.
আমি কিছুক্ষণ রিমির দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে রিমির গলা টিপে ধরলাম। রিমিকে আজ মেরেই ফেলবো। পেন্তীটা অনেক জ্বালিয়েছে। রিমি এমনিতেই অসুস্থ ছিল তার উপর গলা টিপে ধরাতে চোখ-মুখ উল্টে দিয়েছে। আমার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে।
.
কয়েক সেকেন্ড পর আমি নিজে থেকেই রিমিকে ছেড়ে দিলাম। ছাড়া পেয়ে রিমি জোরে জোরে কাঁশতে লাগল। চোখে পানি এসে গেছে। সেই সাথে ভয়ে একদম চুপসে গেছে। জড়সড় ভাবে বসে আছে। আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আমি একটু চুপ থেকে শান্ত গলায় বললাম,
.
-- আত্মহত্যা করতে কেন চেয়েছিলি.? (আমি) ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
রিমি কিছু বলল না। মাথা নিচু করে বসে রইলো।
আমার প্রচন্ড রাগ উঠলো। আমি চিৎকার
করে বললাম,
.
-- কথা বলছিস না কেন.? বোবা হয়ে গেছিস নাকি.?
বল কেন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলি। (আমি)
.
আমার চিৎকার শুনে রিমি চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো। এমনিতেই ভয় পেয়ে ছিল এবার মনে হয়
আরো ভয় পেয়েছে। কিন্তু রিমির মুখ থেকে কোন কথা
বের হলো না।
এদিকে,
আমার চিৎকার শুনে ডাক্তার আর নার্স ছুটে এলো।
সাথে মা-বাবা সহ অন্যরাও এলো। ডাক্তার আমার
দিকে তাকিয়ে বলল,
.
-- চিৎকার করছেন কেন.? কোন সমস্যা.? (ডাক্তার)
.
-- কিছু না, ডাক্তার। এমনি। (রিমি)
.
-- হাসপাতালে অকারণে চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না। আর রোগীর সাথে উত্তেজিত হয়ে কথা না বলে ধীরেসুস্থে কথা বলুন। (ডাক্তার)
.
কথাগুলো বলে ডাক্তার একটু থামলেন।
আমাকে দেখিয়ে রিমিকে বললেন,
.
-- ইনি নিশ্চয় আপনার হাজবেন্ট, তাইনা.? (ডাক্তার)
.
ডাক্তারের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম।
বলে কি.! মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি.? রিমি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালো।
শুধু রিমি না, পরিবারের সবাই ফুটবলের মত ইয়া বড়
বড় চোখ করে আমার দিকে তাকালো।
আমি কিছু বলার আগেই ডাক্তার আবার বললেন,
.
-- দেখুন, স্বামী-স্ত্রী'র মর্ধ্যে ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি, মনোমালিন্য এসব সাধারণ বিষয়। কিন্তু তাই বলে আপনি সুসাইড করতে চাইবেন.! এটা কিন্তু ঠিক করেন নি। আপনার এমন অবস্থা দেখে আপনার হাজবেন্ট কত কষ্ট পেয়েছে জানেন.? বেচারার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। এদিক সেদিক দৌঁড়াদৌড়ি করে অনেক কষ্টে আপনার জন্য রক্ত জোগাড় করেছে। (ডাক্তার)
.
ডাক্তারের কথা শুনে রিমি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকালো। কিছু বলতে গিয়েও বলল না।
কিন্তু আমি এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না।
তাগাদা দিয়ে বললাম,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- ডাক্তার এই মেয়েটা আমার বউ নয়, আমার
মামাতো বোন। (আমি)
.
আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব বড় রকমের ধাক্কা খেলেন। চোখ-মুখ কুচকে আমার দিকে তাকালেন। উনি হয়তো এমন কথা আশা করেন নি। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে উনার হাসি মুখটা ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেল। তড়িঘড়ি করে নিজেকে সামলে বললেন,
.
-- স্যরি, এক্সট্রিমলি স্যরি.! আমি ভেবেছিলাম
আপনারা দু'জন স্বামী-স্ত্রী.! (ডাক্তার)
.
-- না, সেরকম কিছু নয়। (আমি)
.
-- আসলে গতকাল রাতে আপনি এমন ব্যবহার
করছিলেন যে, আমি উনাকে আপনার স্ত্রী ভেবে বসেছি। প্লিজ, কিছু মনে করবেন না। (ডাক্তার)
.
