.
.
রিমি ফোনটা নেওয়ার জন্য আমার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল। আমিও নাছোড় বান্দা, কিছুতেও ফোন দিবো না। আজ রিমির বয়ফ্রেন্ড কে দেখেই ছাড়বো। আমি জোর গলায় বললাম,
.
-- আগে দুলাভাইকে দেখবো তারপর ফোন দিবো। (আমি) ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- কিসের দুলাভাই.? তুই ফোন দে... (রিমি)
.
আমি রিমির কথায় কান না দিয়ে ফোনের লক খুললাম। লক খুলতেই যা দেখলাম তাতে আমার চোখ ছানাবড়া
হয়ে গেল। আমি হা করে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
আমি একবার রিমির দিকে তাকাচ্ছি আবার একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছি। ফোনের স্কিনে আমার ছবিটা জলজল করে ভাসছে। আমি খুব একটা পাত্তা দিলাম না। রিমির ফোনে আমার ছবি থাকা স্বাবাভিক। আমার ফোনেও রিমির অনেকগুলো ছবি আছে।
.
আমি রিমির ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে ওর বয়ফ্রেন্ডের
ছবি খুজতে লাগলাম কিন্তু গ্যালারিতে গিয়ে আমি আরো একধাপ অবাক হলাম।
রিমির ফোনে কম করে হলেও হাজার দু'য়েক ছবি আছে.! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সবগুলো ছবি-ই আমার। আমার ছবি বাদে পরিবারের কারো ছবি রিমির
ফোনে নেই।
.
রিমি এসব ছবি কখন তুলেছে আল্লাহ জানে। তবে ছবিগুলো দেখে যা বুঝলাম, বেশির ভাগ ছবি আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন তুলেছে। রিমির এসব পাগলামি দেখে কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমি এক প্রকার রেগেই বললাম,
.
-- আমার এতগুলো ছবি তুলেছিস কেন.? (আমি)
.
রিমি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল,
.
-- তোর এই বান্দর মার্কা চেহেরা দেখলে আমার মন আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়।
যখন মন খারাপ থাকে তখন তোর ছবি দেখি।
সেজন্যই তোর ছবিগুলো তুলেছি। (রিমি)
.
রিমির কথায় প্রচন্ড রাগ উঠলো। আমি রিমির চুলের
মুঠি টেনে বললাম,
.
-- আমি বান্দর হলে তরীর মত সুন্দরী মেয়ে জীবনেও
আমাকে পছন্দ করতো না।
আমি স্মার্ট এবং হ্যান্ডসাম বলেই তরী আমাকে
পছন্দ করেছে। (ভাব নিয়ে)
.
রিমি আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দুষ্টু হাসি
দিয়ে বলল, ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- এহ্, তুই হ্যান্ডসাম.? তরী কানা বলেই তোর মত
বান্দরকে পছন্দ করেছে।
নয়তো কোন মেয়ে তোর দিকে ফিরেও তাকাতো না। (রিমি)
.
-- রিমি, ভালো হচ্ছে না কিন্তু.! (চোখ পাকিয়ে)
.
রিমি মুখ ভ্যাটকালো। আমার বিরক্ত লাগলো খুব। মেয়েদের এই মুখ ভ্যাটকানো অভ্যাসটা আমার বড্ড খারাপ লাগে। আমি রিমির দিকে ফোনটা ছুড়ে
মেরে বললাম,
.
-- তোর বয়ফ্রেন্ডের ছবি কই.? ফোনে পেলাম
না তো। (আমি)
.
-- আমার বয়ফ্রেন্ডের কোন ছবি আমার
ফোনে নেই। (রিমি)
.
-- কেমন মেয়ে তুই.! সাধারণত মেয়েদের ফোনে তাদের
বয়ফ্রেন্ডের ছবি থাকবেই আর তোর ফোনে নেই.? (আমি)
.
রিমি আঙুল দিয়ে নাক ঘষে ভাব নিয়ে বলল,
.
-- না, নেই। আসলে তোকে আমার বয়ফ্রেন্ড কে
দেখাতে চাই না। আমার বয়ফ্রেন্ড দেখতে রাজকুমারের
মত.! তুই দেখলে জ্বলেপুড়ে মারা যাবি। (রিমি)
.
