.
আমি তরীর সাথে কথা বলা শেষ করে ছাদ থেকে
নেমে ঘরে ঢুকতে যাবো হটাৎ রিমির ঘরের দিকে
চোখ পড়লো। রিমির ঘরের দরজা খোলা এবং লাইট জ্বলছে। কি ব্যাপার, রিমি এখনো ঘুমায় নি নাকি.?
এত রাত অব্দি জেগে কি করছে.? আমি কৌতুহলবশত
রিমির ঘরের কাছে গেলাম। দরজাটা একটু ফাক করে
ঘরে উঁকি মেরে দেখি, রিমি ফোনে কি যেন দেখছে
আর কান্না করছে.!
.
আমি অবাক হলাম। রিমি কাঁদছে কেন.? কি হয়েছে তার.? আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠল। আমি দরজা ঠেলে হুরমুর করে ঘরে ঢুকলাম। রিমি আমাকে দেখে চমকে উঠলো। হয়তো আমাকে এখনে আশা করে নি।
.
রিমি চটপট চোখের পানি মুছে নিল এবং ফোনটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেলল। তারপর নিজের উশকো-খুশকো চুলগুলো ঠিক করে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। আমি রিমির দিকে তাকালাম। কান্নাকাটি করে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গিয়ে পেন্তীর মত দেখাচ্ছে। না জানি কতক্ষন ধরে কাঁদছে মেয়েটা।
.
আমি কিছুক্ষণ রিমির দিকে তাকিয়ে থেকে তার পাশে গিয়ে বসলাম। রিমি একটু নড়েচড় দূরে সরে গেল।
.
-- কান্না করছিলি কেন.? (আমি)
.
-- তোকে বলতে হবে.? কে তুই.? (রিম)
.
রিমি গম্ভীর গলায় সোজাসাপ্টা উত্তর দিল। বুঝতে পারলাম, রিমি এখনো আমার উপর রেগে আছে। এই মেয়েটার রাগকে কি করবো ভেবে পাই না। সামান্য বিষয় নিয়ে রেগে বোম হয়ে থাকবে। আমি রিমির কাছে চেপে বসে ওর হাত ধরলাম। রিমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। চুপচাপ বসে রইলো। আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম,
.
-- বয়ফ্রেন্ড ছ্যাকা দিছে.? (আমি)
.
রিমি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। দেখে মনে হচ্ছে, চোখ দু'টো অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। কড়া গলায় রিমি জবাব দিল,
.
-- পা'য়ের জুতা জোড়া দেখেছিস.? আলতু ফালতু কথাবার্তা বললে জুতা পিটা করে সোজা করে দিবো। (রিমি)
.
-- এখনো রেগে আছিস আমার উপর.? (আমি)
.
-- সেটাই কি স্বাবাভিক নয়.? (রিমি)
.
-- স্যরি রে.! তখন রাগের মাথায় ওসব বলে ফেলেছি। প্লিজ, কিছু মনে করিস না। (আমি)
.ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
রিমি কিছু না বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। আমি রিমির হাত দু'টো আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরে বললাম,
.
-- প্লিজ বলেক, কান্না করছিলি কেন.? (আমি)
.
-- বলবো না। আমাকে বিরক্ত করিস না তো। আমি তো পেন্তী, আমার কাছে এসেছিস কেন.? (কান্নার সুরে)
.
-- আরে, আমি স্যরি বললাম তো। (আমি)
.
-- থাক, আর আদিক্ষেতা দেখাতে হবে না। তোর হবু বউ তরীর কাছে যা। আমার কাছে কি.? (রিমি)
.
-- এখানে আবার তরীকে টানছিস কেন.? মাঝরাতে ঝগড়া করার ইচ্ছা আছে নাকি.? (আমি)
.
-- হু, আমি শুধু ঝগড়াই করি। আমি তো খারাপ মেয়ে তাই আমার কথা কারো সহ্য হয় না। আমাকে কেউ ভালবাসে না। তোরা সবাই স্বার্থপর.! (রিমি)
.
কথাটা বলেই রিমি ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো। আমি ধমক দিয়ে বললাম,
.
-- এই খবরদার আমার সামনে কাঁদবি না। তুই ভালো করেই জানিস, আমি তোর কান্না সহ্য করতে পারি না। (আমি)
.