-- না, ঠিক আছে। (আমি)
.
ডাক্তার আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেলেন। আমি পাশে তাকাতেই দেখি, পরিবারের সবাই আমার দিকে চাতক পাখির মত চেয়ে আছে। আমি বাবাকে বললাম,
.
-- এভাবে তাকিয়ে আছো কেন.? (আমি)
.
-- কিছু না, এমনি। (বাবা)
.
-- ওহ, তোমরা সবাই একটু বাইরে যাও। রিমির সাথে
কিছু কথা আছে। (আমি)
.
-- না, তোমরা যাবে না। শাহিন আমাকে
মারবে.! (ভয়ে ভয়ে)
.
-- তোকে মারবো না তো কি আদর করবো.?
অনেক জ্বালিয়েছিস তুই.! (রেগে)
.
-- শাহিন.! বাবা, যা হবার হয়েছে। তুই আর মাথা গরম করিস না। না হলে রাগের মাথায় রিমি আবার হয়তো
কোন অঘটন ঘটিয়ে বসবে। (মা)
.
-- সেরকমটা আর হতে দিচ্ছি না। ওর আত্মহত্যার করার শখ আমি চিরদিনের মত মিটিয়ে দিব.! তোমরা বাইরে যাও। (আমি)
.
-- না, আম্মু। তোমরা কোথাও যাবে না। এই বান্দরটা সত্যি সত্যি আমাকে মেরে ফেলবে.! (কান্নার সুরে)
.
-- শুধু মারবো না, মেরে চামড়া ছিলে নিব.! (শক্ত গলায়)
.
-- শাহিন, ওকে আর ভয় দেখাস না। বেচারি এমনিতেই অসুস্থ। (মা)
.
-- তোমাদের যেতে বললাম না.? আমার মাথা গরম করবে না বলে দিলাম। (আমি)
.
মা আর কিছু বলল না। সবাই চলে গেল। যাওয়ার আগে মা রিমিকে ইশারা করে বলে গেল, 'আমি যদি কিছু করি তাহলে যেন চিৎকার করে ডাক দেয়।'
.
আমি রিমির পাশে গিয়ে বসলাম। রিমিকে দেখে বড্ড মায়া লাগছে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছি না। ভয়ে মুখটা একদম চুনোপুটির মত হয়ে আছে। জড়সড় হয়ে বসে আছে। বারবার লম্বা ঢোক গিলছে। পাশের জানালা দিয়ে আসা মৃদু বাতাসে রিমির ঘন চুলগুলো দোল খাচ্ছে। এমন একটা সাংঘাতিক অবস্থাতেও রিমিকে অপূর্ব লাগছে। আমি কেন জানি রাগটাকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। রিমির মায়াভরা চেহেরা দেখে সব ভ্যানিশ হয়ে গেল। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত গলায় বললাম,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- গতকাল তোকে যখন ঐ অবস্থায় দেখলাম, বিশ্বাস কর আমার দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে গিয়েছিল। আমি কিভাবে যে তোকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি সেটা শুধু আমি-ই জানি। এমন একটা কান্ড ঘটানোর আগে তোর আমাদের কথা মনে পড়ে নি.? এত স্বার্থপর কেন তুই.? আমরা কত কষ্ট পেয়েছি জানিস.! আমরা কি আজ পর্যন্ত তোকে কোনদিন কষ্ট দিয়েছি.? (আমি)
.
কথাগুলো বলতে বলতে আমার চোখে পানি এসে গেল। আমার চোখে পানি দেখে রিমিও কেঁদে দিবে এমন অবস্থা। রিমি আমার কাছে এসে চোখের পানি মুঝে দিতে যাবে তার আগেই তাকে দূরে সরিয়ে দিলাম। চোখের পানি মুছে কড়া গলায় বললাম,
.
-- নিজের ইচ্ছায় কষ্ট দিয়ে এখন দরদ দেখাতে
হবে না। (আমি)
.
রিমি কিছু বলল না। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
থেকে মাথা নিচু করে নিল। আমি বললাম,
.
-- আত্মহত্যা করতে কেন চেয়েছিলি.? (আমি)
.
রিমি এবারও কিছু বলল না। আমার প্রচন্ড রাগ উঠলো। আমি জোরে ধমক দিয়ে বললাম,
.
-- কথা বলছিস না কেন.? বলবি নাকি মাইর খাবি.? (আমি)
.
