ভালোবাসার প্রতারণা পর্ব:৩
জারা আরিয়ানের কথা শুনে কিছুই বলল না শুধু আরিয়ানকে দেখতেই লাগলো। এই মানুষটা কেন তাকে বিয়ে করলো! এই মানুষটার কাছে তো ওর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাহলে কেন ওকে বিয়ে করতে গেল। জারাকে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে আরিয়ান বলল
—– এত তাঁকিয়ে থাকা লাগবেনা আমার দিকে। ব্রেকফাস্ট করে নাও।
—– আমার ক্ষিদে নেই।
—– খেতে হবে ক্ষিদে না লাগলেও খেতে হবেই।
—– আজব! বলছি তো আমার ক্ষিদে নেই। আমি খাবো না।
—– তুমি খাবে না !(চোখ রাঙিয়ে)
আরিয়ানের চোখ রাঙানো দেখে জারা ভয় পেয়ে গেল তাই চুপচাপ খেয়ে নিল। আরিয়ান নিজ হাতে জারাকে খাইয়ে দিয়েছে। জারার তখন তার বাবার কথা মনে পড়ে যায়। খুব ছোট বেলায় তার মা মরে যায় তারপর থেকে সে তার বাবার হাতে খেত বাবার সাথে খেলা করতো। আবির জারাকে সবসময় বলতো “জারা এখন যেমন তোমার বাবা তোমায় খাইয়ে দেয় বিয়ের পর আমিও তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিব” কথাগুলো মনে করতেই জারার চোখ বেঁয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। স্বপ্ন দেখেছে একজনের সাথে আর না চাইতেও পূরণ করছে আরেক জনের সাথে। এটাই হয়তো নিয়তি। আরিয়ান অফিসের কাজে বের হয়ে গেল। বাড়িতে অনেক মানুষজন জারার কিছুই ভালো লাগছে না। করো সাথে কোন কথা বলছে না। আরিয়ানের রুমটা খুব বড় ও সুন্দর। দেখেই বোঝা যায় রুচিশীল মানুষ। সৌখিন ও বটে। বারান্দায় অনেক ফুল গাছ জারা ভিন্ন ধর্মী কিছু ফুল দেখলো সুবাস না থাকলেও দেখতে খুবই সুন্দর। গাছগুলোর দিকে তাঁকিয়ে রইলো জারা তারপর পাশে থাকা বড় সোফাটায় বসে পড়লো। চারিদিকে নানান ফুল আর আলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে কারণ আজ জারার বৌভাতের অনুষ্ঠান। কিছুক্ষণ পর রুমে কেউ ঢকলো তারাও বারান্দা থেকে রুমের ভেতরে গেল। কয়েকজন মেয়ে আসলো আর তার সাথে আরিয়ানের বোন তৃণাও আসলো।
—– ভাবি এরা পার্লার থেকে এসেছে তোমাকে সাজানোর জন্য।
—–ওহ।
—- আচ্ছা তুমি থাকো আমি আসি অনেক কাজ আছে। ভালোবাসার প্রতারণা
—- ঠিক আছে।
জারাকে পার্লারের মেয়ে গুলো সাজাতে লাগলো। জারাকে রেডী করার পর ওনারা চলে যায়। জারাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ। ডার্ক নেভি ব্লু লেহেঙ্গাটায়। তার সাথে ডায়মন্ড অরনামেন্টস। চুল গুলো কার্ল করা ডার্ক মেকআপ আর লাল লিপস্টিক। এক কথায় অসাধারণ লাগছে।সন্ধ্যায়…….
সবাই চলে এসেছে আরিয়ান ও অফিস থেকে এসে পড়েছে। রুমে ঢুকেয় জারাকে দেখেই ক্রাশ খেল। তার বউটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। জারা এতক্ষণ মাথা নিচু করে কি দেখছিল তাই আরিয়ানকে দেখে নি। মাথা উপর করতেই আরিয়ান একটা ভাব নিয়ে জারার সামনে থেকে চলে গেল। তারপর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো আর জারা বোকার মতো চেয়ে রইলো। তৃণা এসে জারাকে নিয়ে নিচে চলে যায় স্টেজের মধ্যে। আরিয়ানও রেডী হয়ে আসে। জারা আরিয়ানকে দেখে অনেকক্ষণ তাঁকিয়ে রইলো তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল। আরিয়ানের খালাতো বোন লিজা ওর কাছে এসে বলল
—- ওয়াও আরিয়ান! কত সুন্দর লাগছে তোমায়।
—-(কিছুই বলল না শুধু একটা মুঁচকি হাসি দিল। সেটাই যেন লিজাকে ঘায়েল করলো।)
—– তুমি কিন্তু এই বিয়েটা করে ঠিক করোনি। তুমি জানো না বেবি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
—– চুপ করো লিজা। এখানে এসব কথা বলবে না একদম। তোমাকে কে বলেছে আমাকে ভালোবাসতে ! আমি তোমায় ভালোবাসি না। আর আমার স্ত্রী আছে এখন। আমি বিবাহিত তুমি আমার পেছনে পড়ে থেকো না আর।
বলেই লিজাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।আর লিজা রাগে ফুলতে লাগলো। এই জারাকে তো ও ছাড়বেনা। এদিকে আরিয়ান জারার পাশে গিয়ে বসাতে জারা কিছুটা বিরক্ত হয়ে গেল। তাই একটু দূরে সরে বসলো। এখন অনেকেই আসছে ওদের 
অভিনন্দন  ভালোবাসার প্রতারণা
জানাতে সাথে গিফ্ট নিয়ে। আরিয়ানের একটা জরুরী কল আসায় আরিয়ান দূরে কোথাও যায়। তখনি কেউ একজন এসে জারাকে বলল
—-
অভিনন্দন  ভালোবাসার প্রতারণা
মিসেস আরিয়ান চৌধূরী।(ফুল এগিয়ে দিয়ে)
—-ধন্যবাদ।(বলেই সামনে তাঁকিয়ে যাকে দেখলো তাকে দেখার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। অস্ফূষ্ট স্বরে বলে উঠলো) আবির!