-- পাগল নাকি.? তোর বয়ফ্রেন্ড কে দেখে আমি
জ্বলেপুড়ে মরবো কেন.? আমি জাস্ট দেখতাম তোর
বয়ফ্রেন্ড কেমন। এর বেশি কিছু না।
আর শোন, বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে লাফালাফি একটু কম কর।
নয়তো দেখিস, তোর মত পেন্তীকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। (আমি)
.
-- আমার বয়ফ্রেন্ড তোর মত লুচ্চা না।
আমাকে খুব ভালবাসে.! (রিমি)
.
-- তাহলে তো ভালই। কিন্তু তারপরও একটু নজরে
নজরে রাখিস। আর হ্যা, তোর ফোন থেকে আমার
ছবিগুলো ডিলিট করে দিস। (আমি)
.
-- কেন.? ডিলিট করবো কেন.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
-- তোর বয়ফ্রেন্ড আমার এতগুলো ছবি দেখলে
সন্দেহ করতে পারে। (আমি)
.
-- সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমার ফোনে কার
ছবি রাখবো সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। (রিমি)
.
-- ওকে, তোর ইচ্ছা। (আমি)
.
কথাটা বলে আমি চলে আসতে যাবো হটাৎ রিমি
আমার হাত টেনে ধরলো।
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- কোথায় যাচ্ছিস.? (রিমি)
.
-- ঘরে। খুব ঘুম ধরেছে। (আমি)
.
রিমি আমাকে টেনে তার সামনে নিয়ে আসলো।
আদুরে গলায় বলল,
.
-- থাক না আরেকটু। গল্প করি। আচ্ছা, চল ছাদে
যাই। (রিমি)
.
-- এত রাতে ছাদে গিয়ে কি করবো.? (আমি)
.
-- গল্প করবো। আমার মনটাও একটু ভালো হবে। (রিমি)
.
-- ধুরর, এখন গল্প করার মুড নেই। খুব ক্লান্ত আমি, প্রচন্ড
ঘুম ধরেছে। এতক্ষণ তোর ভাবির সাথে কথা বললাম। (আমি)
.
-- আরে, চল তো। (রিমি)
.
রিমি আমার কথা উপেক্ষা করে জোর করে আমাকে
ছাদে নিয়ে গেল। আমিও বাধ্য হয়ে গেলাম।
রিমি যেটা বলবে সেটাই করবে। ওর জেদের সাথে
কেউ পারবে না।
.
ছাদে গিয়ে আমি আর রিমি ছাদের ঠিক মাঝ বরাবর
বসলাম। বাম পাশে ছাদের রেলিং ঘেষে অনেকগুলো ফুলের গাছ লাগানো। রিমি এসব ফুলের গাছ লাগিয়েছে। যদিও আমি ফুল তেমন একটা পছন্দ করি না কিন্তু আজ ফুলের গাছগুলো আর সদ্য ফোটা ফুলগুলো কে বেশ আকর্ষনীয় লাগছে।
.
দূর আকাশ থেকে চাঁদ মামা মৃদু আলো ছড়াচ্ছে। সবকিছু আবছা ভাবে বোঝা যাচ্ছে। দূর থেকে ঝিঁঝিঁ পোকা আর কুকুরের হালকা ডাক শোনা যাচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে বাতাস। বেশ জোরেই বাতাস বইছে। ডান পাশে থাকা দোলনাটা বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে মৃদুভাবে দুলছে আর ক্যার ক্যার করে বিশ্রী শব্দ করছে।
.
অন্যকোনো সময় হলে পরিবেশটা অনেক উপভোগ করতাম। বিশেষ করে তরী যদি পাশে থাকতো।
কিন্তু আজ এত সুন্দর পরিবেশটাকেও বিরক্ত লাগছে। আমি লম্বা হাই তুলে বললাম,
.
-- ছাদে এসে কি লাভটা হলো শুনি.? (আমি)
.
রিমি আমার পেটে গুতো দিয়ে বলল,
.
-- কত সুন্দর একটা পরিবেশ.! তোর ভালো লাগছে না.? (রিমি)
.
-- নাহ্, বিরক্ত লাগছে। (আমি)
.
