ভালোবাসার প্রতারণা

 

জারা আরিয়ানের সাথে একটু কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু আরিয়ান কোথায় যেন তখন চলে গেল। জারাও আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লো। রাতে যখন জারার ঘুম ভাঙ্গে তখন চোখ খুলো দেখে আরিয়ান তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। জারা কিছু বলতে যাবে আরিয়ান উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে জারাকে বলল ডিনার করে নিতে কিছুক্ষণ পর বের হবে। জারাও ডিনার করে নিল। ডিনারের পর ওরা দুজন নিচে গেল। তখন একটা ছেলে সেখানে আসে আরিয়ান তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে
—– কিরে ভাই এই কি আমাদের ভাবি?
—–হুম। জারা ওর নাম অনিক আমার বেষ্টফ্রেন্ড। বালিতে কাল আমাদের সাথে অনিকও যাবে।
—-ওহ। হেলো ভাইয়া।
—–হেলো।
তারপর ওরা সবাই গল্পগুজক করে যে যার রুমে চলে গেল। সকালে সবাই একসাথে রওনা হলো বালির উদ্দেশ্যে তখনও ফ্লাইটে কেউ একজন ছিল। যে একটা বড় ষড়যন্ত্র কষছে। বালিতে পৌঁছে একদিন থেকে পরেরদিন পিঙ্ক বীচে গেল। জারা তো খুব মজা করছে। অনেক আনন্দ হচ্ছে আর অনিক তো সারাক্ষণ সবাইকে হাঁসাচ্ছে। কিন্তু এই দুইদিনেও একবারো আরিয়ান জারার সাথে কথা বলে নাই কারণ সে জারাকে টাইম দিতে চায়। আর আজ তো আরিয়ান জারাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এনেছে। আজ সে জারাকে প্রোপোজ করবে। মনের কথা বলবে। আজ অনেক আশা নিয়েই আরিয়ান জারার কাছে এসেছে। জারা আরিয়ানকে ওর দিকে আসতে দেখে মনের অজান্তেই খুশি হয়ে গেল। চোখে পানি টলমল করছে কারণ আরিয়ান হাসিমুখ করে ওর দিকে আসছে। আরিয়ান এসে জারার সামনে দাঁড়ালো আর বলতে লাগলো
—–জারা আজ যদি তোমার থেকে কিছু চাই আমায় দিবে!
—–কি?
—–একটু ভালোবাসা!
—–(জারা কিছু বলছেনা সে কি বলবে কারণ আবিরকেই তো ও ভালোবাসে আর এখন আরিয়ানকে দেখে ওর কেন জানি মনে হচ্ছে একটা সুজোগ দেওয়া দরকার।)
—-জারা আই লাভ ইউ (একটা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে)
জারা তো অবাক আরিয়ান ওকে ভালোবাসে! জারা কিছুটা পিঁছিয়ে গেল আরিয়ান তখন জারার হাত ধরে বলল
—-প্লিজ জারা আমায় ফিরিয়ে দিয় না।
—–আপনি এসব কি বলছেন? আপনি আমাকে ভালোবাসেন !
—–হুম খুব। তোমাকে তখন থেকেই ভালোবাসি যখন তোমাকে প্রথম দেখি।
—–মানে!
—–মানে আমি তোমাকে দুই বছর আগে থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আবিরের ভালোবাসা ছিলে তাই আমি তোমাকে ওর থেকে ছিনিয়ে নেই নি। কিন্তু দেখ নিয়তি কতো ওদ্ভুত! তুমিই আমার বউ হলে। তারমানে উপরওয়ালা আমাদের জুটি অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। একটা সুজোগ কি দেওয়া যায় না জারা!
