.



হটাৎ শাহিনের ঘুম ভেঙে গেল। নিজেকে এই অবস্থায় দেখে শাহিন প্রচন্ড অবাক হল। সে রিমিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। শাহিন বুঝে গেছে রিমি এতক্ষণ তার সাথে কি কি করেছে। শাহিন রাগী লুক নিয়ে কিছু সময় রিমির দিকে তাকিয়ে থেকে কড়া গলায় বলল,
.
-- মাথা ঠিক আছে তোর.? এসব কি করছিলি
আমার সাথে.! (আমি)
.
রিমি বেশ ঘাবড়ে গেল। সাথে ভয় ও পেল খুব।
আমতা আমতা করে বলল,
.
-- আ-সলে আমি জাস্ট মজা করে..... (রিমি)
.
রিমির পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই শাহিন ঠাস করে রিমির গালে চড় বসিয়ে দিল। রিমি হা করে তাকিয়ে রইলো। তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
.
এদিকে,
শাহিন এত পরিমাণে রেগে গেছে যে, রাগে তার শরীর কাঁপছে। কোনদিন স্বপ্নেও ভাবে নি, রিমি এসব করবে। সেটাও আবার তার অজান্তে, অবচেতনে। শাহিন তার রাগকে কোনমতে কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
.
-- সবসময় খালি মজা তাই না.? তোর এসব করতে
লজ্জা করলো না.? (আমি)
.
শাহিনের হাতে চড় খেয়ে রিমি ভয়ে একদম কুকড়ে গেছে। রিমি ভাবতেও পারে নি এমন কিছু ঘটবে। সে শাহিনের থেকে কিছুটা দূরে সরে জড়সড় হয়ে বসল। শাহিন কিছু সময় চুপ থেকে চিৎকার দিয়ে বলল,
.
-- কথা বলছিস না কেন.? কোন সাহসে তুই আমাকে
কিস করলি.? (আমি)
.
শাহিনের চিৎকারে রিমি কেঁপে উঠল। সেই সাথে
ফুঁফিয়ে-ফুঁফিয়ে কান্না শুরু করে দিল।
শাহিন বিরক্ত হয়ে বলল,
.
-- এই কান্না বন্ধ কর, বন্ধ কর বলছি। (আমি)
.
রিমির কান্না বন্ধ হলো না। সে কাঁদছে আর নাক টানছে। কাঁদলে রিমিকে সুন্দর লাগে, ফর্সা গোলগাল মুখটা ঈষৎ লাল বর্ণ ধারণ করে কিন্তু এখন রিমিকে দেখে শাহিনের অসহ্যনীয় বিরক্তি লাগছে। রিমিকে আরো কয়েকটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে শাহিনের কিন্তু সে তা পারছে না। ভিতর থেকে কে যেন তাকে বাধা দিচ্ছে। শাহিন একটু দম নিয়ে বিরস গলায় রিমিকে বলল,
.
-- তোর আর আমার সম্পর্কটা জানার পরও তুই
কোন হিসেবে এমনটা করলি.?
সবসময় রাস্তার মেয়েদের মত ব্যবহার করিস
কেন.? (আমি) ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
শাহিনের বলা কথাটা রিমির কলিজায় এসে
আঘাত করলো.! মনে হচ্ছে, কেউ চাকু দিয়ে রিমির কলিজাটা ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। রিমি রাস্তার মেয়ে.? শাহিন এভাবে বলতে পারলো.? তার মুখে একবারও আটকালো না.? রিমি করুণ চোখে শাহিনের পানে তাকালো। কান্না বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু চোখের কোণে পানি ছলছল করছে। কান্না আসতে চেয়েও আসছে না। বুক ভারি হয়ে গেছে। গলা ধরে এসেছে, কথা বের হচ্ছে না। রিমি কান্নাভেজা গলায় বলল,
.
-- আমি রাস্তার মেয়ে.? (রিমি)
.
-- অবশ্যই। রাস্তার মেয়ে না হলে এমন অসভ্যতামি
জীবনেও করতি না। (আমি)
.
রিমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কান্না চেপে রেখে
অভিমানী গলায় বলল,
.
