.
তরীর সাথে দেখা করার জন্য আমি আর রিমি
রেস্টুরেন্টর ভিতরে গেলাম।
হটাৎ কে যেন আমাকে ডাক দিল। কন্ঠটা খুব পরিচিত।
হ্যা, এটা তরীর গলা.! আমি পাশে তাকাতেই আমার
চোখ কপালে উঠে গেল.! কি দেখছি আমি.!
এটা কি সত্যি-ই তরী.?
.
সেদিন তরীকে আবছা ভাবে এক নজর দেখেছিলাম
তাই আজ তাকে চিনতে খুব একটা অসুবিধা হলো না। তরীর মিষ্টি কন্ঠ শুনেই তাকে চিনে ফেলেছি।
রেস্টুরেন্টের ডানপাশের কোণার টেবিলে বসে আছে
সে।
আমি আর রিমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম।
.
তরীকে সামনা-সামনি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে আমার.!
তরীর কন্ঠ শুনে ভেবেছিলাম, কন্ঠ মিষ্টি হলেও, তরী
দেখতে মোটামুটি সুন্দর হবে, চলার মত কিন্তু এখন দেখছি, সে সাক্ষাত পরী.!
.
দুধে আলতা গা'য়ের রঙ, চওড়া কপাল, সরু বাঁশির
মত খাড়া নাক, ফর্সা মসৃণ দুই গালে গভীর
টোল, গোলাপের পাপড়ির মত লাল নরম ঠোঁট আর
সেই ঠোঁঠের পাশে ছোট্ট একটা তিল, পরণে লাল পাড়ের
হালকা কারুকাজ করা সাদা সুতির শাড়ি.!
.
সত্যি বলতে, তরীকে দেখে আমি চোখ সরাতে
পারছি না। মনে হচ্ছে, স্বর্গ থেকে কোনো অপ্সরী নেমে ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
এসে আমার সামনে বসে আছে.!
আমি হা করে তরীর রূপের সুধা পান করছি.!
আমার আমিতে আমি নেই, হারিয়ে গেছি তরীর রূপের
মায়াতে.! কোনো মানুষ এত সুন্দর হয়.? আমার মুখ থেকে
অজান্তেই বেরিয়ে এলো, "মাশআল্লাহ্.! অনেক সুন্দর.!"
আমার ধ্যান ভাঙলো তরীর সালাম শুনে,
.
-- আসসালামু আলাইকুম। (তরী)
.
আমি স্বাভাবিক হয়ে সালামের জবাব দিলাম,
.
-- অলাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন.? (আমি)
.
-- জ্বী ভালো, আপনি কেমন আছেন.? (তরী)
.
-- আমিও ভাল আছি। স্যরি, লেট করে আসলাম। (আমি)
.
-- না, না... ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আর আপনি
দাঁড়িয়ে আছেন কেন, বসেন। (তরী)
.
আমি তরীর কথামতো চেয়ার টেনে বসলাম।
পাশে তাকাতেই দেখি, রিমি নিষ্পলক ভাবে তরীর দিকে তাকিয়ে আছে। হা, হু কিছুই করছে না।
আমি হালকা গলায় রিমিকে বললাম,
.
-- এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস.? আয়, বস। (আমি)
.
রিমি গোমড়া মুখ করে আমার পাশে বসলো।
এর আবার কি হলো.? মুখটা এমন বাংলার পাঁচের
মত করে আছে কেন.?
এখানে আসার আগ পর্যন্ত সব ঠিকই তো ছিল।
.
-- শাহিন, কে ইনি.? ঠিক চিনতে পারলাম
না। (রিমিকে দেখিয়ে)
.
-- এটা আমার বোন। (আমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- কি.? কিন্তু আমি তো জানতাম তোমার কোন
ভাই-বোন নেই। তুমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। (তরী)
.
-- আমি শাহিনের নিজের বোন না, মামাতো বোন। (রিমি)
.
তরীকে উদ্দেশ্য করে তীক্ষ্ণ গলায় বলল রিমি।
দেখে মনে হচ্ছে, তরীর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা
নেই রিমির কিন্তু বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে।
তরী সামান্য হেসে রিমিকে বলল,
.
-- ওহ, তাই বলো। আমি নিজের বোন ভেবেছিলাম।
আচ্ছা, বাদ দাও এসব কথা। আমি তরী, তুমি.?
স্যরি, তুমি করে বললাম। (তরী)
.
