এদিকে….
আরিয়ানের জ্ঞান ফিরেছে। অনিকের অনেক জোরাজোরি করার পর আরিয়ান তখন যা হয়েছে সেই সব কিছু খুলে বলল আর অনিক তখন খুব রেগে গেল। আরিয়ান ওকে অনেক কষ্টে শান্ত করলো। আর বলল সে দেশে ফিরতে চায়। তারপর সব কিছু জোগাড় করা হয়। ভালোবাসার প্রতারনা
জারার জ্ঞান ফিরলে দেখে সে গাড়িতে পাশেই আবির বসে আছে। সামনে তাঁকিয়ে দেখলো ওরা এয়ারপোর্টে এসেছে। জারা খুব রেগে গেল। আবিরকে বলল
—-আমি এখানে কেন ? আর আরিয়ান কোথায়! আমি দেশে যাবো না আমি আগে আরিয়ানের কাছে যাবো।
—–কুল বেবি। আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি কারণ আমরা দেশে ফিরে যাব। আর ভাইয়ের চিন্তা করো না আমি খবর নিয়েছি ভাই হসপিটালে এডমিট হয়েছে আর এখন ভালোই আছে।
কথাটা শুনে জারা খুব খুশি হলো। কিন্তু বেশিক্ষণ খুশি টিকিয়ে রাখতে পারলো না। আবিরের পরের কথাটা শুনে।
—–জারা এখন যদি বেশি বাড়াবাড়ি করো তাহলে আরিয়ানকে কিন্তু জানে মেরে ফেলবো। সো চুপচাপ আমার সাথে চলো।
—-না তুমি এমন কিছুই করবে না।
—–কি করবো আর কি করবো না তা আমি তোমাকে বলব নাকি। আরিয়ানের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবো যদি আমার কথা তুমি না শুনো।
—–‘ না না আমি রাজি তুমি যা বলবে আমি তাই করব।
—-‘That’s like a good girl
আরিয়ানের কথা চিন্তা করে জারা আবিরের সাথে চলে গেল। নিজের যা হয় হোক ওর জন্য আরিয়ানের যাতে কিছু না হয়।
বাংলাদেশে ফিরে জারা আর আবির সোজা আবিরদের বাড়িতে গেল। সেখানে ওদের দুজনকে একসাথে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। আবিরের বাবা তাদের জিজ্ঞেস করলো
—–একি তোমরা! আর আবির তুমি এতদিন কই ছিলে জারার সাথেই বা কোথা থেকে এলে! আরিয়ান কোথায় জারা?
——বাবা উনি আসলে ……
—-”কি বল? আরিয়ান কোথায় ! ভালোবাসার প্রতারনা
—– আমি এখানে ড্যাড!
জারা পেছনে তাঁকিয়ে অবাক কারণ আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ানকে দেখে আবির তো অবাকের চূড়ায় পৌঁছে গেল। সে তো তখন জারাকে ভয় দেখাতে মিথ্যে বলেছিল তারমানে আরিয়ান সত্যিই বেঁচে আছে
আরিয়ান কে দেখে জারা যতটা না অবাক হলো তার থেকেও বেশি আনন্দিত হলো জারা দৌড়ে আরিয়ানের কাছে গেল তখন আরিয়ান সেখান থেকে সরে এসে ওর বাবার সামনে দাঁড়ালো।
আরিয়ানের বাবা আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
—–তুমি এতক্ষণ কই ছিলে?
—–ড্যাড আমি গাড়ি পার্কিং করছিলাম। আবিরকে আমিই যেতে বলেছিলাম আমাদের রিসিভ করতে।
—-তা এয়ারপোর্টে যেতে কি 3 দিন লাগে ? ঐ গর্দব এতদিন কোথায় ছিল?
—–ড্যাড আসলে আমি ওকে বলেছিলাম কিছুদিন কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসতে তাহলে মন ভালো হয়ে যাবে তাই ও গেছে।
—-তোমার কথা আমার পুরোপুরি সত্যি মনে হচ্ছেনা। তা তোমার তো আরো 3 দিন থাকার কথা ছিল। এত জলদি ফিরে এলে যে !
