ভালোবাসার প্রতারণা

পর্ব:১
বিয়ে হওয়ার পর বাবার বাড়ি থেকে চোখের জল বিসর্জন দিয়ে স্বামীর হাত ধরে এসেছিলাম। আমার আজ বিয়ে হয়েছে অনেক স্বপ্ন ছিল এই দিনটা নিয়ে আর যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে নিয়েও। আমার ভালোবাসা আবিরকে বিয়ে করতে পেরে আমার যে খুশির কোন সীমা নেই। আমি আজ তাকে পেয়েছি যাকে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ এমন একটা দিন গেল আমি তার মুখটায় দেখলাম না। এখন পর্যন্ত চোখে দেখলাম না। তাও যা দেখেছি তার মুখে সে রুমাল দিয়ে রেখেছিল মনে হচ্ছে সেই বউ। যাক এসব নিয়ে এখন আর কথা ভালোবাসার প্রতারণাবলবোনা।
বাসরঘরে বসে আছি তার অপেক্ষায়। সে এখনো আসছেনা অথচ তার এই দিনটার জন্য কতো ইচ্ছা জমা ছিল তা তো আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি তাকে খুব ভালোবাসি খুব। সেও আমায় খুব ভালোবাসে। দুদিন আগেও সে আমাকে ফোন করে বলল
— জারা আমাদের যদি ছেলে বাবু হয় নাম রাখবো ভতা আর মেয়ে বাবু হলে নাম রাখবো ভতি। কেমন?
তার এই কথা শুনে আমি হাঁসবো না কান্না করবো নাকি অবাক হবো বুঝতেই পারছিনা। এটা কোন নাম হলো শেষে কি না আমার সন্তানের নাম এতোটাই আজগুবি হবে! জাস্ট ভাবতে পারছিনা। তখন ই তাকে ধমক দিয়ে বললাম (ভালোবাসার প্রতারণা)
—- এমন আজগুবি নাম রাখলে আমি কিন্তু তোমায় বিয়ে করবোনা।
—– এই না না আর বলবো না। স্যরি । এই তোমার জন্য আমি কম যুদ্ধ করলাম তোমায় পেতে 6 টা বছর আমাকে সাধনা করতে হলো। তার কি হবে?
—– আমি ওতো কিছু বুঝিনা। আমার বাবুদের নাম খুব সুন্দর হতে হবে যেমন তোমার নাম আবির আমার নাম জারা তাদের নামও এমনটাই সুন্দর হবে। ভতা ভুতি কিন্তু একদম চলবেনা।
—– ওকে। কিন্তু আমি খুব শখ করে নামটা,,,,
—-রাখো তোমার শখ
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম এবার হাঁসতে হাঁসতে টোটালি গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। এটা আবার কেমন নাম আবিরটা পারেও বটে মনে করতেই আমার হাঁসি পাচ্ছে।
হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে আমার হুস ফিরে। আর হাথে ভয় আর লজ্জাও কাজ করছে। আজ যে আমার আর আবিরের বাসর রাত। আমি মাথার ঘোমটা টা আরো নিচের দিকে টেনে নিলাম। অনেক্ষণ হয়ে গেল আবিরের কোন সাড়া শব্দ নেই তাই আমি না চাইতেও ঘোমটা টা খুলে সামনের দিকে তাঁকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। একি উনি এখানে কি করছে উনি তো আবিরের বড় ভাই আরিয়ান চৌধূরী। এই লোকটা এই ঘরে কেন! কোন আক্কেল জ্ঞান আছে নিজের ভাইয়ের বাসর রাতের দিন তার ঘরে এসে তারই বউয়ের সামনে বসে আছে। আমার খুব রাগ হলো তাই রেগে গিয়ে খাট থেকে নেমে গিয়ে সে যেই সোফাটায় বসে আছে সেখানে গিয়ে বললাম
—– আপনি এখানে কি করছেন? আবির কোথায়!
—— আবিরকে দিয়ে তুমি কি করবে?
——মানে কি ! আমার স্বামীকে দিয়ে আমি কি করবো মানে কি? আপনি জানেন না যে আজ আপনার ভাইয়ের বাসর রাত। আর আপনি কিনা তার বদলে তার ঘরে এসেই তার বউয়ের সামনে বসে আছেন!
——- কার বউ?
—— কার বউ মানে আবিরের বউ।
—— আমি তো এখানে আবিরের বউকে দেখতে পাচ্ছি না।
—— আপনার সামনে একটা জ্যান্ত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে তাকে কি আপনি চোখে দেখতে পারছেন না ?
—— দেখতে তো পাচ্ছি কিন্তু সে তো আবিরের বউ নয় আমার বউ।( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
—— হোয়াট ! দেখুন আপনি এসব ফালতু বকবেন না। ছি কেউ নিজের ভাইয়ের বউকে এইসব বলতে পারে। আবির কোথায়! আবির কোথাই তুমি দেখ তোমার ভাই এখানে এসে কিসব যা তা বলছে। তুমি কোথায় আবির!( জোরে চিল্লিয়ে)
——হেই তোমার কথা কানে যায় না ? তুমি আমার ভাইকে এভাবে ডাকছো কেন সে নেই এখানে।(রেগে)
—-‘ নেই মানে! ও কোথায় একটু আগেই তো আমার আর আবিরের বিয়ে হলো।
—-‘- shut up…আবির নয় আমি তোমার স্বামী একটু আগে আবিরের সাথে না আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে।