জারা কিছু বলতে যাবে তখনিই কেউ একজন ওর হাত ধরে টান দিল। সে আর কেউ নয় আবির।
—ওয়াও গ্রেট ভাই। নিজের ভাইয়ের ভালোবাসার দিকে চোখ দিতে তোমার। একটুও বাধলো না।
—-আবির!(রেগে গিয়ে)
—-কি ? কি বলবে তুমি! তোমার বলার কোনো মুখ আছে?
——যার হাত ধরে আছিস সে তোর ভাবি আর আমার বউ। ছেড়ে দে ওর হাত।
—–ছাড়ার জন্য তো ধরিনি। আজ আমি আমার জারাকে নিয়ে যাবো।
—-মানে !
–আজ আমি আমার জারাকে তোমার থেকে নিয়ে যাবো। অনেক দূরে আর সেখানে গিয়ে আমরা সংসার করবো।
—-এসব তুমি কি বলছো আবির?(জারা বলে উঠল)
—- যা বলেছি ঠিক বলেছি। তুই এখনি আমার সাথে এখান থেকে চলে যাবি।
—– আবির তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! এসব কথা বলার মানে কি? আমি এখনো আইনত আর ধর্মীয় নীতিতে আরিয়ানের স্ত্রী। আমার আগে ওর সাথে ডিভোর্স হবে তারপরে না বিয়ে। তুমি এসব কেন করছো আবির!
—– এইটা বল যে আরিয়ান চৌধূরী এখন তোর সফ্ট কর্ণার। আর তুই সেই সফ্ট কর্ণারটাকে ভালোবেসে ফেলেছিস। তাই না!
—–আবির তুমি এসব কি বলছো! আমি তো যা সত্যি তাই বলছি।
—–আবির তুই জারাকে ছেড়ে দে।
—ছাড়বো না। কি করবে?
—‘আবির এর ফল কিন্তু ভালো হবেনা।
বলেই যেই না আরিয়ান কিছু করতে যাবে ওমনি কিছু গুন্ডা এসে আরিয়ানকে মারতে লাগলো কিন্তু বেশিক্ষণ পারলো না। আরিয়ান একাই ওদের মেরে ভর্তা করছে। কিন্তু তখনিই ওদের মধ্যে কেউ একজন আরিয়ানের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। আর গড় গড় করে রক্ত পড়তে থাকে। জারা এই অবস্থা দেখে চিৎকার করে ওঠে। দৌড়ে গিয়ে আরিয়ানের মাথা নিজের কোলে রেখে বলে
—– আরিয়ান তোমার কিছু হবে না। আমি তোমাকে হসপিটাল নিয়ে যাবো। অনিক ভাইয়া কোথায়? অনিক ভাইয়া অনিক ভাইয়া(জারা অনিককে ডাকতে লাগে আর পাগলের মতো করতে থাকে।)
এদিকে আবির গিয়ে ঐ গুন্ডাগুলোকে বলে
—–তোদের বলেছি ওকে আটকে রাখতে যতক্ষণ না আমি জারাকে নিয়ে যাচ্ছি আর তোরা কি করলি এটা? আমার ভাইকে এভাবে……
ওরা চারজন ছিল চারজনের মধ্যে তিনজনই বাঙ্গালি ছিল আর ওদের মধ্যে যে মেইন ছিল সে হলো বিদেশি।
—– sorry sir beacuse we have no another option he is very strong….
