অবুঝ ভালবাসা

সেই রাতের পর থেকে চার দিন পেরিয়ে গেছে,অথচ এখনও সে সাড়া দিলো না।হুম একটা মেয়ে বটে।আমার মত একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে তাও এমন ইগনোর করছে।
ওর প্রোফাইল টা খুব ভালো ভাবেই দেখেছি আমি। ফ্রেন্ড লিস্ট এ ছেলে প্রায় নেই বললেই চলে।সেই জন্যই হয়তো রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করছে না।কিন্তু আমিও সেই ছেলে,,,,,রোহান এর রিকোয়েস্ট কোনো মেয়ে ইগনোর করবে এটা অন্তত আমি সহ্য করবো না।তাই মনের মধ্যে একপ্রকার জেদ চেপে বসলো।
কলেজ এ গিয়ে দেখি হিয়া ও অনিকেত আমার আগেই চলে এসেছে।
অনিকেত:- এইযে লাট সাহেব এতক্ষনে আপনার আসার সময় হলো বুঝি।ক টা বাজে একবার খেয়াল করেছিস।
অনিকেত তার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে দেখিয়ে বলে। weblovelystory অবুঝ ভালবাসা
হিয়া:- কি ব্যাপার তোর ??? .......কলেজ টপার হয়ে আর পড়াশোনায় মন বসছে না বুঝি।নতুন ইয়ার এ উঠে পড়াশোনা কিছু করতে হবে না নাকি???🤨আমি কিন্তু কাকিমাকে গিয়ে বলে দেব।তুই খুব উড়ে বেরাচ্ছিস......🤨
হিয়া একপ্রকার শাসনের সুরে কথাটা বলে উঠলো রোহানকে।অন্যান্য মেয়েরা ভয় পেলেও ও মোটেও একটুও ভয় পাই না রোহানকে।বরং ওর সাথে মজা করে ওকে আরো খেপিয়ে দায়।রোহান ,অনিকেত আর হিয়া এরা অনেকদিনের বন্ধু।বছরের পর বছর চলে যায়,কিন্তু অটল থেকে যায় তাদের বন্ধুত্ব।পরিবার থেকে আলাদা করে দেখলে মনে হয় ওদের তিন জনের যেনো আলাদা একটা পরিবার।একে অপরের বিপদে অপদে সবসময় পাশে।
অনিকেত:- দ্যাখ হিরো সোন....কলেজ এ দুটো বছর পার করে দিলাম আমরা।এই বছর ই আমাদের শেষ ,,,,তাই এবার সবচেয়ে ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে হবে।বুঝলি তো...??
রোহান:- হুম সে তো জানই। আর তোরা অত চাপ নিচ্ছিস কেনো,,,,আমি তো আছি ।রেজাল্ট ত এই কয়েকদিন হলো পেলাম,,,,, আর কয়েকটা দিন যেতে দে।তারপর ভালোভাবে পড়ায় মন দেওয়া যাবে।এখন আগে তোরা ক্যান্টিন এ চল।আমার বিশাল খুদা পেয়েছে।
হিয়া:- হ্যা আমারও ভীষণ খুদা পেয়েছে ।আগে ক্যান্টিন চল।
অনিকেত:- হ্যা তোরই তো আগে খুদা পাবে ,,,,,, যত রাজ্যের কাজ তোকেই তো সব করতে হয়না,তাই কাজ করতে গিয়ে হাফিয়ে যাস আর খুদা পাই।আসলে তোর ত সবসময়ই খাই খাই।এত খাস তাও সেই চিকন।😂
হিয়া:- এই বিরাল।আমাকে রেসপেক্ট দিয়ে কথা বল,,,,,বুঝেছিস?নাহলে মেরে তোর নাক ফাটিয়ে দেবো.........বদমাইশ।এত ভালো একটা মেয়েকে বলে কিনা.....anyway এখন খিদে পেয়েছে তাই কিছু বললাম না তোকে । দাড়া ক্যান্টিন থেকে আসতে দে,তারপর তোর খবর নিচ্ছি.......😠
ওদের দুইজনের কথাই রোহান কিছু বলে না । ও শুধু হাসে ওদের কথা শুনে ।
রোহান:- আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে,,,,এখন তো চল!
রোহান, অনিকেত আর হিয়া ক্যান্টিন এর দিকে চলে গেলো।
ওরা ইতিমধ্যে খাবার অর্ডার করে বসে আছে।খাবার এখনও আসেনি ,তাই সবাই যে যার নিজের মতো করে সময় পার করছে।হিয়া বসে বসে নিজের ফোন টিপছে।
ওর ফোন টেপা দেখে রোহানের একজনের কথা মনে পড়ে যায়......।
রোহান:- কি ব্যাপার রে ,তোর ওই ফ্রেন্ড এর খবর কি।তোকে কি কাজ দিয়েছিলাম আমি??