আমার ধমক শুনে রিমি কেঁপে উঠলো। শুকনো মুখ করে আমার পানে তাকালো। চোখের কোণায় পানি চিকচিক করছে। কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,
.
-- এমনি। কোনো কারণ নেই। (রিমি)
.
-- একদম মিথ্যা বলবি না। ভালই ভালই বল বলছি। মেজাজ কিন্তু এমনিতেই গরম আছে.! (রেগে)
.
-- বললে তুই আমাকে মারবি। (কান্নার সুরে)
.
-- না বললেও মারবো। তাই বলে দে। (আমি)
.
রিমি কিছু সময় ঝিম মেরে বসে রইলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
.
-- মাস দু'য়েক আগে শোভন নামে একটা ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়। অফিসের একটা প্রজেক্টর কাজে এখানে এসেছিল সে। শপিংমলে আমাদের প্রথম দেখা হয়। শোভন ওর মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনতে চাইছিল কিন্তু কোন কালারের কিনবে ভেবে পাচ্ছিল না। আমি ওর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে আমার কাছে হেল্প চায়। আমি ওর মা'র জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে দেই। তারপর সে আমার কাছে ফোন নাম্বার চায়। আমিও দিয়ে দেই কারণ শোভনকে আমার ভালো লেগেছিল। ব্যস, তারপর থেকে আমাদের কথা হতে থাকে। কিছুদিন এভাবে চলার পর শোভন আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি দেখা করি আর সেদিন-ই সে আমাকে প্রপোজ করে। আমি অমত করি নি। কারণ এই কয়দিনে আমিও শোভনকে ভালবেসে ফেলি। (রিমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- তাহলে আত্মহত্যা করতে চাইছিলি কেন.? তোর লাইফ তো হাসিখুশি ছিল। (আমি)
.
রিমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
.
-- আমি হাসিখুশি ছিলাম না রে। ভিতরে ভিতরে
মরে যাচ্ছিলাম। তোরা কেউ সেটা দেখিস নি।
শোভনের অফিসের কাজ শেষ হলে সে চলে যায়। আমাদের নিয়মিত ফোনে কথা হতে থাকে। সবকিছু ভালই চলছিল কিন্তু কিছুদিন আগে শোভন ফোন করে
বলে, সে আর সম্পর্কটা সামনে আগাতে চায় না।
সে তার মা-বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে। বিশ্বাস কর, আমি এটা মেনে নিতে পারি নি। শোভনকে আমি সত্যি-ই খুব ভালবাসি। আমি শোভনের সাথে শেষবারের মত দেখা করতে চাই। শোভন রাজি হয়। আমরা দেখা করি এবং শোভন কে হাতজোড় করে বলি, সে যাতে তার পরিবার কে একটু বোঝায়। তখন শোভন বলে, তার পরিবার নাকি আমার মত এতিম মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিবে না। তাছাড়া শোভন নাকি আমার সাথে এতদিন টাইমপাস করেছে, আমাকে ভালবাসে না।
আমি এসব শুনে খুব কষ্ট পাই। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। শোভন আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ
করে দেয়। (রিমি)
.
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে রিমি থামলো।
আমি ভ্রু-কুঁচকে বললাম,
.
-- তাহলে এজন্যই তুই আত্মহত্যা করতে
চেয়েছিলি.? (আমি)
.
-- হুমম, আমি শোভন কে খুব ভালবাসি.!
ওকে ছাড়া বাঁচবো না তাই এসব করেছি। (রিমি)
.
আমি মুখ টিপে সামান্য হাসলাম। তরীর কথায়
তাহলে সত্যি হলো। প্রেমঘটিত সমস্যার কারণেই
রিমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল।
সত্যি বলতে, রিমির এসব ছেলেমানুষি দেখে বড্ড
হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসতে পারছি না। এমন সিচুয়েশনে হাসা ঠিক হবে না।
.
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে রিমির দিকে তাকালাম। রিমি নিঃশব্দে মাথা নিচু করে কাঁদছে। কিছক্ষণ কাঁদার
পর নাক টেনে বলল,
.
-- আমি কি আত্মহত্যা করে ভুল কিছু করেছি.?
আমার মরে যাওয়াই উচিত ছিল। আমাকে বাঁচালি
কেন.? (রিমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
রিমির কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকালাম।
প্রচন্ড রাগ উঠলো আমার। রিমি বলে কি.!
মরে যাওয়াই ভাল ছিল মানে.? আমি ঠাস করে
রিমির গালে চড় মারলাম। চড় খেয়ে রিমি আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
.