-- ঠিক-ই বলেছিস। আমি আসলেই রাস্তার মেয়ে।
প্লিজ, কিছু মনে করিস না। আমাকে ক্ষমা করে দে। (রিমি)
.
-- কিছু হলে শুধু এই বা**টাই বলতে শিখেছিস।
জেনে শুনে দোষ করবি আর পরে ক্ষমা চাইবি। (আমি)
.
-- এরকমটা আর হবে না। (করুণ স্বরে)
.
-- ঠিক আছে, ক্ষমা করে দিলাম কিন্তু এর পরও যদি এসব
করিস তাহলে পরিণাম ভালো হবে না বলে দিলাম। (আমি)
.
রিমি আস্তে করে মাথা নাড়ালো। শাহিন আর কিছু না
বলে চলে আসতে লাগল।
সিড়ির কাছে এসে পিছন ফিরে রিমিকে বলল,
.
-- আর যদি এসব অসভ্যতামি করার ইচ্ছে থাকে তাহলে
তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে করিস। আমার তো মনে এসব করেও ফেলেছিস।
বাবাকে বলে শিঘ্রই তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে.!
অনেক খারাপ হয়ে গেছিস তুই। (আমি)
.
শাহিনের কথা শুনে রিমি প্রচন্ড রেগে গেল।
পাশে থাকা জুতাটা শাহিনের দিকে ছুড়ে মেরে বলল, ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- আমার বিয়ে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না, কুত্তা।
তুই নিজেরটা ভাব। দেখ আগে, তোর বিয়ে হয়
কি-না। (রিমি)
.
-- কি মনে হয় আমার বিয়ে হবে না.? (আমি)
.
-- না, হবে না। (রিমি)
.
-- আমিও দেখবো কেমনে বিয়ে না হয়। তোর সামনে
নাচতে নাচতে বিয়ে করতে যাব এবং আমার বাসর ঘর
তোকে দিয়েই সাঁজাবো। (হাসতে হাসতে)
.
-- হুহ, আগে বিয়েটা তো হোক তারপর না হয় বাসর
ঘরের চিন্তা করিস। (রিমি)
.
-- চ্যালেঞ্জ দিচ্ছিস.? (আমি)
.
-- হুমম, দিচ্ছি। (রিমি)
.
-- ওকে, চ্যালেঞ্জ এ্যাকেপ্ট করলাম কিন্তু তুই
হেরে যাবি। (আমি)
.
কথাটা বলে শাহিন হাসতে হাসতে চলে এল।
এদিকে,
শাহিন ছাদ থেকে চলে যাওয়ার পর রিমি কিছুক্ষণ ঝিম মেনে বসে রইল। তারপর সে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছে। শাহিনের বলা কথাগুলো এখনো রিমির কানে বাঁজছে।
.
রিমি শাহিনকে ভালবাসে বলেই এসব করেছে।
শাহিনকে নিজের করে পেতে চেয়েছে। ভালবাসার
মানুষকে কাছে পেতে সবার-ই ইচ্ছা করে।
সবসময় ভালবাসার মানুষটার সাথে থাকতে ইচ্ছা করে। এটাই কি রিমির দোষ.? শাহিনকে ভালবেসে রিমি কি কোন অপরাধ করেছে, যে তাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে।
.
শাহিন কেন বোঝেনা রিমি তাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে.! রিমি এতদিন ভয়ের কারণে শাহিনকে তার ভালবাসার কথা বলতে পারেনি। বললে হয়তো, পরিবারে অশান্তি লেগে যাবে। শাহিনের বাবা কখনোই রিমিকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিবে না। দয়া করে এ বাড়িতে থাকতে দিয়েছে এটাই অনেক। এমনিতেই শাহিনের বাবা রিমিকে একটু কম পছন্দ করে। মুখে সেটা জানান না দিলেও মাঝে মাঝে ব্যবহারে বুঝিয়ে দেয়। এতকিছুর পরেও রিমি শুধু শাহিনের জন্য এ বাড়িতে পড়ে আছে।
.
