.
রাত প্রায় ১২ টা বাজে.! আমি বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছি। কিছুতেই চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। হটাৎ ফোনটা বেঁজে উঠলো। আমি চমকে উঠলাম। মাঝরাতে আবার কে ফোন দিল.? ফোন হাতে নিয়ে দেখি, আননোউন নাম্বার। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠের একটা মেয়ে সালাম দিলো.!
.
-- আসসালামু আলাইকুম। (মেয়েটি)
.
-- অলাইকুম আসসালাম। কে বলছেন.? (আমি)
.
-- সেটা পরে বলছি, আগে বলেন কেমন
আছেন.? (মেয়েটি)
.
মাঝরাতে যদি অচেনা কেউ ফোন দিয়ে
বলে, "কেমন আছেন.?" তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে
ভালো মানুষটাও রেগে যাবে।
কিন্তু কেন জানি আমার রাগ হলো না। হয়তো মেয়েটার
সুরেলা কন্ঠের জন্য।
সত্যি বলতে, আজ পর্যন্ত কোন মেয়েই আমাকে এত
মিষ্টি করে "কেমন আছেন" বলে নি।
কি বলবো, মেয়েটার মিষ্টি কন্ঠ শুনে আমার পুরো
শরীর শীতল হয়ে গেছে।
এত মিষ্টি কন্ঠ আমি আমার লাইফে শুনি নি।
.
-- হ্যালো, শুনতে পাচ্ছেন.? হ্যালো.! (মেয়েটি)
.
মেয়েটার ডাকে ঘোর কাটলো। বললাম,
.
-- জ্বি, শুনতে পাচ্ছি। (আমি)
.
-- কেমন আছেন সেটা বললেন না তো। (মেয়েটি)
.
এমনিতেই তরীর কথা ভেবে আমার মন উথাল-পাথাল
হয়ে আছে, তার উপর এখন এই মেয়েটার মিষ্টি কন্ঠ শুনে ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আমি হাওয়ায় ভাসছি।
আমি ভালো আছি নাকি খারাপ সেটাই বুঝতে পারছি না।
সত্যি বলতে, আমি এই ফোনওয়ালী মেয়ের প্রতি
বিমোহিত হয়ে গেছি.! সব কিছু শূন্যের মত লাগছে।
.
আমার উতলা মন বারবার বলছে, "এই মেয়েটাই যদি তরী
হতো তাহলে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যেতাম.!"
কিন্তু আফসোস সেটা হবার নয়। তরী কেন মাঝরাতে আমাকে ফোন দিবে।
তাছাড়া আমার নাম্বার পাবেই বা কার কাছে.?
নিশ্চয় মেয়েটা ভুল করে আমাকে ফোন দিয়েছে।
আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা তাগাদা দিয়ে বলল,
.
-- কি ব্যাপার, কথা বলছেন না কেন.?
আমাকে শুনতে পাচ্ছেন.? হ্যালো.! (মেয়েটি)
.
-- হ্যা, বলেন। (আমি)
.
-- কি বলবো, তখন থেকে বলে যাচ্ছি কেমন আছেন
কিন্তু আপনি উত্তর দিচ্ছেন না। (মেয়েটি)
.
আমি যদিও ভালো নেই, তবু ভদ্রতার খাতিরে
মেয়েটাকে বললাম,
.
-- ভালো আছি, আপনি.? (আমি)
.
-- আমিও ভালো আছি, খুব ভালো আছি.! (মেয়েটি)
.
-- ওহ। আপনার পরিচয় কিন্তু এখনো পেলাম না।
কে আপনি.? (আমি)
.
-- পরিচয় দিলে চিনতে পারবেন আমায়.? (মেয়েটি)
.
-- চেনার হলে অবশ্যই চিনবো। (আমি)
.
বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম। আমার কেন জানি
মনে হচ্ছে, মেয়েটাকে আমি চিনি।
আবার ভাবলাম, মেয়েটা আমাদের কলেজের কেউ
হবে হয়তো। মাঝরাতে ফোন দিয়ে মজা করছে।
আমি এসব ভাবছিলাম তখন মেয়েটি বলল,
.
-- আমি তরী.! চিনতে পেরেছেন এবার.? (মেয়েটি)
.