-- সমস্যা নেই, আমি রিমি। (রিমি)
.
-- খুব সুন্দর নাম। তোমাকে একটা কথা বলবো.? (তরী)
.
-- হ্যা, বলো। (রিমি)
.
-- তুমি আমার বন্ধু হবে.? আসলে আমার কোনো
বন্ধু নেই। ছোটবেলা থেকেই দেশের বাইরে ছিলাম তাই
এখানকার কাউকে চিনি না।
তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।
আমার বন্ধু হলে তোমার সাথে সবকিছু শেয়ার
করতে পারতাম, সময় কাটাতে পারতাম। (তরী)
.
-- ঠিক আছে, আমরা বন্ধু। (গম্ভীর গলায়)
.
-- তোমার কি মন খারাপ.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
-- ওর মন সবসময় খারাপ থাকে। পেঁচি একটা.! (আমি)
.
রিমি রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
.
-- আমি পেঁচি হলে তুই একটা পেঁচা.! (রিমি)
.
-- তুই একটা ছাগল.! (আমি)
.
-- তুই হলি গরু.! যেনতেন গরু নয়, লেজকাটা
গরু.! (রিমি)
.
-- আরে, তোমরা ঝগড়া থামাও। সবাই দেখছে। (তরী)
.
তরীর কথা শুনে আমরা চুপ হলাম। এদিক-ওদিকে
তাকিয়ে দেখলাম, কয়েকজন আমাদের দিকে
তাকিয়ে আছে। আমি বিষয়টা স্বাভাবিক নামেই নিলাম।
পাশে সুন্দরী মেয়ে থাকলে মানুষ জন তাকাবেই।
তার উপর আমি আবার ২টা মেয়েকে নিয়ে বসে আছি। সেজন্যই হয়তো মানুষ আরো বেশি করে তাকাচ্ছে।
কিছু সময় চুপ থেকে তরী বলল,
.
-- শাহিন, কি খাবেন আপনি.? (তরী)
.
-- আপনি যা খাবেন তাই। (আমি)
.
-- আমি চা খাবো। মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে।
আপনার চা চলবে.? (তরী)
.
-- সমস্যা নাই, আমিও চা খাই। দেখছেন আপনার আর ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আমার মাঝে কত মিল। (সামান্য হেসে)
.
-- মিথ্যা বলছিস কেন.? তুই তো চা মুখেও দিস
না, কফি খাস। (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালাম।
পেন্তীটা কথাটা বলার আর সময় পেল না.?
আমি তরীর সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছি আর রিমি
সেটাতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
রিমিকে নিয়ে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে।
ভেবেছিলাম, তরীকে ইমপ্রেস করতে রিমি আমাকে
হেল্প করবে কিন্তু উল্টো আমাকে বাঁশ দিয়ে বসে আছে।
আমি মাথা চুলকে তরীর দিকে তাকালাম।
তরী সামান্য হাসলো। হয়তো আমার বিষয়টা
বুঝতে পেরেছে তাই আর কিছু বলল না।
মুচকি হেসে রিমিকে জিজ্ঞেস করলো,
.
-- তুমি কি খাবে, রিমি.? চা না কফি.? (তরী)
.
-- শাহিন যেটা খাবে আমিও সেটাই খাবো। শাহিনের
পছন্দই আমার পছন্দ। (রিমি)
.
রিমি সরাসরি উত্তর দিল। সত্যি বলতে, রিমিকে এখন
কিলাতে ইচ্ছা করছে। হুট করে এভাবে কথা বলছে কেন.?
মনে হচ্ছে, তরীর সামনে আমাকে ছোট করেই ছাড়বে।
এদিকে,
রিমির এমন কথা শুনে তরী কেমন করে যেন আমার
দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না।
ওয়েটারকে ডেকে ২ টা কফি আর ১ টা চা'য়ের
অর্ডার দিল। মিনিট পাঁচেক পর ওয়েটার চা আর
কফি দিয়ে গেল।
.
আমি কফিতে চুমুক দিতে-দিতে আড় চোখে বারবার
তরীর দিকে তাকাচ্ছি। তরীকে যতই দেখছি ততই
অবাক হচ্ছি। এত সুন্দর রুপবতী একটা মেয়ে আমাকে
পছন্দ করে এটা ভাবতেই আনন্দের চরম সীমায় পৌছে
গেছি আমি.! মনে হচ্ছে, সত্যি সত্যি আমি আকাশের
চাঁদ হাতে পেয়েছি.!