—–get lost……
এদিকে জারা কেঁদেই যাচ্ছে অনিক যে কোথায় গেল তাও আবার এই জায়গায় এখন কোন মানুষজন নেই কারণ ওরা মেইন পয়েন্ট থেকে কিছুটা দূরে যার ফলে জারা কারো থেকে হেল্প চাইতেও পারছেনা। জারা অনিককে ডাকার জন্য যেই না উঠে গেল ওমনি আবির ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল আরিয়ান রক্ত মাখা হাত নিয়ে জারাকে থামতে বলল কিন্তু আবির জোর করে জারাকে নিয়ে গেল আরিয়ানের চোখ থেকে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে একদৃষ্টিতে জারা আর আবিরের যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
অনিক অনেক্ষণ যাবৎ জারা আর আরিয়ানকে না দেখে খুঁজতে লাগলো। একসময় সেখানে এসে পৌঁছলো যেখানে আরিয়ান নিথর দেহ পড়ে আছে। অনিক চিৎকার করে উঠল আরিয়ান কে দেখে তারপর যত দ্রুত সম্ভব সবার সাহায্যের মাধ্যমে আরিয়ানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হলো অনেক সময় লাগবে যেতে তাই ঐখানেই আরিয়ানের কিছু সাময়িক ট্রিটমেন্ট করা হলো। হসপিটালে পৌঁছে আরিয়ানকে আইসিউতে পাঠানো হলো আর অনিক জারাকে ফোন দিল। কিন্তু ওর ফোন বন্ধ অনিক চিন্তায় পড়ে গেল। জারার কিছু হলো না তো। এদিকে জারাকে খুজতেও যেতে পারছেনা। কারণ আরিয়ানের কন্ডিশন ভালো না।
1 ঘন্টা পর….. ভালোবাসার প্রতারণা
আরিয়ানের অপারেশন সফল হলো। এদিকে আরিয়ানের জ্ঞান ফিরতেও 2 ঘন্টা লাগবে তাই অনিক আরিয়ানের কাছেই ছিল। তবে জারাকে খুঁজার জন্য লোক লাগিয়েছে ওর ধারণা যারা আরিয়ানের এই অবস্থা করেছে তারা জারারও ক্ষতি করতে পারে।
অন্যদিকে….
আবির জারাকে নিয়ে হোটেলে আসলো। জারাকে রেডী হতে বলল কারণ ওরা একটু পর বের হবে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। জারা আবিরের দিকে ঘৃনার দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। আবির ওকে এভাবে তাঁকিয়ে আছো কেন বললেই জারা আবিরকে কষে এক থাপ্পর মারে। আর বলে
—– তুমি কোনো মানুষের আওতায় পড়ো না আবির। ছি আমার ভাবতেই লজ্জা লাগছে আমি তোমার মতো একজন স্বার্থপরকে ভালোবাসলাম। কিভাবে পারলে নিজের ভাইকে মারতে কিভাবে!
—–হ্যাঁ মেরেছি। তোর জন্য মেরেছি আর কিছু শুনতে চাস! ভালোবাসার প্রতারণা
—–আমি তোমার কাছে থাকবো না। আমি এক্ষুণি আরিয়ানের কাছে যাবো। আমার মন বলছে ওর কিছু হবে না। ও আমাকে সত্যিই ভালোবাসে আমি আজ তা বুঝতে পারছি। যেই মানুষটা আমার জন্য নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় সে আর যাই হোক না কেন প্রতারক না। প্রতারক তো তুমি। আমার সাথে প্রতারণা করেছো। ঐ দিন তুমি সত্যিই অডিশনে গিয়েছিলে আমার মেসেজ দেওয়ার পর তো একবারো বলো নাই যে তুমি যাবে না। তুমি তো এক কথায় হ্যাঁ বলে দিয়েছিলে।
—–ভুল করেছি। এখন তার সাজা পেয়েছি। যেহেতু ভাই নেই এখন আর কেউ আমাদের মাঝে আসবেনা।আর শুন আমরা দেশে ব্যাক করেই বিয়েটা করে ফেলবো।
—- আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা। যে নিজের ভাইকে খুন করতে যায় তাকে বিয়ে তো দূরের কথা তার চেহারাও আমি দেখতে চাইনা।
——জারা!!(চিৎকার করে)
——আজ তুমি আমাকে আটকে রাখতে পারবে না। আমি তার কাছেই যাবো যে আমাকে প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসে। ভালোবাসার প্রতারণা
—-পারবিনা।
বলেই আবির জারার মুখে স্প্রে করলো সাথে সাথে জারা জ্ঞান হারালো।
..... চলবে... ভালোবাসার প্রতারণা