তাছাড়া রিমি অনেক দেরি করে ফেলেছে। শাহিনকে ভালবাসার কথা বলবে বলবে করে আজও বলতে পারে নি। কথায় আছে না, মেয়েদের বুক ফাটলেও মুখ ফোটে না। রিমি ভেবেছিল, ভালবাসার কথা না বললেও শাহিন বুঝে নিবে কিন্তু সে গুড়েবালি। শাহিন রিমির ভালবাসাকে বন্ধুত্ব ভেবে বসে আছে।
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আর সবচেয়ে বড় কথা, ভালবাসার কথা বললেও শাহিন রিমিকে মেনে নিবে না। উল্টো শাহিন রিমিকে ভুল বুঝবে। সে হয়তো সারাজীবন রিমিকে বোনের চোখেই দেখে যাবে। রিমির কষ্ট এখানেই। শাহিন তার নিখাদ ভালবাসাটা বুঝলো না। অবহেলা করে দূরে ঠেলে দিল।
.
রিমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। হাতের উল্টো পিট দিয়ে চোখের পানি মুছে কান্নামাখা গলায় বলল,
"আমার মত কষ্ট একদিন তোকেও পেতে হবে, শাহিন। আমার চেয়েও অনেক বেশি কাঁদতে হবে তোকে। অনুশোচনায় ভুগতে হবে তোকে। আল্লাহ না করুক সেই দিনটা যেন তোর জীবনে না আসে। তোর কষ্ট আমি সইতে পারবো না। দোয়া করি, তুই যেন সারাজীবন সুখে থাকিস।"
কথাগুলো বলে রিমি কাঁদতে লাগলো। তার কান্না যেন থামছেই না।
.
.
.
দেখতে দেখতে ১ সপ্তাহ কেটে গেল। এই ১ সপ্তাহে
তরীর সাথে সম্পর্কটা আরো গভীর হয়েছে।
আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছি আমরা। খাওয়া আর
ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে পুরোটা সময় আমরা কথা বলে কাটিয়ে দিচ্ছি। বড্ড ভালো লাগে তরীর সাথে কথা বলতে। সময় যেন নিমিষেই কেটে যায়।
.
তবে এই কয়দিনে রিমির সাথে খুব একটা কথা হয়নি।
রিমি কথা বলতে চাইলেও আমি কথা বলিনি, এড়িয়ে গেছি। সেদিনের ছাদের ঘটনার জন্য রিমির উপর থেকে এখনো রাগ কমেনি। ঘটনাটা মনে হলেই রক্ত গরম হয়ে যায়.!
রাতে সবাই মিলে খেতে বসেছি, তখন মা বলল,
.
-- কাল সবাই মিলে তরীদের বাড়িতে যাবো.! (মা)
.
আমি খাওয়া থামিয়ে অবাক গলায় মা কে বললাম,
.
-- তরীদের বাড়ি গিয়ে কি করবে, মা.? (আমি)
.
-- তোদের বিয়ের পাকা কথা বলতে যাবো। তরীকে বিয়ে
করতে তোর কোন আপত্তি নেই তো.?
.
মা'র কথা শুনে একটু লজ্জা পেলাম। মনে মনে খুশি ও
হলাম প্রচুর.! আসলে বিয়ের কথা শুনলে সবাই লজ্জা পায়। এ ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে কোন ফ্যাক্ট না।
আমি মিনমিনে স্বরে বললাম,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- আমার কোন আপত্তি নেই। তোমরা যা বলবে
সেটাই হবে। (আমি)
.
-- আম্মু, তোমরা একটু বেশি-ই তাড়াহুরো করছো।
বিয়েটা ক'দিন পর দিলে কি সমস্যা.? (রিমি)
.
-- শুভ কাজে দেরি করতে নেই। মেয়ে ভালো তাই তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাচ্ছি। (মা)
.
-- ঠিক বলেছো। আমারও আর একা একা ঘুমাতে
ইচ্ছা করে না। বউ থাকলে তাকে একটু আদর.... (আমি)
.