চলবে.... ?????
===================================
ডেঞ্জারাস মামাতো বোন (পার্ট-23)romantic love story
.
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে রিমির দিকে তাকালাম। রিমি নিঃশব্দে মাথা নিচু করে কাঁদছে। কিছক্ষণ কাঁদার
পর নাক টেনে বলল,
.
-- আমি কি আত্মহত্যা করে ভুল কিছু করেছি.?
আমার মরে যাওয়াই উচিত ছিল। আমাকে বাঁচালি
কেন.? (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকালাম।
প্রচন্ড রাগ উঠলো আমার। রিমি বলে কি.!
মরে যাওয়াই ভাল ছিল মানে.? আমি ঠাস করে
রিমির গালে চড় মারলাম। চড় খেয়ে রিমি আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
.
আমি রিমির গাল দু'টো শক্ত করে চেপে ধরে রিমির
মুখটা কাছে নিয়ে আসলাম। কড়া গলায় বললাম,
.
-- তুই মরে গেলে আমরা মনে হয় খুব ভালো
থাকতাম, তাই না.? কোন ধারণা আছে তোর, আমরা
সবাই তোকে কত ভালবাসি.!
কিন্তু তুই আমাদের সবার এত ভালবাসার বিনিময়ে সবাইকে কষ্ট দিয়ে মূর্খের মত সুসাইড করতে গিয়েছিলি। মাথামোটা একটা.! (আমি)
.
কথাগুলো বলে রিমিকে ছেড়ে দিলাম। রিমির থেকে
কিছুটা দূরে সরে বসলাম। রিমি আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। আমি কিছু সময় চুপ থেকে নরম স্বরে বললাম,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- মামি যখন মারা যায় তখন তোর ঠিকমত বোঝার
বয়স ও হয় নি। খুব কান্না করছিলি তুই। মা তোর কান্না দেখে সবার অমতে তোকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। আদর, যত্ন, ভালবাসা দিয়ে ছোট থেকে এত বড় করে। মা তোকে এত পরিমাণে ভালবাসে যে আমার-ই মাঝে মাঝে হিংসে হয়। জানিস, মা তোকে আমার চেয়েও কয়েকগুন বেশি ভালবাসে.! অথচ তুই আমার মা কে কাঁদালি, কষ্ট দিলি। তোর জন্য মা সারারাত চোখের পাতা এক করে নি। বারবার আল্লাহ'র কাছে ফরিয়াদ করে জানিয়েছে, তুই যাতে সুস্থ হয়ে যাস। সত্যি বলতে, তোর মত স্বার্থপর মানুষ খুব কমই আছে যারা ভালবাসার মূল্য দিতে জানে না। মাত্র ২ মাসের ভালবাসার জন্য তুই সুসাইড করতে গিয়েছিলি কথাটা ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে। এত বোকা কেন তুই.? আমরা যে তোকে এত বছর ধরে ভালবেসে আসছি সেটার কি কোন মূল্য নেই.? সব ছেড়ে মহারাণী প্রেমে শহীদ হতে গেছে। (আমি)
.
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আমি রিমির দিকে তাকালাম। রিমি মাথা নিচু করে ঠোঁট বাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অন্যদিকে তাকালাম। রিমির মৃদু স্বরে কান্নার আওয়াজ আমার কানে এসে লাগছে। সত্যি বলতে, আমার এখন সত্যি সত্যি রিমিকে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে। এত বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে এখন ন্যাকা কান্না জুড়ে বসেছে। মেজাজটাই খারাপ করে দিয়েছে।
.
আমি রিমিকে আরো কিছু বলতে যাব তখনি আচমকা রিমি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমার পিঠে মুখ ঠেকিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমি রিমিকে টেনে পিছন থেকে সামনে নিয়ে এলাম। রিমি আমার বুকে মুখ গুজে দিল।
.
প্রচুর পরিমাণে কান্না করছে রিমি। রিমির চোখের আর নাকের পানিতে আমার শার্ট ভিজে একাকার। আমি বিরক্ত হলাম খুব। রিমি কে আমার থেকে ছাড়াতে গিয়েও ছাড়াতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে ধমক দিয়ে বললাম,
.
-- এসব ঢংয়ের কান্না বন্ধ কর, রিমি। মেজাজ কিন্তু খারাপ আছে। ছাড় আমাকে.! (আমি)
.