রিমি এবার কান্নার গতি আরো বারিয়ে দিল। আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে হু-হু করে কাঁদতে লাগলো। আমি এতক্ষণে বুঝতে পারলাম রিমি কেন কাঁদছে। তাই ওকে আটকালাম না। কাঁদুক কিছুক্ষণ। কাঁদলে মনের মর্ধ্যে জমে থাকা কষ্টের ভার কিছুটা কমবে। আমি রিমির মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। রিমি আমার বুকে মাথা গুজে ফুঁফিয়ে-ফুঁফিয়ে কাঁদছে। কিছুক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদার পর রিমি একটু শান্ত হল। ভাঙা গলায় বলল,
.
-- বাবা-মা'র কথা খুব মনে পড়ছে। তারা কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেল.? একটা বারও আমার কথা ভাবলো না। ভাবলো না, তাদের ছাড়া আমি একা কিভাবে বাঁচবো। আচ্ছা, আমি কি খুব খারাপ.? (রিমি)
.
-- ধ্যাৎ, কে বলছে তুই খারাপ.? তোর মত লক্ষ্মী আর ভালো মেয়ে পৃথিবীতে একটাও নেই। (আমি)
.
-- তাহলে বাবা-মা আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে কেন.? (কাঁদতে কাঁদতে)
.
আমি রিমির চোখের পানি মুঝে সান্তনা
দিয়ে বললাম,
.
-- আল্লাহ তা'আলা হয়তো এমনটাই চেয়েছিল।
তিনি যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই
করেন, বুঝলি.? (আমি)
.
-- আমি এসব বুঝি না রে। মাঝে মাঝে মনে হয়
নিজেকে শেষ করে দিই। (রিমি)
.
-- কানের নিচে ঠাস করে চড় লাগাবো এসব আজেবাজে কথা বললে। আমরা কি মরে গেছি নাকি.? আমরা তোর কেউ না.? (রেগে)
.
-- তোরা নামে মাত্রই আমার আপনজন। আসলে তোরা কেউ-ই আমাকে ভালবাসিস না, আমাকে তোদের পরিবারের বোঝা ভাবিস। এ বাড়ি থেকে বিদেয় করতে পারলেই তোরা বেঁচে যাবি। (রিমি)
.
-- এবার কিন্তু সত্যি সত্যি মাইর খাবি, রিমি। ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
এসব কথা তোকে কে বলেছে.? (আমি)
.
-- কারও বলার দরকার নেই, আমি সব
জানি। (রিমি)
.
-- কচু জানিস। আমরা সবাই তোকে অনেক ভালবাসি।
তুই যেমন আমাদের সবার ভালো চাস, তেমনি আমরাও
তোর ভালো চাই। (আমি)
.
-- তাহলে আমাকে একবার 'ভালবাসি' বল.! (রিমি)
.
-- কেন.? কি মনে হয়, আমি তোকে ভালবাসি না.? (আমি)
.
-- না। তুই বললে আমি বিশ্বাস করবো। আমি তোর মুখ থেকে সরাসরি শুনতে চাই। (রিমি)
.
-- আচ্ছা, আমি তোকে ভালবাসি। (আমি)
.
-- সত্যি.? (প্রচন্ড খুশি হয়ে)
.
-- হুমম কিন্তু সেটা বোন হিসেবে। তুই আবার অন্যকিছু ভাবিস না। (আমি)
.
রিমির হাসি মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। হাস্যজ্জল মুখে কালো মেঘ এসে ভর করলো। মনে হচ্ছে, এক্ষুণি কালবৈশাখী ঝড় উঠবে.! আমার ধারণাটাই ঠিক হল। রিমি চিৎকার দিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বলল,
.
-- বারবার এত বোন বোন করিস কেন রে.? এই বোনের চ্যাপ্টার বাদ দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে I Love You বল.! (রিমি)
.
-- তুই আমার গার্লফ্রেন্ড নাকি যে তোকে ফিল্মি স্টাইলে I Love You বলবো। (আমি)
.
-- গার্লফ্রেন্ড না হলে কি I Love You বলা যাবে না.? (রিমি)
.
-- উহু, একদম না। (আমি)
.
-- এজন্যই তো বলি, তোরা কেউ আমাকে ভালবাসিস না। ভালবাসলে অন্তত জড়িয়ে ধরে একবার I Love You বলতি। পোড়া কপাল আমার। আমি মরে গেলেই সবার ভালো হবে। (মন খারাপ করে)
.