-- কেন.? (কপাল কুঁচকে)
.
-- আমার খুব ঘুম ধরেছে, আমি ঘরে যাব। (আমি)
.
-- ঘরে গেলে তোর ঠ্যাং ভেঙে দিবো। (চোখ গরম করে)
.
-- এখানে থেকে কোন বাল করবো শুনি.? (রেগে)
.
-- আমার সাথে গল্প কর নয়তো চুপচাপ বসে থাক। (রিমি)
.
রিমির কথামত আমি বসে বসে ঝিমাতে লাগলাম। ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
রিমি আমার কাধে মাথা রেখে গুনগুন করে রোমান্টিক
গান গাইছে। অন্য সময় হলে আমিও রিমির গানের
সাথে সুর মিলাতাম কিন্তু আজ বিরক্তের চরম সীমায় পৌছে গেছি।
কিছুক্ষণ পর রিমি আমার হাতে চিমটি কাটলো।
আমি বিরক্ত হয়ে চোখ টেনে রিমির দিকে তাকালাম।
.
-- কি হয়েছে.? (আমি)
.
-- খুব ঘুম ধরেছে.? (রিমি)
.
-- এতক্ষণ ধরে কি আমি উগান্ডার ভাষায় কথা বললাম.? সেই কখন ধরে বলছি, আমার ঘুম পেয়েছে। (আমি)
.
-- ওকে, তুই আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমা।
আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। (রিমি)
.
আমি অবাক হয়ে রিমির দিকে তাকালাম। সে শান্ত চোখে
আমার পানে চেয়ে আছে। আমি চোখ গরম করে বললাম,
.
-- তুই কি আমার গার্লফ্রেন্ড নাকি যে তোর কোলে
মাথা রেখে ঘুমাবো। (আমি)
.
-- কেন গার্লফ্রেন্ড না হলে কি কোলে মাথা রেখে
ঘুমানো যাবে না.?
নাকি আমাকে নিয়ে তোর কোনো কু মতলব
আছে.? (রিমি)
.
-- What.? মাথা খারাপ তোর.? কি বলিস এসব.! (আমি)
.
-- ঠিক-ই বলছি। না হলে আমার কোলে মাথা রাখতে সমস্যা কিসের.? আচ্ছা, আমাকে নিয়ে তুই অন্যকিছু
ফিল করিস না তো.? (সামান্য হেসে)
.
-- লাগাবো কানের নিচে চড়.! তোর জন্য আমার চুল পরিমাণ ফিলিংস ও নেই। আমি আগেও বলেছি এখন ও বলছি, এসব উল্টাপাল্টা কথা আমার সামনে বলবি না। আমি এসব দুষ্টুমি পছন্দ করি না। (প্রচন্ড রেগে)
.
আমার কথা শুনে রিমির মুখটা চুপসে গেল। আবছা চাঁদের
আলোয় আমি তা স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
কিন্তু তবুও রিমি হাসতে হাসতে বলল,
.
-- তুই আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমালেই আমি বিশ্বাস
করবো, আমার জন্য তোর কোনো ফিলিংস নেই। (রিমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
রিমি এমনভাবে খোঁচা মেরে কথাটা বলল যে, এখন যদি তার কোলে মাথা না রাখি তাহলে অন্যকিছু ভেবে বসবে। কিন্তু রিমির কোলে মাথা মাথা রাখতে আমার কেমন জানি অসস্তি হচ্ছে। আবার না রেখে উপায় ও নেই। আমি এক প্রকার বাধ্য হয়ে রিমির কোলে মাথা রাখলাম।
.
তাছাড়া আমার প্রচন্ড ঘুম ধরেছে। এভাবে বোকার মত বসে থাকার চেয়ে রিমির কোলে মাথা রেখে ঘুমানো অনেক ভালো। কিছুক্ষনেই তো ব্যাপার। একটুপর ফজরের আযান দিবে। তখন না হয় ঘরে চলে যাব। আপাতত রিমির কোলে মাথা রেখে আরাম করি।
.
