অবুঝ ভালবাসা


কি হয়ছে তোর?দিন দিন তুই এমন পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছিস কেনো। কারও সাথে কথা বলিস না,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না,সব সময় নিজেকে একা করে রাখিস ।
কেনো?
কি হয়েছে তোর রোহান?তুই বল আমাকে ।আমি তোর মা । weblovelystory অবুঝ ভালবাসা
কথা গুলো বলতে বলতেই রোহান এর মা কেঁদে দেই।মুখের মধ্যে আঁচল চেপে হু হূ করে কাদতে থাকেন তিনি।তার মুখের কথা গুলি আর সম্পূর্ণ হয় না।
তাদের একমাত্র সন্তান রোহান।ছোটবেলা থেকে যাকে অনেক আদর যত্নে মানুষ করেছে।একটুও কমতি রাখেননি তার সুখের।গত এক মাস আগেও সে বেশ ভালই ছিল।কিন্তু তারপর থেকে সে জানি কেমন একটা হয়ে গেছে।তাদের সেই প্রাণোচ্ছল ছেলে যেনো আর আগের মত নেই।
কারও সাথে কথা বলে না।না কলেজ না বন্ধুদের সাথে আড্ডা কোথাও যাই না।বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।নিজে থেকে কারও খোজ ত নেই ই না উল্টে ওরা ফোন বা মেসেজ করলেও reply করে না।নিজেকে সারাদিন বন্দী করে রাখে ঘরের মধ্যে।সে খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।সোনার বরণ চেহারাটি যেনো আর আগের মত নেই।বহু রাত জেগে থাকার ফলে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।দেখে চেনাই যায় না এটা আগের রোহান।
রোহানের বাবা মা প্রথম প্রথম বিষয়টা সাভাবিক ভাবে নিলেও তারা ক্রমশঃ বুঝতে পারে বিষয় টা মোটেও সাভাবিক ছিল না।
রোহান এর বাবা অপূর্ব বাবু ছেলের চিন্তায় অধীর হয়ে গেছেন।ছেলের সুখের জন্য তিনি সব কিছু করতে পারেন।তার এই অবস্থা দেখে তিনি প্রথমে ছেলেকে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলেন,কি হয়েছে তার।সন্তোষজনক উত্তর তিনি কখনোই পাননি।অনেকবার ডক্টর এর কাছে নিয়ে গেছেন।কিছুই উন্নতি হয়নি তাতে,বরং দিনের পর দিন অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।ছেলের চিন্তায় রাতে তিনি ঘুমোতে পারেননি কিছুদিন থেকে।দু চোখের পাতা যেনো কিছুতেই এক হতে চাই না।কি করলে তার ছেলেটা ভালো হয়ে যাবে।তার হটাৎ এমন পরিবর্তনে তিনি চিন্তা গ্রস্ত।তাদের ছেলে এতটাও লাজুক বা নরম প্রকৃতির নয়।কোনো কিছুতে হয়তো সে অনেক বেশি আঘাত পেয়েছে যার ফলে তার অবস্থা এইরকম হয়েছে।নিজে এই ব্যাপারে ছেলেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না।তাই তিনি স্ত্রীকে বলেন ছেলের সাথে কথা বলার জন্য।
রহিমা বেগম ও কথা বলে কিছু জানতে পারেন না।ছেলের বুকে জমে থাকা কষ্টর ব্যাপারে।
মুখে আঁচল চেপে অনেক্ষন কাদার পর তিনি ছেলের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন।
মা:-এইভাবে চুপ করে থাকিস না বাবা।আমি তোর মা।কি হয়েছে আমাকে বল।আমি তোর কষ্ট দেখতে পারছি না।তুই আমার সাথে আর একবার ডক্টর এর কাছে চল।
রোহান:- মা আমার কিছু হয়নি।আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ।
মা:- তোকে শেষ বারের মত বলছি ,তুই আমার সাথে যাবি কি না বল?