—-ড্যাড আমার দরকারি একটা কাজ পরে যায় তাই ইমিডিয়েটলি ব্যাক করতে হলো।
—–আচ্ছা অনেক জার্নি করে এসেছো এবার বউমাকে নিয়ে ঘরে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও সার্ভেন্ট খাবার দিয়ে আসবে।
—-ঠিক আছে।
আরিয়ানকে দেখে লিজা দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তখনি ওর পেটে চাপ পড়ায় উহু শব্দ করে উঠল। লিজা ঘাবড়ে গিয়ে বলল কি হয়েছে আরিয়ান? আরিয়ান বলল তেমন কিছুনা আমার ভালো লাগছেনা আমি রেস্ট নিব সরো। বলেই আরিয়ান উপরে রুমে চলে গেল জারাও আরিয়ানের পেছন পেছন গেল। আবির তো খুব ভয় পেয়ে গেছে সাথে অনুতপ্ত বোধ কাজ করছে ওর মধ্যে। যে ভাই ওকে এত ভালোবাসে তার সাথে এমনটা করলো কি করে ও ! ভাবতেই ওর কান্না পাচ্ছে আর রাগে মাথার চুল ছিড়ছে।
জারা আরিয়ানের পেছনে দাঁড়িয়ে আরিয়ানকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মানুষটার খুব লেগেছে। আর এই মানুষটা এত ভালো কেন ? তার যে এত ভালো মানুষের কোনো দরকার নেই যে শুধু নিজের কথা ছাড়া সবার কথা ভাবে। এত ভালো হওয়ার কারণেই আজ তার এই অবস্থা। তবে জারা নিজেকেই বেশি দোষী ভাবে। আজ যদি ও আবিরের জীবনে না আসতো তাহলে এমন কিছুই হতো না। আরিয়ানও ওকে দেখতো না আর ভালোবাসতোনা। আসলে জারার এখন নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। নিজেকেই সে ফেস করতে পারছেনা। আরিয়ানকে করবে কিভাবে?
জারাকে ঐভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিয়ান রাগি গলায় বলল
—–‘এখানে কি এমন হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ! যত্তসব
বলেই জারাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। জারা বেশ বুঝতে পারছে আরিয়ান তার উপর রেগে আছে।
কিন্তু ও কি করবে? ওর তো করার কিছুই নেই। আরিয়ানের কথা চিন্তা করেই তো আবিরের সাথে দেশে ফিরলো।
আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে না খেয়ে শুয়ে পড়লো জারা অনেক ডাকে কিন্তু ও উঠেনা। তাই জারাও না খেয়েই শুয়ে পড়ে।
যত দিন যাচ্ছে আরিয়ান তত জারাকে এড়িয়ে চলছে। একদিন হুট করে অফিস থেকে এসে আরিয়ান জারার কাছে গিয়ে ওকে ডাকে। জারা তো খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায় আজ কতদিন পর তার আরিয়ান তার নাম নিয়েছে। জারা হুম বলার সময়ও পেল না তার আগেই আরিয়ানের কথা শুনে অবাক।
আরিয়ান জারার সামনে একটা ডিভোর্স পেপার দিয়ে বলল
—-এই নাও তোমাকে মুক্তি দিলাম। আমি সাইন করে দিয়েছি এবার তুমিও সাইন করে আমাকে মুক্তি দাও।
   ভালোবাসার প্রতারনা
—–মানে খুব সিম্পল। ডিভোর্সের পর তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো। মানে তুমি আবিরকে বিয়ে করবে আর আমি লিজাকে বিয়ে করবো।
—–এসব আপনি কি বলছেন ?
—–কেন ভুল কিছু বলেছি ! তুই তো এটাই চেয়েছিলি। মুক্তি দিলাম তোকে যা এবার সুখে সংসার কর আবিরের সাথে আর শুন কোনো চিন্তা করবিনা তোর ভরণ পোষনের দায়িত্ব যেহেতু একবার আমি নিয়েইছি তাই আমি সারাজীবন সেই দায়িত্ব পালন করবো। কারণ এক রাতের জন্য হলেও নিজের অধিকার আদায় করতে পেরেছি। তাই তোর যা পাওনা সব মিটিয়ে দিব।
কথা গুলো শুনে জারা তো অবাক। কি বলবে ও! ও তো চায় না আরিয়ানকে ছাড়তে কারণ ও যে ভালোবেসে ফেলেছে আরিয়ানকে। আর এখন সে কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দিবে?
—–কি হলো আমায় মুক্তি দিবেনা ?
..... বাকিটা শেষ পর্বে.