.
আমি বসে বসে নানা রকম কথা ভাবতে লাগলাম। যত সময় যাচ্ছে টেনশন ততই বাড়ছে। প্রায় ১ ঘন্টা পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটর থেকে বের হলেন। রিমির অবস্থা এখন কেমন সেটা জানার জন্য আমি দৌঁড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। আমার পিছে পিছে মা-বাবাও এলো। আমি হন্তদন্ত হয়ে ডাক্তারকে বললাম,
.
-- রিমি এখন কেমন আছে, ডাক্তার.?
সে ঠিক আছে তো.? (আমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
ডাক্তার কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর যা বললেন সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও
প্রস্তুত ছিলাম না। আমার শরীর অবশ হয়ে গেল ডাক্তারের কথা শুনে। ডাক্তার বললেন,
.
-- মেয়েটার অবস্থা বেশি ভালো না। শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি রক্ত দিতে হবে। আমরা ইতিমর্ধ্যে ১ ব্যাগ রক্ত দিয়েছি কিন্তু আরো ২ ব্যাগ O+ রক্ত লাগবে। আপনারা যেভাবেই হোক ২ ব্যাগ O+ রক্তের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না। (ডাক্তার)
.
ডাক্তারের কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ.!
আমার শরীর কাঁপতে লাগলো। আমি ডাক্তারের হাত
ধরে কান্নামাখা গলায় বললাম,
.
-- প্লিজ, ডাক্তার রিমিকে বাঁচান। ওর কিছু হয়ে গেলে
আমি মরে যাব। (আমি)
.
-- স্যরি, রক্ত না পেলে কিছু করা যাবে না। আপনারা দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করুন। বাকিটা আল্লাহ তা'আলার হাতে। আল্লাহ'র উপর ভরসা রাখুন। (ডাক্তার)
.
কথাগুলো বলে ডাক্তার চলে গেলেন। আমার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে গেল। এত রাতে এখন রক্ত কই পাবো.?
.
আমি আমার কাছের কয়েকজন বন্ধুকে ফোন দিলাম
কিন্তু তাদের কাউকেই ফোনে পেলাম না। বিপদের সময় কাউকেই কাছে পাওয়া যায় না। কিছুক্ষণ ট্রাই করার পর আমার বন্ধু রিফাত কে ফোনে পেলাম। ফোন রিসিভ করেই রিফাত ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
.
-- কিরে, এত রাতে ফোন দিয়েছিস
কেন.? (রিফাত)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- দোস্ত, এক্ষুণি ২ ব্যাগ O+ রক্ত লাগবে।
প্লিজ, একটু দেখ কারো রক্ত পাস কি-না। রিমির অবস্থা খুব খারাপ। রক্ত না পেলে রিমিকে বাঁচানো যাবে না। (আমি)
.
-- কেন রিমির কি হয়েছে.? (রিফাত)
.
-- সেসব পরে শুনিস। তোকে যেটা বললাম সেটা কর। প্লিজ, দোস্ত.! (আমি)
.
-- আচ্ছা, আমি দেখছি। একটু অপেক্ষা কর। (রিফাত)
.
রিফাতের কথা শুনে একটু আশার আলো দেখতে
পেলেও মাথা থেকে চিন্তা দূর হলো না।
তাই আমার চেনা জানা সবাইকে ফোন করে রক্তের সন্ধান করলাম কিন্তু কারো কাছে পেলাম না।
.
এদিকে,
রাত প্রায় অনেক হয়ে গেছে। আমি হাসপাতালের করিডোরে পায়চারী করছি। মা-বাবা বেঞ্চে বসে ঝিমাচ্ছে। এর মাঝে রিফাতের ফোন এলো। আমি ফোন রিসিভ করে উচ্ছাসিত গলায় বললাম,
.
-- রক্তের সন্ধান পেলি, দোস্ত.? (আমি)
.
রিফাত গম্ভীর গলায় উত্তর দিল,
.
-- না রে। আমার চেনাজানার মর্ধ্যে কারো রক্তের গ্রুপ
O+ নেই। তুই অন্যকাউকে বলে দেখ। (রিফাত)
.