রিমি এবার আরো শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার বুকে নাক, মুখ ঘষতে লাগলো। ধমক খেয়ে রিমির কান্নার বেগ কিছুটা কমে গেছে। এখন শুধু হেঁচকি দিচ্ছে আর নাক টানছে। আমি কেন জানি রিমির উপর আর জোড়াজুড়ি করতে পারলাম না। রাগটাও ধরে রাখতে পারছি না। রিমি জড়িয়ে ধরাতে আমার রাগী, অশান্ত মনটা ধীরে ধীরে মোমের মত গলে যাচ্ছে। মনের অজান্তেই আমি রিমির মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। রিমি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো। নাক টেনে কান্নাভেজা গলায় বলল,
.
-- আমাকে ক্ষমা দে, শাহিন। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কক্ষনো এমনটা করবো না। প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করে দে.! (রিমি)
.
-- তুই ছোট বাচ্চা না যে ভুল করার পর বারবার ক্ষমা করে দিবো। যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি হয়েছে তোর। কিন্তু তারপরও মূর্খের মত কাজ করিস। (আমি)
.
রিমি আমার বুক থেকে মুখ তুলে দুই হাত দিয়ে আলতো করে আমার গাল দু'টো চেপে ধরলো। শান্ত চোখে শীতল গলায় বলল,
.
-- এবারের মত ক্ষমা করে দে, প্লিজ.! আর কক্ষনো তোদের কষ্ট দিবো না। তুই যদি আমাকে ভালবেসে থাকিস তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবি। (রিমি)
.
রিমি এমনভাবে কথাটা বলল বলল যে, ওর উপর থাকা রাগটুকু ভ্যানিং হয়ে গেল। তাছাড়া রিমির মত মিষ্টি মেয়ের উপর বেশিক্ষণ রেগে থাকাও যায় না। আমি রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
.
-- ঠিক আছে, এবারের মত ক্ষমা করে দিলাম। পরের বার যদি এমন কিছু করিস বা করার চেষ্টা করিস তাহলে মেরে চামড়া ছাড়িয়ে নিবো.! (আমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
রিমি আমাকে আবার জড়িয়ে ধরলো। আমার গলায় চুমু দিয়ে হাসিমুখে বলল,
.
-- আমি জানতাম তুই আমাকে ক্ষমা করে দিবি। তুই খুব ভালো, উম্মাহ্.! (রিমি)
.
রিমি আমার গালে চুমু দিল। আমি বিরক্ত হলাম খুব। চোখ পাকিয়ে বললাম,
.
-- এসব কারণেই তোর বয়ফ্রেন্ড তোকে ছেড়ে গেছে। তোর ক্যারেক্টারের ঠিক নেই। সামনে যাকে পাস তাকেই জড়িয়ে ধরে কিস করিস.! (আমি)
.
-- আমি তো শুধু তোকেই জড়িয়ে ধরি আর
মাঝে-মর্ধ্যে ২-১ টা কিস করি। (রিমি)
.
-- জড়িয়ে ধরবি কেন.? আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড
লাগি.? (রেগে)
.
রিমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিল। ঝাড়ি দিয়ে বলল,
.
-- যা... আর তোকে জড়িয়ে ধরবো না। তোকে জড়িয়ে না ধরলে আমি মরে যাবো না, হু। (রিমি)
.
কথাটা বলে রিমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সাপের মত ফোসফোস শব্দ করে রাগতে লাগলো সে। আমি সামান্য হেসে রিমি কে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম। রিমি ঝড়ের বেগে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
.
-- এখন আবার আমাকে জড়িয়ে ধরিস কেন.? তোর হবু বউ তরী কে জড়িয়ে ধরতে পারিস না.? নাকি তরী জড়িয়ে ধরতে দেয় না.? (রিমি)
.
আমি রিমির কথা গা'য়ে মাখলাম না। কথায় কথা বাড়বে। তারপর শুরু হবে ঝগড়া। আর এখন ঝগড়া করার বিন্দুমাত্র মনমানসিকতা নেই। এমনিতেই খুব ক্লান্ত আমি। সারারাত ঘুমাতে পারি নি। আমি চুপ থাকলাম খানিকক্ষণ। রিমি ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- কথা বলছিস না কেন.? তরী তোকে জড়িয়ে ধরতে
দেয় না.? (রিমি)
.
রিমির প্রশ্নের জবাব দিলাম না। উল্টো রিমির লম্বা চুলের একগোছা টান দিয়ে বললাম,
.
