.
রিমির মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। ফর্সা মুখটা পোড়া
ভাতের মত বানিয়ে বলল,
.
-- তরী ফোন দিয়ে কি বলল.? (রিমি)
.
-- ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো। আর আমার সাথে দেখা
করতে চায়। (আমি)
.
-- ওহ। তুই কি বললি.? (রিমি)
.
-- বলেছি, আজ বিকালে দেখা করবো। (আমি)
.
কথাটা বলার সাথে সাথে রিমি আমার গালে ঠাস
করে চড় মারলো। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
যদিও রিমি চড়টা আস্তে মেরেছে, বেশি লাগে নি কিন্তু তবুও আমার প্রচন্ড মন খারাপ হলো।
কত সুন্দর হাসি-খুশি ছিলাম কিন্তু রিমির সেটা সহ্য
হলো না।
.
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় রিমির মাথায় সমস্যা আছে। সাথে ভদ্রতারও কমতি আছে অনেক।
বয়সে ছোট হয়েও যখন-তখন আমার গা'য়ে হাত তোলে। আমি কড়া গলায় বললাম,
.
-- ভদ্রতা কি সাত বাজারে বিক্রি করে এসেছিস.?
অভদ্রের মত যখন-তখন গা'য়ে হাত তুলিস কেন.?
ভুলে যাস না আমি তোর বড়.! (আমি)
.
রিমি আমার কথার তোয়াক্কা করলো না। ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
উল্টো আমার কলার ধরে আমাকে তার কাছে
নিয়ে এলো। চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
.
-- তোর না বিয়েটা ক্যান্সেল করার কথা ছিল।
তাহলে দেখা করতে যাবি কেন.? (রিমি)
.
-- তরীকে সামনা-সামনি দেখার বড্ড সাধ জেগেছে।
আমি তরীর প্রেমে পড়ে গেছি.! (আমি)
.
কথাটা বলেই আমি গুনগুন করে গান গাইতে
লাগলাম, "প্রেমে পড়েছে মন, প্রেমে পড়েছে.!
অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করেছে.!"
.
রিমি কনুই দিয়ে আমার পেটে গুতো মারলো।
আমি ব্যথা পেয়ে গান গাওয়া বন্ধ করলাম।
এদিকে,
রিমি আমার আরো কাছে এসে ঝাঝালো
গলায় বলল,
.
-- ফাইজলামি করিস আমার সাথে.? দেখ, মাথা কিন্তু
এমনিতেই আমার গরম হয়ে আছে।
মজা করার মুড নেই। এখন আলতু-ফালতু কথা বললে
মেরে ফেলবো একদম.! (রিমি)
.
-- রেগে যাচ্ছিস কেন.? আমি সত্যি-ই তরীর
প্রেমে পড়েছি.! (আমি)
.
আচমকা রিমি আমাকে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিল।
আমি তাল সামলাতে না পেরে খাট থেকে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলাম। কোমড়ে ভালই ব্যথা পেয়েছি।
আমি কোমড়ে হাত দিয়ে কোনমতে উঠে দাঁড়ালাম।
রিমির উপর প্রচন্ড রাগ উঠলো। মেয়েটার মাথায় আসলেই
সমস্যা আছে। আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
.
-- মেন্টাল, মাথায় সমস্যা আছে নাকি.?
অল্পের জন্য আমার কোমড় ভাঙলো না। (আমি)
.
রিমি কিছু বলল না। সে চোখ-মুখ কালো করে উল্টোদিক
হয়ে বসে আছে। আমি কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে রিমির পাশে গিয়ে বসলাম। রিমিকে আমার দিকে ফিরালাম। মহারাণী মাথা নিচু করে নিঃশ্চুপ হয়ে আছে।
নীরবতা ভেঙে আমিই মুখ খুললাম,
.
-- তরী মেয়েটা খুব ভালো রে। আমার ওকে বেশ
পছন্দ হয়েছে। (আমি)
.
এবার রিমি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো।
চোখ দুটো সরু করে গম্ভীর গলায় বলল,
.
-- মাত্র একদিন ফোনে কথা বলেই তরীকে তোর
পছন্দ হয়ে গেল.? (রিমি)
.
-- হুমম, তরীর গলার আওয়াজ শুনেই তার
প্রেমে পড়ে গেছি.!
ইশশশ.! কি বলবো তোকে,  এত্ত মিষ্টি কন্ঠ আমি
জীবনেও শুনি নি। (আমি)
.
-- কেন, আমার কন্ঠ কি মিষ্টি না.? (রিমি)
.
-- এখানে তোর প্রসঙ্গ আসছে কেন.? কোথায় তুই ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আর কোথায় তরী।
তোদের মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ.! (আমি)
.
আমার কথা শুনে রিমির মুখ আরো অন্ধকারে
ছেয়ে গেল। মনে হচ্ছে, রিমির মুখে চন্দ্রগ্রহণ লেগেছে।
বুঝতে বাকি রইলো না, রিমি মন খারাপ করেছে। অবশ্য মন খারাপ হওয়ারই কথা।
রিমিকে ওভাবে বলার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু মুখ
ফসকে বেরিয়ে গেছে।
আমি কিছু বলার আগেই রিমি মুখ ভার করে বলল,
.