কথাটা বলে রিফাত ফোন কেটে দিল। আমার মাথায় রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করলো। আমি এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
এদিক,
ডাক্তারও রক্তের জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছেন।
হাতে বেশি সময় নেই।
.
হটাৎ আমার ফোনটা বেঁজে উঠলো। তরী ফোন দিয়েছে। ইচ্ছা না থাকা সত্তেও ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে তরী শুকনো গলায় বলল,
.
-- শাহিন, আমার না খুব টেনশন হচ্ছে। টেনশনে আমি
ঘুমাতে পারছি না।
কালকে সবাই আমাকে পছন্দ করবে তো.?
আচ্ছা, কালকে কোন কালারের শাড়ি পড়বো.? (তরী)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
অন্যান্য সময় হলে তরীর সাথে গল্পের বস্তা খুলে
বসতাম কিন্তু এই মুহূত্বে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।
ইচ্ছা করছে আছাড় মেরে ফোনটা ভেঙে ফেলি।
আমি এদিকে মরতেছি আর তরী কালকে কোন কালারের শাড়ি পড়বে সেটা নিয়ে টেনশন করছে।
আমি কিছু বলছি না দেখে তরী আবার বলল,
.
-- কি হলো কথা বলছো না কেন.? কালকে কোন
কালারের শাড়ি পড়বো.? (তরী)
.
-- পরে বলবো, এখন ভালো লাগছে না। রাখছি। (আমি)
.
আমি ফোন রাখতে গিয়েও রাখলাম না। কি যেন ভেবে
তরীকে বললাম,
.
-- আচ্ছা তরী, তোমার রক্তের গ্রুপ কি.? (আমি)
.
-- O+... কেন.? (তরী)
.
আমি সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমার দেহে যেন
প্রাণ ফিরে এলো। তাগাদা দিয়ে বললাম,
.
-- তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সদর হাসপাতালে
চলে এসো। (আমি)
.
-- কেন কি হয়েছে.? (তরী)
.
-- রিমি হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। এখন সে হাসপাতালে।
২ ব্যাগ O+ রক্ত লাগবে। প্লিজ, তুমি একটু তাড়াতাড়ি এসো। না হলে রিমিকে বাঁচানো যাবে না। (আমি)
.
-- আচ্ছা, আমি আসছি। (তরী)
.
আমি ফোন রেখে তরীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। এরই মর্ধ্যে বড় মামা, মেঝ মামা, ছোট মামা সহ মামীরাও চলে এসেছে। বাবা নিশ্চয় সবাইকে খবর দিয়েছে। রিমির বাবা মানে বড় মামা তো কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। সবার মুখে একটাই কথা, 'রিমি কি কারণে আত্মহত্যা করতে চেয়েছে.?' যার উত্তর আমাদের কারো জানা নেই।
.
আধা ঘন্টা পর তরী হাসপাতালে এলো। তারপর সে রিমিকে রক্ত দিল। তরী রক্ত দেওয়ার কিছু সময় পর ডাক্তার এসে বলল, 'রিমি এখন সুস্থ, কিছুক্ষনেই মর্ধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।'
.
আমাদের সবার চিন্তার অবসান ঘটল। সবার মুখেই প্রশান্তির হাসি ফুটেছে। ইশশ, রিমি যদি সবার এই হাসিমাখা মুখগুলো দেখতো তাহলে হয়তো আত্মহত্যার কথা চিন্তায় করতো না। সবাই কত ভালবাসে রিমিকে.! আমার মা তো রিমিকে আমার চেয়েও বেশি ভালবাসে। ছোট থেকে এত বড় করলো, এত ভালবাসা দিল কিন্তু তার বিনিময়ে রিমি আমার মাকে কাঁদালো। শুধু মাকে না, আমাদের সবাইকে। রিমিকে আমি ছাড়বো না.! মনে মনে বললাম, 'রিমি, আল্লাহ আল্লাহ করে তোর জ্ঞানটা ফিরুক। তারপর তোর আত্মহত্যা করা আমি বের করবো.!'
.
আমি বসে বসে এসব চিন্তা করছিলাম তখন তরী
আমার পাশে এসে বসলো। আমার আঙুলের ফাকে তরীর
সরু আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে শক্ত করে হাত চেপে ধরলো। সকলের অগোচরে আমার কপালে চুমু দিয়ে আদুরে
গলায় বলল,
.
-- চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। (তরী) ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
আমি কিছু বললাম না। চুপ করে বসে রইলাম।
তরী আমার কাধে মাথা রেখে বলল,
.
-- রিমি কেন আত্মহত্যা করতে চেয়েছে
সেটা জানো.? (তরী)
.
-- উহু, জানি না। রিমির জ্ঞান ফিরলেই
জানা যাবে। (আমি)
.
-- হুমম। তবে আমার মনে হয় প্রেম ঘটিত
কোন সমস্যা। (তরী)
.
-- কি করে বুঝলে.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
-- এমনি মনে হলো তাই। আচ্ছা, রিমির কোন
বয়ফ্রেন্ড আছে.? (তরী)
.
-- আমি ঠিক সিওর না। থাকতেও পারে আবার
না থাকতেও পারে। (আমি)
.
-- এটা কেমন কথা.? রিমি তোমার সম্পর্কে এত কিছু
জানে অথচ তুমি রিমির সম্পর্কে কিছুই জানো না.? (তরী)
.
-- আরে রিমির মনের কথা পাওয়া খুব মুশকিল।
সহজে কাউকে বলে না। (আমি)
.
-- ওহ। (তরী)
.
তরী লম্বা হাই তুলে আমার কাধে মাথা রাখলো।
মনে হয় তরীর ঘুম ধরেছে কিন্তু বারবার চোখ ডলে জেগে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তাছাড়া রক্ত দেওয়ার কারণে তরীকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
আমি তরীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
.
-- তুমি এখন বাড়ি চলে যাও, তরী। অনেক রাত
হয়ে গেছে। (আমি)
.
-- রিমির জ্ঞান ফিরুক। ওর সাথে দেখা করে যাবো। (তরী)
.
-- না, তুমি চলে যাও। বাড়ি গিয়ে আরাম করো।
রিমির জ্ঞান ফিরলে তোমাকে জানাবো। (আমি)
.
তরী আর কথা বাড়াল না। সবার থেকে বিদেয় নিয়ে
বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
তরী নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছিল তাই যেতে কোন অসুবিধা হলো না।
.
আমরা সবাই বাকি রাতটুকু হাসপাতালে কাটিয়ে দিলাম। সকালবেলা রিমির জ্ঞান ফিরলো। আমি বাদে সবাই রিমিকে দেখতে গেল। রিমি এখন মোটামোটি সুস্থ.! সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর এদিকে-সেদিক তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছে। রিমির ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, সে মস্ত বড় একটা কাজ করে ফেলেছে এবং গর্ব করে সেটা সবাইকে বলছে। আমি বাইরে থেকে এসব দেখছি।
.
একটু পর সবাই বাইরে এলো। মা আমার কাছে
এসে বলল,
.
-- এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন.? ভিতরে যা।
রিমি তোকে ডাকছে। আর শোন, রিমির সাথে রাগারাগি
করিস না। ভালভাবে কথা বলিস। (মা)
.
আমি কিছু না বলে রিমিকে দেখতে গেলাম।
রিমি চুপ করে বেডে শুয়ে আছে। আমাকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো। একটু হাসার চেষ্টা করলো। আমার রাগে গাঁ জ্বলে উঠলো। এতকিছু হওয়ার পরেও কি সুন্দর ভাবে হাসছে.! আমি রিমির পাশে গিয়ে বসলাম।
রিমি সামান্য হেসে জড়ানো গলায় বলল,
.
-- বাড়ি কখন যাব.? আমার এখানে থাকতে ভালো
লাগছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে।
.
আমি কিছুক্ষণ রিমির দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে
রিমির গলা টিপে ধরলাম। রিমিকে আজ মেরেই ফেলবো। পেন্তীটা কাল রাত থেকে অনেক জ্বালিয়েছে।
রিমি এমনিতেই অসুস্থ ছিল তার উপর গলা টিপে ধরাতে চোখ-মুখ উল্টে দিয়েছে। আমার থেকে ছাড়া পাওয়ার
জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে।
.
চলবে... ?????
0 Comments