রোহান:- অনেক দেরি হয়ে গেছে মা। weblovelystory অবুঝ ভালবাসা
মা:- এসব কি বলছিস তুই বাবা।এমন কথা বলতে নেই।চুপ কর তুই।(কাদতে কাদতে।)
তোর বাবা বাইরে দাড়িয়ে আছেন।উনি নিজে তোকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবেন ।তুই তৈরি হয়ে নে।
অতঃপর একপ্রকার জোর করেই রোহানকে নিয়ে যাওয়া হয়।
হসপিটালে ডক্টর রুমের বাইরে বসে অপেক্ষা করছে রোহান।সঙ্গে তার বাবা মা ও মামা এসেছেন।ওনারা ডক্টর এর সঙ্গে কথা বলার জন্য ভেতরে গেছেন।অনেক্ষন থেকে অপেক্ষা করার ফলে সে প্রায় ধৈর্যহারা হয়ে যায়।সে মনে মনে বলতে থাকে,,,,
এত্তক্ষণ হয়ে গেলো তবুও আসছেনা কেনো।কি এমন কথা ছিল যে ডক্টর আংকেল তার সামনে বলতে পারলেন না।মা বাবাকে পার্সোনাল ডেকে নিয়ে বলছেন।বাইরে এতক্ষন থেকে বসে আছে আছে সে।নাহ আর পারে না।সে উঠে গিয়ে এবার ডক্টর রুমের দিকে পা বাড়ায়।দরজার কাছাকাছি আসতেই ডক্টরের কথা শুনে ওখানেই থমকে যায় সে।সমস্ত পৃথিবী যেনো অন্ধকার দেখে সে,পায়ের তলা থেকে মাটিটা যেনো সরে গেলো।
" আপনার ছেলে ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত।"
তাকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়।অনেক লেট হয়ে গেছে।
সামনে বসানো বাবা মায়ের মলিন মুখের দিকে তখন তাকানো যায় না।তাদের একমাত্র সন্তান নাকি কান্সার আক্রান্ত।তাদের বেচেঁ থাকার শেষ একমাত্র সম্বল সে নাকি আর বাঁচবে না।
মায়ের দুচোখ দিয়ে অবিরল ধারা বর্ষিত হচ্ছে। দু গাল বেয়ে অনবরত টপ টপ করে ঝরতে থাকে অশ্রু।
মা ডক্টর বাবুকে অনুরোধ করে চলেছে।
মা:- কিছু একটা করুন ডক্টর বাবু।আমার একমাত্র ছেলে।ওর কিছু হয়ে গেলে আমরা কীকরে বাঁচবো।
কথা গুলো আর শেষ করতে পারেনা মুখে আঁচল চেপে কাদতে থাকেন।
অন্যদিকে বাবাকে দেখা যায় তিনি কোনো কথা বলছেন না।যেনো পাথর হয়ে গেছেন।
এই অবস্থায় মামাই কথা বলছেন এখন।
মামা:- ডক্টর বাবু আর কি কোনোই উপায় নেই। weblovelystory অবুঝ ভালবাসা
ডক্টর:- দেখুন আপনারা খুব ভালো করেই জানেন যে আজ পর্যন্ত কান্সার রোগের কোনো ঔষধ আবিষ্কার হয়নি।অনেক রোগী আজকাল এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।রোহানের ব্যাপার টা আমি দেখেছি।ওর এই অবস্থার কারণ ওর ডিপ্রেশন।যা দিনের পর দিন ভয়ানক ভাবে ওর ক্ষতি করেছে।ওর নিজের ই বেচেঁ থাকার ইচ্ছে নেই।অনেক দেরি হয়ে গেছে আর কিছু করার নেই।ওর মেয়াদ আর মাত্র তিন মাস।
হসপিটাল থেকে ফেরা অনেক্ষন হয়ে গেছে।আমি বারান্দায় বসে আকাশের দিকে চেয়ে ভাবছি।ডক্টর এর কাছে থেকে সোনা কথা গুলো ভাবছি।মনের অজান্তেই চোখের এক কোন থেকে জল গড়িয়ে পড়ল।আকাশের তারাগুলি আজ কেমন জানি অনেক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।শুনেছিলাম মানুষ মরে গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়।আমিও হয়তো আকাশের তারা হয়ে যাবো এইবার।আর বেশিদিন নেই।ভাবনা গুলো ক্রমে আমার মনে বাথার দোলা সৃষ্টি করছে।কিন্তু আমার এই কষ্ট সেই কষ্টের তুলনায় কিছুই না।আমার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে আম্মু আসলেন। হাতে খাবারের প্লেট।
আজকাল খাবার দেখলেই মেজাজ টা বিগড়ে যায়।খিদে টা আমার মরে গেছে।আজ অনেকদিন থেকে।আম্মু আমার সামনে এসে বলতে লাগলেন,,,
মা:- খাবার টা খেয়ে নে রোহান।
রোহান:- আমার খিদে নেই মা।
মা:- আই আমি তোকে নিজ হতে খাইয়ে দিচ্ছি। আই বাবা।
রোহান:- মা জোর করোনা সত্যিই আমার খিদে নেই।তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো।
আমার কথা শুনে মা কাদতে শুরু করেছে।
মা:- কি হয়েছে তোর বল।আজ তোকে বলতেই হবে রোহান।
রোহান:- কই।কিছু হয়নি মা।
মা:- আমি তোর মা।সবার থেকে তুই লুকোতে পারলেও আমার থেকে পারবি না রোহান।বল আমাকে তোর মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্টের কারণ কি?
রোহান:- বললাম তো কিছু না ।
মা:- তোর এমন হয়ে যাওয়ার কারণ কি ?সত্যি করে বল আমার দিব্যি রইলো তোকে।
তুই কি কাওকে ভালবাসিস? weblovelystory অবুঝ ভালবাসা
আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না মায়ের শেষ প্রশ্ন টা আমার বুকে শেলের মত বিধলো।আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিল।
.....বুকের বামপাশে জমে থাকা কষ্ট গুলো আবার জেগে উঠলো।
আমি "রাত্রি" বলে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমার কান্না দেখে মাও কাদতে শুরু করেছেন।
মা:- কে এই রাত্রি?কিভাবে কি হলো রোহান ?সব কিছু আমাকে খুলে বল....
বলবো মা ,বলবো ,সব বলব ।আজ তোমাকে সব কিছু খুলে বলবো.......
সেইদিন...............
চলবে......??