হিয়া:- ওহ হ্যাঁ !! তুই একটু দাড়া।
এই বলে হিয়া তার ফোন থেকে তার সেই বান্ধবীকে কল লাগাই।রাত্রির বেস্ট ফ্রন্ডকে।তাকে বলে রাত্রির সঙ্গে তার খুবই জরুরি একটু দরকার আছে ।তো তার সাথে যেনো একটু কথা বলায় সে।বান্ধবী রাজি হয়ে যায়।সে সঙ্গে সঙ্গেই কনফারেন্স থেকে রাত্রিকে কল দেয়।
হিয়া শুনতে পাই ওপাশ থেকে কোনো একটি মেয়ে হেলো বলে উঠলো।গলাটি বেশ।
কাজের বাহানা দিয়ে হিয়া রাত্রিকে বলে যে রোহান কোনো একটা হেল্প এর জন্য রাত্রির সঙ্গে কন্টাক্ট করতে চাই।এই কথা শুনে রাত্রি কিছুক্ষন চুপ হয়ে যায়।পরক্ষণে সে আবার সম্মতি জানায়।
রাত্রির কথাই হিয়ার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
সে ফোন কেটে দিয়ে নিজের পান্ডিত্তে নিজেই খুশি হয়ে একদফা নেচেই ওঠে......।
হিয়া:- দেখেছিস বাঁদর আর বিরাল ,,,,,,আমি কতটা ট্যালেন্টেড।যে কাজ তোরা পারিস না, তা আমি সেকেন্ডেই করে দেখায়।ইটস হিয়া,,,,😎
অনিকেত:- আইছে ট্যালেন্টেড,,,,😏 নিজের কাজ টাই ঠিক ঠাক ভাবে করতে পারে না,,,,,,,
হিয়া:- weblovelystory অবুঝ ভালবাসা😡
রোহান:- আচ্ছা আচ্ছা অনেক হয়েছে ঝামেলা এবার তোরা চুপ কর।তুই তো জানিস যে হিয়া সত্যিই বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে ,তাহলে তুই এমন কথা বলছিস কেন 😜।হিয়া তুই রাগ করিস না ও সত্যিই একটা বীরাল ।ভালো মেয়ে কোনটা চেনে না।তুই শান্ত হ।😂
হিয়া:- থাক থাক তোমার আর বলা লাগবে না।এই মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলো কেনো বলছো হিয়া তা খুব ভালো করেই জানে ।
আপনার কাজ হয়ে গেছে😏।আজকে রাতে মেসেজ দিস ওকে, রাতের মধ্যেই ও রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে নিবে।
রোহান:- আচ্ছা আচ্ছা,,,,,,,,,thank u চুডেল🤭। weblovelystory অবুঝ ভালবাসা
অনিকেত:- 🤭
হিয়া:- 🤬🤨
রোহান:- আরে না না কিছু বলিনি তো তোকে আমি ,,,,,বলছি খাবার টা খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।
হিয়া :- হুম,,,
এরপর আরও আধ ঘণ্টা পর আমরা কান্টিন থেকে বের হলাম।বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় থাকলে কিভাবে সময় কেটে যায় বুঝতেই পারি না।
ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
পড়ন্ত বিকেলের সোনালী আলোয় আলোকিত চারিদিক। কলেজ এর বাগানের গাছ গুলি সেই আলোয় আরো রঙিন লাগছে।কেয়ারি করে লাগানো বাগানের ফুল গাছ গুলিতে অনেক ফুল ফুটেছে।একদল ভ্রমর আর প্রজাপতির আনাগোনা সেখানে।রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের মাথার উপরে থাকা ফুলগুলোর সন্দর্য যেনো অনেকগুন বেড়ে গেছে।বিকেলের সূর্যের মৃদু সেই আলোয় আকাশটা আজ রঙিন।কৃষ্ণচূড়া গাছটায় কয়েকটি পাখি বসে একই সুরে ডেকে চলেছে।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে চারিদিকে।এই বাতাসে যেনো কারো উপস্থিতি অনুভব করছি। শান্ত,অথচ চঞ্চল যার বৈশিষ্ট্য।ঘাসের ওপর ঝরে পড়েছে কয়েকগোছা কৃষ্ণচূড়া ফুল। মৃদুমন্দ বাতাসের দোলাই পায়ের তলার দূর্বা ঘাস গুলি পর্যন্ত দুলছে।
কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমি এই সমস্ত কিছু লক্ষ্য করছি।প্রকৃতির সঙ্গে আমার অবাধ মেলামেশা প্রথম থেকেই।ভীষণ ভালো লাগে আমার এই সৌন্দর্য গুলি উপভোগ করতে।প্রভাতের সূর্য,নির্জন দুপুর,পড়ন্ত বিকেল আর মুসলধারাই বৃষ্টি স্নাত কোনো রাত অথবা জোৎস্নালোকিত রাত এগুলি আমার ভীষন পছন্দের।এগুলোর মাঝে থাকলে যেনো আমি অন্য কোনো জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
বাসায় এসে ফোন টা হতে নিয়েই অবাক হয়ে গেলাম।অবশেষে সে সাড়া দিয়েছে।আমার রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করেছে।
আমি সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ দিলাম, হাই লিখে। ও অনলাইন ছিল না সেইসময়।
একটু বারান্দার দিকে যাওয়া যাক।যেহেতু সে অনলাইন নেই। প্রকৃতিটাও আজ ভীষণ সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর।অনেকদিন পর বাগানের গাছ গুলির দিকে তাকালাম।গাছগুলি আমি লাগিয়েছি বটে কিন্তু তার পরিচর্যা করেছে রামিজ কাকু।অনেক বড় হয়ে গেছে সেগুলি।অনেক ফুল ও হয়েছে তাতে। কলেজ পড়াশোনা সব কিছু সামলাতে গিয়ে ওদের আর খেয়াল রাখা হয়ে ওঠে না । কৃষ্ণচূড়া আমার ভীষন পছন্দের।ভীষণ,,,,,,,,।তাই আমিই নিজের হাত বাগানের দুইদিকে দুটো কৃষ্ণচূড়া লাগিয়েছিলাম।এত এত ফুল থাকতে কৃষ্ণচূড়া যে কেনো এত ভালো লাগে ,,,,,,নিজেও জানি না..........। weblovelystory অবুঝ ভালবাসা
একটু পর আমি আমার রুমের মধ্যে ফিরে এলাম।ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি ,,,,,,,,সে মেসেজ এর রিপ্লাই করেছে......।
তার রিপ্লাই দেখে আমার আর একদফা মাথা ঘুরে গেল......