-- আমার কথা বাদ দে। তোর বয়ফ্রেন্ডের কি যেন নাম বললি.? ও হ্যা মনে পড়েছে। শোভনের ফোন নাম্বার আর বাড়ির এ্যাড্রেসটা দে তো। (আমি)
.
রিমি ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে তাকালো। চোখে মুখে ভয় এবং সংশয়। কিছু একটা গোপন করতে চাইছে রিমি। একটু দম নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় রিমি বলল,
.
-- শোভনের নাম্বার আর এ্যাড্রেস নিয়ে কি করবি তুই.? (রিমি)
.
-- ওর বারোটা বাঁজাবো। যার জন্য তোর এমন অবস্থা হয়েছে তাকে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে দিতে পারি না। শালার এমন অবস্থা করবো যে সারাজীবন তোর পা'য়ের নিচে পরে থাকবে। কুকুরের মত লেজ নাড়িয়ে তোর পিছে ঘুরঘুর করবে। (আমি)
.
-- থাক, ওসব করতে হবে না। যা হবার তা হয়ে
গেছে। (রিমি)
.
-- কি বলিস, এত সহজে ছেড়ে দিবো.? (অবাক হয়ে)
.
-- তাহলে কি করতে চাস বল.? জোর করে শোভনের সাথে আমার বিয়ে দিবি.? (রিমি)
.
-- হ্যাঁ, দরকার হলে তাই করবো। তোকে কষ্ট দিবে আর আমি সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবো তা হবে না। (আমি)
.
রিমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আমার কাছে এসে আলতো করে হাত ধরে শান্ত গলায় বলল,
.
-- শোভন আমাকে ভালবাসে না, শাহিন। এতদিন আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করেছে। শুনেছি, কয়েক দিন পর শোভন বিয়ে করবে। তাছাড়া শোভনের জন্য আমার মনে আর কোন জায়গা নেই। তুই আর এই বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি করিস না। আমি শোভন কে চিরদিনের মত ভুলে যাবো। যে আমাকে ধোকা দিয়েছে তাকে ভুলে যাওয়াই ভাল। (রিমি)
.
-- যাক দেরি করে হলেও নিজের ভুলটা বুঝেছিস।
শোন, চেহেরা দেখে ভালবাসলে পরিণতি এমন-ই হবে। শোভন দেখতে নিশ্চয় সুন্দর তাই তার প্রেমে পরেছিলি। ফলাফল সুন্দর করে ছ্যাকা খেলি। (আমি)
.
রিমি কিছু বলল না। মুখ ভার করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি রিমির এমন হুতুম পেঁচার মত চেহেরা দেখে বেশ মজা পেলাম। রিমি কে খোঁচা দিয়ে বললাম,
.
-- খুব তো বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে নাচানাচি করছিলি।
এখন কি হলো.? (আমি)
.
-- আমার ব্রেকআপ হওয়াতে তুই মনে হয় খুশি
হয়েছিস, তাই না.? (রেগে) ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- শুধু খুশি না অন্নেককক খুশি হয়েছি। সেই সাথে আনন্দ লাগছে খুব। তোর একটু শিক্ষার দরকার ছিল। সবসময় বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে এটা-ওটা, হেন-তেন, যেই-সেই, হাবিজাবি বলে বেরাতি আর বস্তা বস্তা প্রসংশা করতি। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হতো, পুরো দুনিয়ায় তোর-ই শুধু বয়ফ্রেন্ড আছে। এখন সেসব কোথায় গেল.? আর এক হিসেবে শোভন ঠিকই করেছে। তোর মত পেন্তীকে বিয়ে করলে শোভনের জীবনটা তেজপাতা হয়ে যেত। (আমি)
.
রিমি চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালো। প্রচন্ড রেগে গেছে সে। আমি রিমির রাগটাকে আরো বাড়ানোর জন্য বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে খ্যাক্ খ্যাক্ করে হাসতে লাগলাম। রিমি সত্যি সত্যি আরো রেগে গেল। চোখ-মুখ অগ্নিবর্ণ ধারণ করে আমার দিকে তাকালো। আমি রিমির এমন রূপ দেখে খুব মজা পেলাম। কিন্তু মজাটা বেশিক্ষণ টিকলো না। রিমি হটাৎ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে শুইয়ে দিল। তারপর আমার বুকের উপর বসে সর্বশক্তি দিয়ে আমার গলা টিপে ধরলো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।
.
চলবে..... ??????
0 Comments