ভালোবাসার প্রতারণা part-4

ভালোবাসার প্রতারণা

তারপর যে যার মতো চলে গেল। এদিকে আবির রুমে গিয়ে ভাঙ্গচুর শুরু করে দিল। হঠাৎ তারার একটা ছবি দেখে ও ঐটা হাতে নিয়ে বলল
—–‘ প্রতারক আমি তোকে কখনো ক্ষমা করবো না। এই ছিল তোর ভালোবাসা! এতটা ঠুনকো? আমি আবির চৌধূরী আমি কথা দিচ্ছি তোকে আমি সুখে থাকতে দিব না। আমার জীবন যেমন নষ্ট করে দিলি আমিও তোর জীবন নষ্ট করে দিব। ছাড়বোনা তোকে ছাড়বোনা।
বলেই দেওয়ালে একটা ঘুসি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মিসেস রেবা কিছু বলতেও পারছে না তার ছেলেটা দুষ্টু প্রকৃতির ঠিকই কিন্তু যখন রাগ উঠে তখন তা আরিয়ানের সমান না হলেও আরিয়ানের মতোই অনেকটাই হিংস্র হয়ে যায়। ভালোবাসার প্রতারণা
অনুষ্ঠান শেষ। যে যার মতো নিজের রুমে চলে গেল আর অতিথিরা নিজেদের বাড়ি। আরিয়ান আর জারাও রুমে এসে চেন্জ করে নাইট আউটফিট পরে নিল। আজ অনেক টায়ার্ড আর টেনশনে থাকার কারণে আরিয়ান অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেল। জারা তো আবির আর আরিয়ানকে নিয়ে ভাবছে। একদিকে তার ভালোবাসা অন্য দিকে তার স্বামী। এখন সে কি করবে? ইচ্ছা তো করছে মরেই যেতে। আজ হয়তো তার ভুলের জন্যই এমন হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই জানালার দিকে নজর গেল তখনিই পর্দার আড়াল থেকে কেউ সরে গেল। ছায়ামূর্তি টা কে জারার বুঝতে সময় লাগলো না তাই সেও পেছন পেছন গেল। তখনিই কেউ একজন ওর হাত টান দিয়ে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গেল। সে আর কেউ নয় আবির।
—— ছলনাময়ী, মিথ্যেবাদী,প্রতারক। কেন ঠকালি আমাকে! বল কেন ঠকিয়েছিস? কি ক্ষতি করেছি আমি তোর! শুধু ভালোবেসেছি এতে ভুল কি ছিল! বল কি ভুল ছিল।
—– আবির আমার কথাটা শোন
—– কি শুনবো আর ! তুই খুব ভালো করেই জানিস যে এসব তোর জন্য হয়েছে।
—- আবির !
—— তুই নষ্টা মেয়ে। আমার সাথে প্রেম করে বিয়ে করলি আমার ভাইকে !
——চুপ করো আবির। আমি নষ্টা মেয়ে না আমার সম্বন্ধে এটা তোমার ভুল ধারণা।
—— তুই কি বলতে চাইছিস আমি মিথ্যুক! এর মধ্যে তোর কোন হাত নেই।
—– হ্যাঁ হ্যাঁ। মানছি আমি ভুল করেছি। এই পরিস্হিতি আজ আমার জন্য হয়েছে। এসবের পেছনে আমি আছি। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে আমি আরিয়ানকে বিয়ে করতে চেয়েছি। আমি নিজেইতো ভাবিনি ওনার সাথে আমার বিয়ে হবে। বিশ্বাস করো আবির! (জড়িয়ে ধরে)
—— Wow.. (হাত তালি দিতে দিতে)
—– ভাইয়া তুই!
——কেন আমার আসাটা বুঝি ঠিক হয়নি! এতরাতে নিজের ভাইয়ের বউকে জড়িয়ে ধরে আছিস তোর লজ্জা করছে না? ভালোবাসার প্রতারণা
—— ভাইয়া আসলে…….
——- আমি কিছু শুনতে চাইনা। যা হওয়ার তা কাল সকালেই হবে সবার সামনে। জারা এসো।
বলেই টানতে টানতে জারাকে নিয়ে গেল আর আবির সেদিকে তাঁকিয়ে রইলো।
((আজকে কনফিউশন দূর করে সুন্দর করে গল্পটা আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আশা করি অনেকের মাথা ঘুরানো এখন বন্ধ হবে।)
আরিয়ান জারাকে রুমে নিয়ে এসে শান্ত গলায় বলল ঘুমিয়ে পড়। জারার কথাটা হজম না হলেও ভালোই লেগেছে যাক কোনো রাগ দেখায় নাই। জারাও গিয়ে শুয়ে পড়লো। আরিয়ান বারান্দায় গিয়ে কাকে যেন ফোন দিল।
সকালে…….