ভালোবাসার প্রতারণা

কথাটা শুনেই আমার মাথা ঘুরতে লাগলো এটা উনি কি বলছেন উনি যে মজা করছে তাও নয়। আরিয়ান আর আবির একই মায়ের পেটের হলেও দুজনের স্বভাবের আকাশ পাতাল পার্থক্য একজনের সাথে আরেকজনের স্বভাবের কোন মিল নেই। আবির হাঁসি খুশি তো আরিয়ান খুব রাগী আর বদ মেজাজী। উনার মুখের কথা গুলো আর মুখের ভাবটা স্পষ্ট বলে দিচ্ছে উনার একটা কথাও মিথ্যে নয়। তাহলে কি সত্যিই আমি ওনার ,,,,, না এ হতে পারে না আবির আমায় ঠকাতে পারে না। সে যে কথা দিয়েছিল সে আমাকে বিয়ে করবে এমন হতে পারে না পারে না এমন হতে।
খাটের এক কোণে শাড়ি কোন মতে পেঁচিয়ে বসে বসে কাঁদছে জারা। চোখের জলে সব যেন ভাঁসিয়ে ফেলছে। আবির তার সাথে এত বড় প্রতারণা করতে পারলো কিভাবে! সে কি জানে না এতে যে জারা মরেই যাবে। পেছনে ফিরে দেখছে আরিয়ান আরামসে ঘুমাচ্ছে। এই লোকটা খুব খারাপ লোক একে দেখলেই এখন জারার ঘৃণাতে দুচোখ ভরে যাচ্ছে।
FlashBack
তখন জারা যখন আরিয়ান এর মুখে এসব কথা শুনলো তখন ও আরিয়ানকে ঠাস করে একটা চড় মারে।
—- আপনার সাহস হয় কিভাবে এসব বাজে কথা বলার! আপনি একটা দুশ্চরিত্র লোক। আপনাকে প্রথম থেকেই আমার ভালো লাগতো না। কিন্তু আপনি এখন যা বলছেন তাতে আপনি আপনার চরিত্রের প্রমাণ দিচ্ছেন। আপনি বেড়িয়ে যান এই ঘর থেকে আর আবির কোথায়? আমি আজ আবিরকে সব বলবো। আবির আপনাকে এত মান্য করে আর সেই আপনিই কিনা তার বউয়ের রুমে ঢুকে এমন অসভ্যতামি করছেন? আবির আবির
আর কিছু বলার আগেই আরিয়ান জারার দুই বাহু চেপে ধরলো আর বলল
—–তোর আমাকে এত কিছু বলার সাহস হয় কি করে ? আমার ঘর থেকেই আমাকে যেতে বলছিস! আর আবিরের কথা বলছিস! ও চায় না তোকে বিয়ে করতে তাই ও লন্ডন চলে গেছে।
——আমি বিশ্বাস করি না। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন আমার আবির আমাকে ঠকাতে পারে না।
—-হুহ। আবির তাই করেছে যা ও চেয়েছে এতে আমার কোন হাত নেই বুঝেছো!(দাঁতে দাঁত চেপে)
—–না এই টা কিভাবে সম্ভব ও তো আমায় ভালোবাসে। আপনি মিথ্যেবাদী আপনি এখন আমাকে ইচ্ছে করে মিথ্যা কথা বলছেন। আমার আবির কোথায় সত্যি করে বলুন।
—– একবার বললে কানে যায়না? বললাম তো আবির নেই তুমি এখন আমার স্ত্রী পর পুরুষের নাম নিচ্ছো কেন?(রেগে গিয়ে)
ভালোবাসার প্রতারণা
 
—– ছাড়ুন। আপনি একটা লম্পট দুশ্চিরত্র আপনার চরিত্রের দোষ আছে আপনি একটা বাজে লোক খারাপ লোক তাই আপনি এমন করছেন সরে যান এখান থেকে। যান বলছি।(চিৎকার করে)
—– কি বললি আমি লম্পট আমার চরিত্রের ঠিক নেই ? আজ তোকে দেখাবো যে আমি কতোটা ভয়ানক হতে পারি যখন কেউ আমার মুখের উপরে কথা বলে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে😠😠😠😠(জারার চুলের মুঠি ধরে)
আরিয়ান জারাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিল তারপর ঝাপিয়ে পড়লো জারার উপর জারা অনেক আকুতি মিনতি করেছিল ওকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু আরিয়ান কোন কথা শুনলো না নিজের অধিকার ঠিকই আদায় করে নিল। জোর করে হোক বা যেভাবেই হোক নিজের ভালোবাসার মানুষকে একেবারে নিজের করে নিল সে আজ।
একজনের ভালোবাসা হয়তো হারিয়ে গেল তবে আরেকজনের ভালোবাসা ঠিকই পাওয়া হয়ে গেল জারার।
......চলবে………
ভালোবাসার প্রতারণা