কথাটা শোনামাত্র আমি শোয়া থেকে ধরফর করে
উঠে বসলাম। চোখে একটু ঘুম-ঘুম ভাব এসেছিল
কিন্তু সেটা এখন আর নেই। ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আমি ফোনের স্কিনের দিকে তাকালাম।
এটা সত্যি-ই তরী.? আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের
মত মনে হচ্ছে।
আমি নিজেই নিজের হাতে চিমটি কাটলাম।
না, এটা বাস্তব। ফোনের ওপাশ থেকে তরী বলল,
.
-- এই যে মশায়, কিছু বলছেন না কেন.?
চিনতে পেরেছেন আমায়.? (তরী)
.
তরীকে চেনার পরও না চেনার ভান করে বললাম,
.
-- স্যরি, চিনতে পারলাম না। (আমি)
.
তরী মনে হয় আশাহত হয়েছে আমার কথা শুনে।
সে কিছু বলল না। কিছু সময় নিরবতায় কাটলো।
তারপর তরী অভিমানী স্বরে বলল,
.
-- সত্যি-ই চিনতে পারেন নি.? (তরী)
.
-- না। চিনতে পারলে তো বলেই দিতাম।
তাছাড়া আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে চিনেও
না চেনার ভান করছি.? (আমি)
.
-- আমার তো সেটাই মনে হচ্ছে। (তরী)
.
-- মোটেও না। (আমি)
.
-- আমি আপনার বাবার বন্ধুর মেয়ে। সেদিন আমার
জন্মদিনে এসেছিলেন, মনে নেই.? (তরী)
.
-- ওহ হ্যা, মনে পড়েছে। আমার নাম্বার কই
পেলেন.? (আমি)
.
-- এই যুগে কারও ফোন নাম্বার জোগার করা কি
আর এমন কঠিন কাজ। (তরী)
.
-- ওহ, ভালো। (আমি)
.
-- হুমম, আপনার বাবা আমার সম্পর্কে কিছু
বলে নাই.? (তরী)
.
-- হ্যা, বলেছিল কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম। (আমি)
.
-- আপনি দেখছি বড্ড মন ভোলা মানুষ।
তবে সমস্যা নেই, বিয়ের পর সব ঠিক করে দিবো। (তরী)
.
কথাটা বলেই তরী থেমে গেল। আমি শুধু তরীর
ঘনঘন নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
এদিকে,
আমারও একই অবস্থা। তরীর কথা শুনে আমার
সারা শরীরে ভালো লাগার স্রোত বইছে।
এভাবে নীরবতায় কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার
পর তরী মুখ খুলল,
.
-- কি করছেন এখন.? (তরী)
.
-- মাঝরাতে মানুষ কি করে.? (আমি)
.
-- অনেক কিছুই তো করে। আপনি কি করছেন, সেটা
জানতে চাইছি। (তরী)
.
-- শুয়ে আছি। (আমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- রাতে খেয়েছেন কিছু.? (তরী)
.
-- আপনার কি মনে হয় এত রাত অব্দি আমি না
খেয়ে আছি.? (আমি)
.
-- ওহ। মনে হয় আমি আপনাকে বিরক্তি করছি।
আচ্ছা, ফোন রাখছি। ভালো থাকবেন। (তরী)
.
এটা কি করলাম আমি.? ভাব দেখাতে গিয়ে নিজের
পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম.!
আমি তড়িঘড়ি করে তরীকে বললাম,
.
-- আরে, বিরক্ত হবো কেন.? কি বলছেন এসব.?
আপনি ফোন দেওয়াতে আমি মোটেও বিরক্ত
হইনি। (আমি)
.
-- তাহলে এমন গম্ভীর ভাবে কথা বলছেন
কেন.? (তেী)
.
-- কই.? আসলে আমি এভাবেই কথা বলি। (সামান্য হেসে)
.
-- তাই.? কিন্তু সেদিন জন্মদিনে দেখলাম আপনি আমার
বান্ধবীদের সাথে অনেক হেসে হেসে আর মিষ্টি মিষ্টি কথা
বলছিলেন.! (তরী)
.
তরীর কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম.!