কথাটা বলতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম। কি বললাম এটা.! মা'র দিকে আড় চোখে চেয়ে দেখি, মা মুখ টিপে হাসছে আর রিমি ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার খুব লজ্জা লাগলো। আসলে তরীকে বিয়ে করার জন্য এতটাই এক্সসাইটেড হয়ে আছি, যে মুখে যা আসছে তাই বলে দিচ্ছি। ফলস্বরুপ সবার সামনে লজ্জা পেতে হচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে মাথা নিচু করে ঘরে
চলে আসলাম।
.
খাওয়া শেষ করে শুয়ে থেকে তরীর কথা ভাবছিলাম
তখন দেখি রিমি আমার ঘরে আসলো।
আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। হাসিমুখে রিমিকে বললাম,
.
-- বলেছিলাম না, আমার বিয়ে কেউ আটকাতে
পারবে না। দেখলি তো.?
.
রিমি কিছুক্ষণ চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
.
-- তাহলে সত্যি সত্যি তরীকে বিয়ে করবি, তাই না.? (রিমি)
.
-- অবশ্যই। তরীর মত সুন্দরী মেয়েকে হাতছাড়া করতে
চাই না। (আমি)
.
-- ভালো, কংগ্রাচুলেশনস.! (রিমি)
.
-- ধন্যবাদ। আমার বাসর ঘর সাঁজানোর দায়িত্বটা
তোকে দিলাম। চ্যালেঞ্জের কথাটা ভুলে যাসনি নিশ্চয়। (আমি)
.
রিমি কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে চলে গেল।
রিমির এমন অবস্থা দেখে বড্ড হাসি পেল। আমাকে চ্যালেঞ্জ করে, মেয়ের সাহস কত.!
আমি এসব বাদ দিয়ে তরীকে ফোন দিলাম। সাথে সাথে
তরী ফোন রিসিভ করলো। ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- কি করতেছ, সোনাপাখি.? (আমি)
.
-- তোমার কথা ভাবছিলাম। (তরী)
.
-- কালকে বাড়ির সবাই তোমাদের বাড়িতে যাবে। (আমি)
.
-- কেন.? (তরী)
.
-- আমাদের বিয়ের কথা বলতে.! (আমি)
.
-- সত্যি.? তুমি সত্যি বলছো.? (খুশিতে আত্মহারা হয়ে)
.
-- হুমম। আর কালকে তোমার স্পেশাল মিষ্টিটা
টেস্ট করতে দিও। (আমি)
.
-- সমস্যা নাই, বাড়িতে অনেক মিষ্টি আছে। (তরী)
.
-- আরে এসব মিষ্টি না, সেদিন যে রাস্তায় জড়িয়ে ধরে
গালে দিছিলে সেটা। (আমি)
.
-- যাহ্, দুষ্টু.! ওসব বিয়ের পর। (লজ্জামাখা হাসি দিয়ে)
.
-- অতকিছু বুঝি না, কালকে আমার মিষ্টি লাগবে।
একদম লিপস টু লিপস.! (আমি)
.
-- এহ্, শখ কত.! পাবে না, যাও। (তরী)
.
-- আমি জোর করেই নিব। (আমি)
.
তরী মিষ্টি মিষ্টি হাসতে লাগলো। আমি তরীর সাথে আরো
কিছুক্ষণ কথা বলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
কাল সকাল সকাল তরীদের বাড়িতে যেতে হবে।
অনেক কাজ বাকি।
.
মাঝরাতে হটাৎ মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল।
মা চিৎকার করে আমাকে ডাকছে। আমি হন্তদন্ত হয়ে ঘর
থেকে বের হলাম। চিৎকারটা রিমির ঘর থেকে আসছে। আমি দৌঁড়ে রিমির ঘরে গেলাম।
.
-- কি হয়েছে, মা.? ডাকছো কেন.? (আমি)
.
কথাটা বলতে আমি বিছানার দিকে তাকালাম। রিমি চিৎ হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। তার হাত বেয়ে দরদর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রক্ত দিয়ে পুরো ফ্লোর ভেসে গেছে।
.
চলবে..... ?????


================================


ডেঞ্জারাস মামাতো বোন (পার্ট-20)romantic love story
.