-- আগে তো আমার কন্ঠের খুব প্রশংসা করতি।
আমার গান না শুনলে তোর দিন নাকি ভালো কাটে না। আর আজ আমার কন্ঠ খারাপ হয়ে গেল.? (রিমি)
.
রিমি কথাগুলো সত্যি বলেছে। খুব সুন্দর গান
গাইতে পারে রিমি.!
আমি সময় পেলেই রিমির গান শুনি।
যখন আমার মন প্রচন্ড খারাপ থাকে তখন রিমির
সুরেলা কন্ঠের গান শুনি।
আমার মন তখন আপনা-আপনি ভাল হয়ে যায়।
আমি কাতর গলায় বললাম,
.
-- স্যরি, রিমি.! আমি ওভাবে বলতে চাই নি।
প্লিজ, কিছু মনে করিস না। (আমি)
.
-- থাক, আর কিছু বলতে হবে না। (মন খারাপ করে)
.
-- ধুররর, বাদ দে এসব। আমার কথা শোন। (আমি)
.
-- বল। (রিমি)
.
আমি রিমির কাছে গিয়ে ওর হাত দু'টো নিজের হাতের
মর্ধ্যে নিলাম। আকুতি জানিয়ে বললাম,
.
-- তরী আজ বিকেলে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।
আমি চাই তুইও আমার সাথে যাবি। (আমি)
.
কথাটা শুনে রিমি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঝটকা দিয়ে আমার
হাত সরিয়ে দিল। তারপর ধমক দিয়ে বলল,
.
-- মেরে ফেলবো একদম.! কোথাও যাওয়া হচ্ছে
না তোর। (রিমি)
.
-- এমনি করছিস কেন.? গেলে কি হবে.? (আমি)
.
-- অনেক কিছু হবে। ভালই ভালই বিয়েটা ক্যান্সেল
করে দে। (রিমি)
.
-- যদি না করি.? (আমি)
.
রিমি আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
গালি দিতে গিয়েও দিলো না।
যদিও মুখ ফসকে একটা বিশ্রী গালি বেরিয়েছিল।
বুঝতে পারলাম, রিমি অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করেছে।
হয়তো সকাল সকাল ঝগড়া করতে চাইছে না সেজন্য।
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, তরীর সাথে দেখা
করা নিয়ে রিমির এত সমস্যা কিসের.?
আমি মানছি যে, রিমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করে, আমার
ভালো চায় কিন্তু এখন বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আসলে, রিমিকে বলাই আমার ভুল হয়েছে। তরীর সাথে
লুকিয়ে দেখা করলেই হতো।
আমি এসব ভাবছিলাম তখন আচমকা রিমি আমার
হাত ধরলো। আমি ওর দিকে তাকালাম।
রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বলল,
.
-- তরীর সাথে দেখা করতে যাস না, প্লিজ.!
মেয়েটা তোর জন্য ঠিক না। তুই তরীর চেয়েও ভালো
মেয়ে ডির্জাভ করিস। বিয়েটা ক্যান্সেল করে দে।
আমি তোর জন্য ভালো মেয়ে খুজে দিবো। (রিমি)
.
-- কেন, তরী কি খারাপ.? বুঝতে পারছি না, তুই তরীকে
না দেখেই এত সিওর হচ্ছিস কেমনে.? (আমি)
.
-- আমার মন বলেছে। (রিমি)
.
-- তোর ওই হিংসুটে মনকে রাস্তার পাশে নর্দমায়
ফেলে আয়। যত্তসব আজাইরা কথাবার্তা।
আমি তরীর সাথে কথা বলে যতটা বুঝেছি, সে অনেক
ভালো মেয়ে। অন্তত তোর মত অভদ্র না।
আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলে। (আমি)
.
-- ওহ, তাহলে কি আমাকেও এখন তরীর মত তোকে
আপনি করে বলা লাগবে.? (রিমি)
.
-- সেটা না। তুই প্রথমে তরীকে খারাপ ভাবা বন্ধ কর।
আর এসব বাদ দিয়ে চল তরীর সাথে দেখা করে আসি।
দেখা করতে তো কোন প্রবলেম নেই। (আমি)
.
-- তোকে যেতে মানা করলাম না.? এক কথা কত
বার বলবো.! (রেগে)
.
-- আরে, আমি কি দেখা করতে গিয়ে তরীকে বিয়ে
করে আনবো নাকি। তুইও তো আমার সাথে যাবি।
আসলে, তরীকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।
আর একা একা যেতেও ভয় করছে। তুই সাথে গেলে
একটু সাহস পাবো। তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল.?
তোর কাছেই তো সব শেয়ার করি যাতে আমাকে হেল্প করিস কিন্তু তুই-ই মুখ ফিরিয়ে বসে আছিস।
চল না আমার সাথে। কথা দিচ্ছি, তরীকে দেখার পর
বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো। (আমি)
.