বাপরে.! এই মেয়ে দেখছি ভালই আমাকে চোখে
চোখে রেখেছে।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
.
-- আসলে আমি একটু..... মানে.... (আমি)
.
-- তোতলাচ্ছেন কেন.? (তরী)
.
-- আচ্ছা, বাদ দিন এসব। কি করছেন এখন.? (আমি)
.
-- এইতো শুয়ে থেকে আপনার সাথে কথা বলছি। (তরী)
.
-- ওহ, ভালো। (আমি)
.
-- হুমম। আপনাকে একটা কথা বলার জন্য ফোন
দিয়েছি। (তরী)
.
-- জ্বি, বলেন। (আমি)
.
-- কালকে আপনার সময় হবে.? দেখা করতাম.! (তরী)
.
তরীর কথা শুনে খুশিতে আমার লুঙ্গি ডান্স দিতে
ইচ্ছা করছে। এই মেয়ে দেখছি, বুলেট ট্রেনের মত
সুপার ফাস্ট.! সবার থেকে একধাপ এগিয়ে।
আমি খুশিতে গুলুমুলু হয়ে বললাম,
.
-- জ্বি, অবশ্যই। (আমি)
.
-- তাহলে কাল বিকালে দেখা করি.? (তরী)
.
-- আচ্ছা, সমস্যা নেই। (আমি) ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- ঠিকানাটা আমি মেসেজে পাঠিয়ে দিবো। (তরী)
.
-- ঠিক আছে কিন্তু আপনাকে তো কখনো দেখি নি।
চিনবো কিভাবে.? আপনার একটা ফটো পাওয়া
যাবে.? (আমি)
.
কথাটা বলে আমি নিজেই বেকুব বনে গেলাম।
তরী কড়া গলায় বলল,
.
-- সেদিন আমার জন্মদিনে এসেও আমাকে
দেখেন নি.? আজব তো.! (তরী)
.
আমি মিনমিনে স্বরে বললাম,
.
-- আসলে সেভাবে দেখা হয় নি। দূর থেকে আবছা
ভাবে এক নজর দেখেছিলাম। (আমি)
.
-- হ্যা, দেখবেন কিভাবে... পুরো সময়টা তো আমার
বান্ধবীদের পিছনেই ঘুরঘুর করেছিলেন.! (তরী)
.
-- ইয়ে... মানে... আসলে... আমি... (আমতা আমতা করে)
.
-- শুনুন, আপনাকে বাইরে থেকে সাদাসিধে মনে হলেও
আপনি আসলে এক নাম্বারের চালু মাল.! (তরী)
.
-- লজ্জা দিচ্ছেন.? (মন খারাপ করে)
.
-- উহু, যা সত্যি তাই বলেছি। আর হ্যা, কাল তো
সামনা-সামনি দেখা হবেই, তখন যত খুশি দেখে নিয়েন।
মানা করবো না। আরেকটা কথা, নেক্সট টাইম যদি অন্য
মেয়েদের পিছনে লাগতে দেখি তাহলে ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো.! (তরী)
.
-- বাপরে.! বিয়ের আগেই হুমকি দিচ্ছেন.! (সামান্য হেসে)
.
-- হুমম, এখন থেকেই সব দখল করে নিচ্ছি। (তরী)
.
-- যদি দখল নিতে না দেই.? (আমি)
.
-- মেরে চাটনি বানাবো। আমাকে অন্যসব মেয়েদের মত
ভাববেন না। আমি কিন্তু হেব্বি ডেঞ্জারাস.! (তরী)
.
-- আপনি বিয়ের আগেই যেভাবে ভয় দেখাচ্ছেন, বিয়ের
পর যে কি করবেন আল্লাহ জানে। (আমি)
.
-- সেটা না হয় বিয়ের পরেই দেখবেন। তবে আপনাকে
খুব ভালবাসবো.! এখনি রাখছি, ভালো থাকবেন। (তরী)
.