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
মাঝরাতে হটাৎ মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল।
মা চিৎকার করে আমাকে ডাকছে। আমি হন্তদন্ত হয়ে ঘর
থেকে বের হলাম। চিৎকারটা রিমির ঘর থেকে আসছে। আমি দৌঁড়ে রিমির ঘরে গেলাম।
.
-- কি হয়েছে, মা.? ডাকছো কেন.? (আমি)
.
কথাটা বলতে আমি বিছানার দিকে তাকালাম। রিমি চিৎ হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। তার হাত বেয়ে দরদর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রক্ত দিয়ে পুরো ফ্লোর ভেসে গেছে।
.
রিমির এমন অবস্থা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। আমি দৌঁড়ে রিমির কাছে গেলাম। রিমিকে টেনে তুলে বুকে জড়িয়ে নিলাম। চিৎকার করে বললাম,
.
-- রিমি.? এই রিমি.? কি হয়েছে তোর.? কথা বল।
মা, রিমির এমন অবস্থা হলো কিভাবে.? (আমি)
.
-- জানি না, বাবা। একটু আগে আমি বাইরে বের হয়েছিলাম, তখন দেখি রিমির ঘরের দরজা খোলা। ঘরে উঁকি মেরে দেখি রিমির এমন অবস্থা। (কাঁদতে কাঁদতে)
.
আমি এবার আরো জোরে চিৎকার করে রিমিকে ডাকতে লাগলাম। রিমির কোন সাড়াশব্দ নেই। হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। রিমির এমন অবস্থা দেখে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। বুকের বা'পাশে প্রচন্ড ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে, আমার কলিজাটা কেউ টান দিয়ে ছিড়ে ফেলেছে।
.
এদিকে,
আমাদের চিৎকার শুনে বাবাও ঘরে চলে এসেছে।
রাগী গলায় বলল,
.
-- তোমরা মাঝরাতে এভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি
করছো কেন.? শান্তিমত একটু ঘুমাতেও দিবে না নাকি.?
কি হয়েছে.? (বাবা)
.
আমি বাবার কথায় কান না দিয়ে রিমিকে কোলে তুলে নিলাম। তারপর রিমিকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এলাম। মা-বাবাও আমার পিছে পিছে এলো। বাবা মনে হয় এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে রিমির কি হয়েছে। তাই কিছু না বলে চুপ করে আছে। মায়ের ও একই অবস্থা। ফ্যালফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে আছে। অতিমাত্রায় অবাক বা হতাশ হলে মানুষ যেমন হয় আমাদেরও সেই অবস্থা হয়েছে।
.
আমি রিমিকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষা করছি। রাত অনেক হওয়ায় রাস্তা একদম ফাকা, কোন গাড়িঘোড়া নেই। বাধ্য হয়ে রিমিকে কোলে নিয়ে দৌঁড়াতে লাগলাম। রিমির নিথর দেহটা দেখে আমার শরীর শীতল হয়ে গেছে। আমার মাথা কাজ করছে না।
তবুও আমি রিমিকে নিয়ে প্রাণপণে ছুটছি। ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রিমিকে বারবার ডাকছি কিন্তু রিমির কোন হুশ নেই। শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় রিমির গাড় দুধে আলতা শরীরটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। একটু নড়াচড়াও করছে না। আমি আল্লাহ আল্লাহ করছি আর দোঁড়াচ্ছি। রিমির কিছু হলে আমি বেঁচে থেকেও মরে যাবো.!
.
বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটা হাসপাতাল আছে ।
১৫ মিনিটের রাস্তা কিন্তু রিমিকে কোলে করে নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগলো। প্রায় ৩০ মিনিটের মত। আমি রিমিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছালাম। হাসপাতাল পুরো ফাকা, একদম শুনশান। এত রাতে হাসপাতাল ফাকা থাকাই স্বাভাবিক। আমি আশেপাশে তাকিয়ে নার্স এবং ডাক্তারকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু কারো দেখা পেলাম না।
.
আমি রিমিকে কোলে নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে দো'তলায় উঠলাম। দো'তলার করিডোরে দু'টো নার্স বসে ঝিমাচ্ছে। আমি চিৎকার করে নার্সদের ডাক দিলাম। তারা দু'জন চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো। তারপর তাড়াহুরো করে আমার কাছে এলো।
.