.
তরী চা খাচ্ছে আর আলতো হাতে শাড়ি ঠিক করছে।
দেখে মনে হচ্ছে, এই প্রথম শাড়ি পড়েছে।
শাড়িটা একটু অগোছালো হয়ে আছে। বিভিন্ন জায়গায়
ভাঁজ ঠিক নেই কিন্তু তারপরও তরীকে সবার থেকে
আলাদা লাগছে। আমি তরীর মত রুপবতী, পরিপূর্ণা
মেয়েকে খুব কমই দেখেছি।
.
তরীর সবকিছুই সুন্দর.! বিশেষ করে গোলাপের পাপড়ির
মত নরম ঠোঁট জোড়া.! ইশ, তরী যখন তার নরম ঠোঁট চা'য়ের কাপে লাগাচ্ছে, তখন আমার পুরো শরীর শিউরে উঠছে। তরীর ঠোঁট জোড়া যদি একবার ছুঁতে পারতাম তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম.!
.
আমি মনে মনে এসব ভাবছিলাম, হটাৎ তরী
বলে উঠলো,
.
-- আপনি বারবার আমার দিকে এভাবে আড়
চোখে তাকাচ্ছেন কেন.?
জীবনে কোনো দিন মেয়ে দেখেন নি.? (তরী)
.
আচমকা তরীর এমন কথা শুনে বিষম খেলাম।
এভাবে ধরা পড়ে যাবো বুঝতে পারি নি।
লজ্জা লাগছে খুব। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
.
-- আসলে... আ-মি.... এমনি দেখছিলাম। (আমি)
.
-- মোটেও না। আপনি আমার দিকে চোরের মত
তাকিয়ে ছিলেন। (তরী)ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- স্যরি.! (মন খারাপ করে)
.
তরী মুচকি হাসলো। মিষ্টি গলায় বলল,
.
-- আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে.? (তরী)
.
আমি মাথা নাড়ালাম। তরীর এবার ধমক
দিয়ে বলল,
.
-- তাহলে চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন
কেন.? সরাসরি দেখার সাহস নেই.?
আচ্ছা, আপনি কি আমাকে ভয় পান.? (তরী)
.
-- ভয় পাবো কেন.? সেরকম কিছু না। (আমি)
.
-- চুপ করুন। ভিতুর ডিম একটা.!
আপনি জানেন, আমি শাড়ি পড়তে পারি না কিন্তু
তবুও আজ পড়েছি। শুধুমাত্র আপনার জন্য.! (তরী)
.
-- আমার জন্য.? কেন.? (অবাক হয়ে)
.
-- আমি শুনেছি, ছেলেরা নাকি শাড়ি পড়া মেয়েদের
খুব পছন্দ করে। আর তাই আমাকে যাতে আপনার পছন্দ
হয় সেজন্য শাড়ি পড়ে এসেছি। (তরী)
.
কথাগুলো বলে তরী একটু থামলো।
এদিকে, খুশিতে আমার মন বাক বাকুম করছে.!
তরী একটু দম নিয়ে আবার বলতে লাগলো,
.
-- আমাকে যত খুশি দেখেন, আমি মানা করবো না।
নিজের জিনিসকে লুকিয়ে দেখার কি আছে।
আবার দেখার পর আমাকে ভুলে যায়েন না। আপনি তো ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আবার মন ভোলা মানুষ। (তরী)
.
তরীর কথা শুনে মনে মনে বললাম, "আপনাকে
আমার কোন দিন-ই ভোলা সম্ভব না, তরী।
আমি চাইলেও এটা পারবো না। আপনাকে আমার মন মাজারে বসিয়ে ফেলেছি.!"
.
-- কি হলো, কিছু বলছেন না যে.? (তরী)
.
-- কি বলবো.? (আমি)
.
-- বাড়িতে আপনার আর আমার বিয়ের কথা চলছে।
আপনি এই বিষয়ে জানেন কিছু.? (তরী)
.
-- জানি বলেই তো আপনার সাথে দেখা
করতে এসেছি। (আমি)
.
-- ওহ। আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে.? (তরী)
.
তরীর কথার জবাবে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।
এদিকে, টেবিলের নিচে থেকে রিমি আমার পা'য়ে সমানে
সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।
.
.
.
চলবে..... ??????
0 Comments