রিমির কথা শুনে আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেল। পেন্তীটা বারবার মরার কথা বলছে কেন.? রিমি কি বোঝেনা আমি তাকে কতটা ভালবাসি.! আমি রিমিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
.
-- ঠিক আছে, আমি তোকে ভালবাসি, I Love You.! এর বেশি আর কিছু বলতে পারবো না। ওসব ফিল্মি স্টাইলে I Love You বলতে পারি না আমি। (আমি)
.
রিমি সামান্য হাসলো। তারপর আমার বুকে মাথা গুজে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। মিষ্টি গলায় বলল,
.
-- I Love You 2.! আমিও তোকে ভালবাসি, খুব ভালবাসি.! (রিমি)
.
যত সময় যাচ্ছে রিমি তত শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরছে। মনে হচ্ছে, আমার শরীরের সাথে মিশে যেতে চাইছে রিমি। আমার কেমন জানি লাগছে। অসস্তি হচ্ছে খুব। দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি আর থাকতে না পেরে রিমিকে বললাম,
.
-- রিমি ছাড় আমাকে। তোর বয়ফ্রেন্ড কে এভাবে জড়িয়ে ধরিস। (আমি)
.
রিমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে বসলো। এখন রিমি একটু স্বাবাভিক হয়েছে, কান্না করছে না। আমি রিমির এলোমেলো লম্বা চুলগুলো ঠিক করে দিলাম। সারা মুখে লেপ্টে থাকা কাজল মুছে দিলাম। এখন রিমির দিকে একটু তাকানো যাচ্ছে। একটু আগে একদম ভূতের মত লাগছিল। আমি রিমির হাত ধরে শান্ত গলায় বলল,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- আর কখনো কাঁদবি না, ঠিক আছে.? তুই কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়। মামা-মামি নেই তো কি হয়েছে, আমরা তো আছি। (আমি)
.
-- অন্যকারো থাকার দরকার নেই। তুই আমার পাশে থাকলেই যথেস্ট। আমার আর কাউকে লাগবে না। (রিমি)
.
-- হুমম, আমি সবসময় তোর পাশে আছি এবং থাকবো। খুশি এবার.? (আমি)
.
-- হুমম, খুব খুশি। (সামান্য হেসে)
.
-- ভালো। আর হ্যা, তখন কান্না করতে করতে ফোনে কি দেখছিলি.? (আমি)
.
রিমি চোখ-মুখ কুচকে আমার দিকে তাকালো। চোখ দু'টো সরু করে ধমক দিয়ে বলল,
.
-- তোকে বলতে হবে কেন.? তুই নিজের চরকায় তেল দে। যা তরীর সাথে গিয়ে পিরীত কর.! (রিমি)
.
-- বল না, প্লিজ.! (আমি)
.
-- আমার ভালবাসার মানুষটাকে দেখছিলাম। তাকে একদিন না দেখলে আমার ঘুম আসে না। (রিমি)
.
-- বাহ্.! তাহলে তো আমাকেও দেখতে হয়। দেখি তোর ভালবাসার মানুষটা কেমন। (আমি)
.
কথাটা বলেই ঝড়ের বেগে বালিশের নিচে থেকে রিমির ফোনটা বের করলাম। রিমির ফোন নেওয়াতে রিমি লাফিয়ে উঠলো। চিৎকার দিয়ে বলল,
.
-- এই খবরদার আমার ফোনে হাত দিবি না। ভালই ভালই আমার ফোনটা দিয়ে দে। (রিমি)
.
রিমি ফোনটা নেওয়ার জন্য আমার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল। আমিও নাছোড় বান্দা, কিছুতেও ফোন দিবো না। আজ রিমির বয়ফ্রেন্ড কে দেখেই ছাড়বো। আমি জোর গলায় বললাম,
.
-- আগে দুলাভাইকে দেখবো তারপর ফোন দিবো। (আমি)
.
-- কিসের দুলাভাই.? তুই ফোন দে... (রিমি)
.
আমি রিমির কথায় কান না দিয়ে ফোনের লক খুললাম। লক খুলতেই যা দেখলাম তাতে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। আমি হা করে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
.
চলবে....?????