একজন রিমিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল আর অন্যজন ডাক্তারকে খবর দিতে গেল। মিনিট দু'য়েক পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকল। এর মাঝে মা-বাবাও চলে এসেছে। আমাদের সবার চোখে-মুখেই চিন্তার ছাপ।
.
আমি বেঞ্চে বসে দু'হাত তুলে আল্লাহ কে ডাকছি। রিমির প্রাণ বিধাতার কাছে ভিক্ষা চাইছি। রিমির যদি কিছু হয় তাহলে আমার কি হবে.? টেনশনে আমার শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। চোখ দু'টো ঝাপসা হয়ে আসছে। নিজেকে থামাতে পারলেও চোখের পানিকে থামাতে পারছি না। বুকের বা'পাশে প্রচন্ড ব্যথা করছে। এমন মনে হচ্ছে, আমার সবচাইতে মুল্যবান জিনিসটা আমার থেকে
হারিয়ে যাবে।
.
একসময় আমি হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। নিজেকে কোনমতেই থামাতে পারছি না। মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। মা'র চোখেও পানি। বাবা আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলছে না, শুধু আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মা আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
.
-- কাঁদিস না, বাবা। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আল্লাহ'র উপর ভরসা রাখ। (মা)
.
আমি মা কে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চার মত ফুঁফিয়ে-ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
.
-- রিমি এমনটা কেন করলো, মা.? আমরা কি
রিমিকে কোন কষ্ট দিয়েছি.?
রিমিকে তো আমরা সবাই ভালবাসি তবুও রিমি
এমনটা কেন করলো.? (আমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- আমিও জানি না। আজ কয়েকদিন ধরে
দেখছিলাম, রিমি সবসময় মনমরা হয়ে থাকে।
আমার সাথে ঠিক করে কথা বলে না। আমি এসবে পাত্তা দেয় নি। ভেবেছি, রিমির এমনি হয়তো মন খারাপ। কিন্তু কে জানতো রিমি এমন একটা কান্ড ঘটাবে। যদি আমি একটুও টের পেতাম তাহলে রিমিকে কখনোই....
.
মা আর কিছু বলতে পারলো না। আমাকে জড়িয়ে
ধরে কাঁদতে লাগলো। মা'র বলা কথাগুলো সত্য।
আজ কয়েকদিন ধরে আমিও দেখছিলাম রিমির মন খারাপ। আমার সাথে একদম কম কথা বলতো।
যে মেয়েটা একদিন আমার সাথে ঝগড়া না করলে তার পেটের ভাত হজম হয় না সেই মেয়েটা একদম শান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কে জানতো রিমি বাইরে থেকে শান্ত থাকলেও তার ভিতরে অশান্তির ঝড় বইছিল।
তা না হলে আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজ কেউ জীবনেও
করবে না।
.
কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, রিমি এমনটা
কেন করলো.? কিসের এত কষ্ট তার.? নিশ্চয় রিমিকে কেউ কষ্ট দিয়েছে। না হলে রিমির মত মেয়ে এমন কাজ করবে না। যেভাবেই হোক, আমাকে রিমির আত্মহত্যার কারণটা খুজে বের করতেই হবে।
.
আমি বসে বসে এসব ভাবতে লাগলাম। যত সময় যাচ্ছে টেনশন ততই বাড়ছে। প্রায় ১ ঘন্টা পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটর থেকে বের হলেন। রিমির অবস্থা এখন কেমন সেটা জানার জন্য আমি দৌঁড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। আমার পিছে পিছে মা-বাবাও এলো। আমি হন্তদন্ত হয়ে বিরস গলায় বললাম,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- রিমি এখন কেমন আছে, ডাক্তার.?
সে ঠিক আছে তো.? (আমি)
.
ডাক্তার কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর যা বললেন তা শোনার জন্য আমি মোটেও
প্রস্তুত ছিলাম না।
আমার শরীর অবশ হয়ে গেল ডাক্তারের কথা শুনে।
.
চলবে.... ?????