছে.? (আমি)
.
-- রিমি নাকি আমাদের বিয়ে ভেঙে দিবে। (তরী)
.
-- তুমি আমাদের বিয়ে নিয়ে রিমির সাথে কথা বলেছো.? (আমি)
.
-- হুমম, একটু আগে বলেছি। শাহিন, আমার না খুব চিন্তা হচ্ছে। তুমি প্লিজ, কিছু একটা করো। (ভয়ার্ত কন্ঠে)
.
-- আরে ধুরর, চিন্তা করো নাতো। কিচ্ছু হবে না। রিমি ওসব মজা করে বলেছে। (আমি)
.
-- আমার সেরকম মনে হচ্ছে না। ঐ মেয়েটা একটা সাইকো। যে কোন কিছু করে ফেলতে পারে। (তরী)
.
-- আরে তেমন কিছু না। আসলে রিমিকে আমরা কেউ বুঝতে পারি না। ওর সাথে আমার এত বছরের পরিচয় তবুও ওকে আমি প্রতিদিন নতুন রূপে আবিষ্কার করি। ওর শুধু একটাই সমস্যা, রাগ বেশি। রেগে গেলে যা ইচ্ছা করে ফেলে। তুমি রিমির ওসব কথাকে পাত্তা দিও না। আমার বিশ্বাস, রিমি বিয়েতে কোন অঘটন ঘটাবে না। (আমি)
.
-- তাই যেন হয়। তবে রিমির আচরণ আমার কাছে ঠিক লাগছে না। আচ্ছা, রিমি কি তোমাকে ভালবাসে.? (তরী)
.
-- তোমার হটাৎ এমন কেন মনে হলো.? (অবাক হয়ে)
.
-- না, আসলে রিমি আর তুমি অনেক ক্লোজড তো তাই বললাম। (তরী)
.
-- রিমি আর আমি তো ছোটবেলা থেকেই এমন। তাছাড়া রিমি অন্য একজনকে ভালবাসে.! ছেলেটার নাম শোভন। কিন্তু শোভন রিমিকে ধোকা দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। (আমি)
.
-- কি বলো.! (চোখ বড় বড় করে)
.
-- সত্যি বলছি। তারপর থেকেই রিমি আরো বেশি খিটখিটে হয়ে গেছে। ভালো কথাও শুনতে পারে না। (আমি)
.
-- ওহ, সো স্যাড.! (মন খারাপ করে)
.
-- আচ্ছা, রিমির কথা এখন বাদ দাও। অন্যকিছু বলো। (আমি)
.
তরী কিছু বলতে যাবে এমন সময় নিচে থেকে আমাদের ডাক পড়লো। আমি আর তরী নিচে গেলাম। দেখি, সবাই এখন বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিবে। অতঃপর তরী এবং আঙ্কেল-আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
.
.
.
পরের দিন সকাল বেলা একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, ১০'টা বাজে। কি ব্যাপার এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালাম অথচ রিমি আমাকে একবারও ডাক দিলো না। আজব ব্যাপার.!
.
আমি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গেলাম। দেখি, বাবা-মা কার সাথে যেন কথা বলছে। আমি সামনে এগিয়ে গেলাম। সোফায় দু'জন মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা বসে আছে। মনে হয়, তারা স্বামী-স্ত্রী হবে।
আমি তাদের সালাম দিলাম। মা আমাকে দেখিয়ে উনাদের বললেন,
.
-- এটা আমার একমাত্র ছেলে, শাহিন.! (মা)
.
-- বাহ্.! আপনার ছেলে তো অনেক বড় হয়ে গেছে। (আঙ্কেল)
.
আমি সামান্য হাসলাম। তারপর মা'কে বললাম,
.
-- রিমি কোথায়, মা.? (আমি)
.
-- ওর ঘরে আছে। (মা)
.
তারপর আমি উনাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রিমির ঘরে গেলাম। তবে এই মানুষ দু'টো কে চিনতে পারলাম না। কোনদিন দেখিও নি। হয়তো বাবার কলিগ হবে।
.
আমি এসব বাদ দিয়ে রিমির ঘরের সামনে গেলাম। দরজা খুলে ভিতরে যা দেখলাম, তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
.
দেখি, রিমির কোলে একটা ছেলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর রিমি ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সত্যি বলতে, এমন অবস্থার জন্য আমি মোটেও তৈরি ছিলাম না। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি চিৎকার করে রিমিকে ডাক দিলাম।
.
চলবে..... ??????