আমার কথা শুনে রিমি কি যে একটা ভাবলো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। কয়েক সেকেন্ড
আগেও রিমির মুখটা অন্ধকারে ডুবে ছিল কিন্তু এখন
এলএডি বাল্বের মত জ্বলজ্বল করছে।
রিমি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
.
-- সত্যি বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবি তো.? (রিমি)
.
-- হুমম, সত্যি। (আমি)
.
-- ঠিক আছে, তাহলে যাবো। (রিমি)
.
-- ইয়াহু.! (আমি)
.
আমার খুশি দেখে কে.! খুশিতে রিমিকে কোলে ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
তুলে নিলাম। রিমি আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
আমি রিমিকে কোলে নিয়ে দু-চার বার এদিক-ওদিক
ঘুরিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিলাম।
"আমার কোমড় ভেঙে গেল গো.!" বলে রিমি জোরে
চিৎকার দিলো।
আমি আর সেখানে না থেকে দৌঁড়ে ঘর থেকে
বেরিয়ে এলাম। পিছন থেকে রিমির মিষ্টি মিষ্টি গালি
ভেসে আসতে লাগলো।
.
.
.
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তরীর সাথে দেখা
করতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলাম।
কিন্তু কি পড়ে যাবো বুঝতে পারছি না।
আলমারি থেকে সব জামা-কাপড় বের করে বিছানায়
ফেলে রেখেছি।
ইতিমর্ধ্যে সবগুলো কাপড় ২-৩ বার ট্রায়ালও দিয়ে ফেলেছি কিন্তু কোন কাপড়ে আমাকে বেশি মানাচ্ছে
সেটাই বুঝতে পারছি না।
.
একটুপর রিমি ঘরে আসলো। ঘরের অবস্থা দেখে
মুখ কুচকে বলল,
.
-- কিরে, ঘরে কি কাপড়ের মেলা বসিয়েছিস.? (রিমি)
.
-- কি পড়ে যাবো বুঝতে পারছি না। তুই একটু পছন্দ
করে দে তো। আচ্ছা, কালো শার্ট'টা কেমন.? এটা পড়ি.?
কালো শার্টে নাকি আমাকে ভালো মানায়.! (আমি)
.
রিমি মনে মনে বলল, "কালো শার্টে তোকে আসলেই
ভালো মানায়.! হট লাগে.! কিন্তু এটা আমি তোকে পড়তে
দিবো না। যদি তরীর তোকে পছন্দ হয় তাহলে আমার
কি হবে.? আমি তোদের বিয়েটা ভাঙতে যাচ্ছি, বিয়ে
দিতে নয় যে তোকে সাহায্য করবো।"
.
-- কিরে কি ভাবছিস.? কোনটা পড়বো তাড়াতাড়ি
বল। (আমি)
.
-- নেভি-ব্লু কালারের শার্ট'টা পড়। এটাতে অনেক
ভালো মানাবে তোকে.! (রিমি)
.
-- সিওর.? (আমি)
.
-- হুমম, একদম। (রিমি)
.
রিমির কথামত আমি নেভি-ব্লু শার্ট'টা পড়ে আয়নার
সামনে দাঁড়ালাম। কেমন যেন মদন মদন লাগছে নিজেকে।
আমি রিমিকে বললাম,
.
-- রিমি, এটাতে ভালো দেখাচ্ছে না। কালো শার্ট'টাই
মনে হয় ঠিক ছিল। (আমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- এটাতেই ভালো মানাচ্ছে। তাছাড়া তুই কি বিয়ে করতে যাবি নাকি যে এত সাঁজতেছিস.! তাড়াতাড়ি চল। (রিমি)
.
আমি আর কথা না বারিয়ে রিমিকে নিয়ে বের হলাম। তরীর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী একটা আলিসান রেস্টুরেন্টে পৌছালাম। সময় তখন দুপুর গরিয়ে বিকাল।
আমি আর রিমি রেস্টুরেন্টে ঢুকে আশেপাশে তাকিয়ে তরীকে খোজার চেষ্টা করছি।
পুরো রেস্টুরেন্টে কাপল দিয়ে ভর্তি। কয়েকজন বৃদ্ধ
দম্পতিকেও দেখলাম। তারা সামনাসামনি বসে একে অপরকে আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে।
.
বাহ্.! কি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য.! আমি মনে মনে কল্পনা করলাম, খুব শীঘ্রই তরীর হাতে এভাবে আইসক্রিম খাবো।
আমি তরীকে খাইয়ে দিবো আর তরী আমাকে।
উফফফ, এসব ভেবে আমার মন খুশিতে নেচে উঠছে.!
.
হটাৎ কে যেন আমাকে ডাক দিল। কন্ঠটা খুব পরিচিত।
হ্যা, এটা তরীর গলা.! আমি পাশে তাকাতেই আমার
চোখ কপালে উঠে গেল.! কি দেখছি আমি.!
এটা কি সত্যি-ই তরী...??
.
.
.
চলবে..... ??????