সবাই ব্রেকফাস্ট করতে টেবিলে বসে আছে। আরিয়ান আর জারাও আসলো কিছুক্ষণ পর আবিরও আসলো। সবাইকে দেখে আরিয়ান বলল
—–ড্যাড! আমার একটা জরুরী কথা ছিল।
—–বলো।
—– আমি আর জারা হানিমুনে যেতে চাই।
কথাটা শুনে জারা একবার আরিয়ানের দিকে তাকালো আরেকবার আবিরের দিকে। আবিরও জারার দিকে তাঁকিয়ে আছে আর তাচ্ছ্যিলের হাঁসি দিচ্ছে। আবিরের বাবা বলল
——- তো যাও। ভালোই হবে কিছুদিন ঘুরাফেরা করলে মন ভালো থাকবে তার সাথে দুজন দুজনকে ভালো করে জানতে পারবে।
—— বাবা আমরা আজই যাচ্ছি।
—–আজকেই ? (মা)
——এনি প্রবলেম?
—– তোমার মমের প্রবলেম থাকলে কি হবে। আজ চাইলে আজই যাও। কিন্তু কোথায় যাবে!
—–ইন্দোনেশিয়া।
——ওকে।
সবাই খেয়ে চলে গেল কিন্তু আবির মাঝ পথেই খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল। আরিয়ান কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না। আর জারা! সে তো টেনশন করতে করতে মরেই যাচ্ছে। আবিরকে ফেস করবে কিভাবে!
জারা আবিরের রুমে গেল আরিয়ান তখন অফিসে।জারা আবিরকে স্যরি বলতে গিয়েছিল। রুমের দরজা খোলায় ছিল। আবির তখন গিটারে সুর উঠাচ্ছিল। জারা ওর সামনে গিয়ে বলল
—— আবির!
আবির জারাকে দেখে খুব রেগে গেল।জারার দুই বাহু চেপে ধরে বলল
—– কেন এসেছিস এখানে! ভালোবাসার প্রতারণা
—– আমি তোমাকে স্য…..
——হানিমুনে যাচ্ছিস। সেটাই তো বলতে এসেছিস!
—– ভুল বুঝছো আবির
—— আমি বারবার ভুল বুঝি! তুমি বলাতেই তো আমি অডিশনে গিয়েছিলাম। তাহলে আমার ভুলটা কোথায় বলো?
—–তোমার ভালোর জন্যই আমি বলেছিলাম। এটা তোমার ক্যারিয়ারের ব্যাপার ছিল। সেদিন সকালে যখন জানতে পারলাম অডিশনের লাস্ট ডেট তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজের গানকে আকড়ে ধরো। আমি তোমাকে তখন মেসেজ দিয়ে বলেছিলাম কারণ আমি চাইনা একটা জিনিসের জন্য তুমি সারাজীবন পস্তাও। তাই আমি ভেবেছিলাম বিয়েটা পরে করলেও হবে। আগে তুমি তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন টা পূরণ করো। কারণ আমি চাইনা এই না পারা জিনিসটা সারা জীবন তোমাকে তাড়া করুক। আর আরিয়ান কে বিয়ে করার কথা বলছো! আরে আমি তো জানতামই না যে ওর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম তুমি অডিশনে যাওনি আমার কথা ভেবে আমাদের সম্পর্কের কথা ভেবে তুমি ফিরে এসেছো।
—– এখন বলে কি হবে? যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। কিন্তু একটা কথা শুনে রাখো আমি তোমাকে সুখি হতে দিব না কখনো না।
এদিকে আরিয়ান ফিরে এসে জারাকে রুমে এসে কোথাও খুঁজে পাচ্ছ না। তখনিই জারা আবিরের রুম থেকে বের হয়ে আসলো। ব্যাপারটা আরিয়ান এড়িয়ে যাওয়ার ভান করলো। কিন্তু মন থেকে তো আর পারলো না। তার জারা যে তাকে ছেড়ে চলে যাবে। ভাবতেই বুকে চিন চিন ব্যাথা করছে।
জারাকে দেখে আরিয়ান বলল
—- রেডী হয়ে নাও। আমরা একটু পর বের হব।
—–ঠিক আছে।
জারা আর আরিয়ান সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কে জানতো জারা দুজন একা নয় আরেকজন ও গেছে ইন্দোনেশিয়ায়।
ইন্দোনেশিয়াতে পৌঁছে জারা আর আরিয়ান একটা ফাইভ স্টার হোটেলে উঠল সেখানে একরাত থেকে পরেরদিন বালি যাবে। জারা আর আরিয়ান রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। জারা খেয়াল করলো আরিয়ান তার সাথে কথা বলছেনা। এড়িয়ে চলছে না চাইতেও জারার খুব খারাপ লাগছে। এটাই হয়তো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। কবুল বলার পর আপনা আপনি একটা টান চলে আসে। চাইলেও তা ছিঁড়তে পারে না।
.... ‌চলবে..