কথাটা বলেই তরী ফোন রেখে দিল। আমাকে কিছু
বলার সুযোগ-ই দিলো না।
বলতেও পারলাম না, "আর দু'টো মিনিট কথা বলি।"
আমি ফোন রেখে বিছানায় গড়াগড়ি করতে লাগলাম।
তরীর শেষ কথাটা এখনো আমার কানে বাঁজছে।
রেশ এখনো কাটে নি। ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
আমি যখন তরীর সাথে কথা বলছিলাম, উত্তেজনায়
আমার শরীর কাঁপছিল।
হার্টবিট বারবার বাড়ছিল আর কমছিল।
আমি ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারছিলাম না।
ছোট বাচ্চার মত তোতলাচ্ছিম যার ফলে বারবার
কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। মনের মর্ধ্যে একটা অজানা ভালো
লাগা কাজ করছিল।
.
আমি এর আগে অনেক মেয়ের সাথে কথা বলেছি
কিন্তু এমনটা কখনো হয় নি। কথা বলার সময় তরীকে
আমি এতটাই ফিল করছিলাম যেন সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আচ্ছা, এটাকেই কি ভালবাসা বলে.?
আমি কি তাহলে তরীর প্রেমে পড়ে গেছি.?
.
ফোনে কল রেকর্ডিং চালু ছিল। আমি রেকর্ড চালু করে
তরীর কথাগুলো আবার শুনতে লাগলাম।
যত শুনছি, ভাল লাগার পরিমাণ ততই বাড়ছে।
.
অন্যদিকে,
রিমির চোখেও ঘুম নেই। শুয়ে শুয়ে ভাবছে, শাহিন কি সত্যি-ই বিয়েটা ভেঙে দিবে.?
রিমির মনে অজানা ভয় কাজ করছে। মনে হচ্ছে, খুব
শীঘ্রই তার সাথে খারাপ কিছু ঘটবে।
রিমি মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো, "যাই হয়ে যাক, শাহিনের বিয়ে কিছুতেই হতে দিবে না।"
.
.
.
সকালবেলা দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম।
সারারাত ঘুম হয় নি। তরীর কথা ভাবতে ভাবতে
ভোরের দিকে ঘুমিয়েছি।
আমি ফ্রেশ হয়ে রিমির ঘরে গেলাম। রিমিকে খুব চিন্তিত
দেখাচ্ছে। সে কি যেন একটা খোজাখুজি করছে।
.
আমি পা টিপেটিপে রিমির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
তারপর রিমির কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে কোলে তুলে
চারিদিকে ঘুরাতে লাগলাম।
রিমিকে আচমকা কোলে নেওয়াতে প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিল কিন্তু আমাকে দেখার পর স্বাভাবিক হলো।
.
-- কুত্তা, ছাড় আমাকে... পড়ে যাবো তো। (রিমি)
.
আমি রিমিকে কয়েকবার ঘুরিয়ে ধপাস করে বিছানায়
ফেলে দিলাম। রিমি 'ও মাগো' বলে একটা চিৎকার দিয়ে
আমাকে গালি দিতে লাগলো।
আমি সেদিকে কান দিলাম না। বিছানায় শুয়ে মুচকি
মুচকি হাসতে লাগলাম।
একটুপর রিমি আমার মুখের কাছে মুখ এনে নরম
গলায় বলল,
.
-- কি ব্যাপার, আজ এত খুশি কেন.? (রিমি)
.
-- আমি প্রেমে পড়েছি রে.! (চিৎকার করে)
.
কথাটা শোনামাত্র রিমি আমাকে টেনে শোয়া থেকে
উঠে বসালো। চোখ-মুখ কুচকে সরু চোখে বলল,
.
-- কার প্রেমে পড়েছিস তুই.? (রিমি)
.
-- তরীর.! জানিস, গতকাল রাতে তরী ফোন ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
দিয়েছিল। (আমি)
.
রিমির মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। ফর্সা মুখটা পোড়া
ভাতের মত বানিয়ে বলল,
.
-- ফোন দিয়ে কি বলল.? (রিমি)
.
-- ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো। আর আমার সাথে দেখা
করতে চায়। (আমি)
.
-- ওহ। তুই কি বললি.? (রিমি)
.
-- বলেছি, আজ বিকালে দেখা করবো। (আমি)
.
কথাটা বলার সাথে সাথে রিমি আমার গালে ঠাস করে
চড় মারলো। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
.
.
.
চলবে..... ???????
0 Comments