আমি রিমির কোলে মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছি। মাঝে মাঝে চোখ মেলে রিমির হাস্যজ্জল মুখটা দেখছি। রিমির কোলে মাথা রাখাতে রিমি খুব খুশি হয়েছে। ওর নরম-কোমল হাত দিয়ে আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। আমার এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। রিমির হাতে মনে হয় জাদু আছে। ওর হাতের ছোঁয়াতে আমার সব ক্লান্তি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। নিমিষেই চোখে তন্দ্রা ভাব চলে এসেছে। এক সময় আমি ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম।
.
এদিকে,
রিমি একমনে শাহিনের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রিমি শাহিনকে ডাক দিলো,
.
-- শাহিন.? এই শাহিন.? শুনছিস.?
.
শাহিনের কোন সাড়াশব্দ নেই। রিমি বুঝতে পারলো শাহিন ঘুমিয়ে পড়েছে। রিমি চাঁদের আলোয় শাহিনের ঘুমন্ত চেহেরাটা প্রাণভরে দেখতে লাগলো। এত দেখার পরও রিমির সাধ মিটছে না। রিমি তার নরম হাত দিয়ে শাহিনের পুরো মুখে হাত বুলাতে লাগলো।
.
একটুপর রিমি শাহিনের কপালে চুমু খেল। অজান্তেই রিমির চোখ বেয়ে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।
রিমি কান্না মাখা গলায় বলতে লাগল,
.
"তুই আমাকে এত কষ্ট দিস কেন, শাহিন.? কেন বুঝিস
না আমি তোকে ভালবাসি.! এত ভালবাসি যে তোর জন্য সব করতে রাজি আছি। তোর মুখের মুচকি হাসিটা দেখার জন্য কাউকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করবো না আমি। আর তুই আমার ভালবাসাকে উপেক্ষা করে তরীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। এত বোকা কেন তুই.? আমাকে কি একটু ভালবাসা যায় না.? আমি তোর কাছে বেশি কিছু চাই নি। শুধু চেয়েছি, তোর মুচকি হাসির কারণটা যাতে আমি হই.! আমাকে একটু ভালকাসেক না, দেখবি আমি তোকে ভালবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো.!"
.
কথাগুলো বলে রিমি হু-হু করে কেঁদে উঠলো। তার চোখের
বাঁধ ভেঙে গেছে। চোখ দিয়ে অজস্র জলকণা গড়িয়ে পড়ছে। রিমি শাহিনকে টেনে তুলে বুকে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। করুণ স্বরে বলতে লাগল,
.
"আমাকে আর কষ্ট দিস না, শাহিন। আমি যে আর সইতে পারছি না। তোর পাশে তরীকে দেখে কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমি তোর পাশে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারি না। তুই যদি তরীকে বিয়ে করতে চাস সত্যি বলছি, আমি তোকে খুন করে ফেলব.! তুই শুধু আমার, শুধুই আমার.! প্লিজ, আমাকেও তোর নিজের করে নে।"
.
কথাগুলো বলেই শাহিনের সারা মুখে চুমু দিয়ে
ভরিয়ে দিতে লাগলো রিমি.!
শাহিনের মাথার চুল শক্ত করে আকড়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিল। ঘুমের ঘোরে শাহিন ও সাড়া দিতে লাগলো। রিমির নরম ঠোঁট জোড়া চুষতে লাগলো শাহিন। রিমিও কম না। সে শাহিনের ঠোঁট মৃদুভাবে কামড়াতে লাগলো।
.
হটাৎ শাহিনের ঘুম ভেঙে গেল। নিজেকে এই অবস্থায়
দেখে শাহিন প্রচন্ড অবাক হল। সে রিমিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। শাহিন বুঝে গেছে রিমি এতক্ষণ তার সাথে
কি কি করেছে। শাহিন রাগী লুক নিয়ে কিছু সময় রিমির
দিকে তাকিয়ে থেকে কড়া গলায় বলল,
.
-- মাথা ঠিক আছে তোর.? এসব কি করছিলি
আমার সাথে.! (আমি)
.
রিমি ঘাবড়ে গেল। সাথে ভয় ও পেল খুব। আমতা
আমতা করে বলল,
.
-- আ-সলে আমি জাস্ট মজা করে..... (রিমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
রিমির পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই শাহিন ঠাস
করে রিমির গালে চড় বসিয়ে দিল।
.
চলবে.... ?????
0 Comments