—– হুম। আপনার এক্স বয়ফ্রেন্ড আবির চৌধূরী।
আবিরকে দেখে জারা কান্না করে দিল আর ওকে জড়িয়ে ধরলো তখনি আরিয়ান ঐখানে চলে আসে আর ওদের এভাবে দেখে থমকে যায়। জারার কোন খেয়াল নেই সে তো শুধু তার আবিরকে পেয়ে সব যেন ভুলেই গেল। আরিয়ান এসে তখন ওদের সামনে দাঁড়ালো জারা আরিয়ানকে দেখে আবিরকে ছেড়ে দিল। আবির জারার দিকে তাঁকিয়ে আছে ঘৃণার দৃষ্টিতে। জারা তার সাথে এত বড় ছলনা করলো কিভাবে! তারই বড় ভাইকে ভাবতেই আবিরের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। আবির দৌড়ে উপরে চলে যায়। তার যে এসব দেখতে ভালো লাগছে না। এদিকে আরিয়ান তো রেগে আগুন সাথে জারাকে হারানোর ভয়ও ওকে আকড়ে ধরছে। তার জারা কি সত্যিই ওর থেকে দূরে সরে যাবে!
আরিয়ান ধীরে ধীরে জারার দিকে এগুতে লাগলো। জারা তো এখন আর ভয় পাচ্ছে না তার বারবার মনে হচ্ছে এখন তার একটা সম্ভল আছে। আরিয়ান জারাকে কিছু বলতে যাবে তখনিই আরিয়ানের মা ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল
—–বাবুই ছোটনকে (আবির) আমি আসতে বলেছি।
—— তুমি!
—— হুম।
——ওর সাথে তোমার কথা হলো কিভাবে ? ওর ফোন তো বন্ধ ছিল তাছাড়া ও লন্ডন ছিল মম।
——না। ও লন্ডন যায়নি।
—– যায়নি মানে কোথায় গিয়ে ছিল ও?
—– একটা অডিশন দিতে সিলেট গিয়ে ছিল। তুই তো জানিস ওর গানের খুব নেশা। বড় হয়ে একজন গায়ক হতে চেয়েছিল। ঐদিন লাস্ট ডেট ছিল তাই ও গেছে।
—– মম ও কি পাগল! কেউ কারো বিয়ের দিন এভাবে নিজের বউকে ফেলে গানের অডিশনে যায়!
—— আমিও কিছু বুঝতে পারছি না। বাবুই তুই যে বললি ও লন্ডন!
—— আমার ফোনে মেসেজ আসে ওর নম্বর থেকে। আমি তো ভাবলাম সত্যি কারণ তখন ঐ রকম সিরিয়াস মোমেন্টে ও মজা করবে কেন?
——–আমি জানি না। আর শুন তোর আর জারার বিয়ের কথা শুনে ও যে একটা বড় শক পেয়েছে। আমি এখন কি করবো ও যে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে। জারা আর ও একসাথে থাকলে অনেক সমস্যা হতে পারে। আমি এখন কি করবো! তোর বাবাও খুব রেগে আছেন। তাকে সামলাবো কিভাবে!
——মম ও কি জারাকে আমার থেকে নিয়ে যাবে!(চোখ টলমল করছে)
—— আমাকে ও কথা দিয়েছে এমন কিছু করবে না আর শুন ও তোকে খুব ভালোবাসে নিজের ভাইয়ের সংসার ও ভাঙ্গবেনা।
—– মা ও তো জারাকেও খুব ভালোবাসে!
—– ভালোবাসলে কি হবে দোষ ওর ও কেন বিয়ের দিন নিজের হবু বউকে ছেড়ে যায়!(পেছন থেকে আরিয়ানের বাবা আরমান সাহেব বলে উঠল)
—–ড্যাড!
—— তুমি চুপ থাকো। আর শুনো আমি আবিরকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। ঐখানে গেলে 1,2 বছর থাকলে ও সব ভুলে যাবে। ভালোবাসার প্রতারণা
—— আপনি এসব কি বলছেন নিজের ছেলেকে এভাবে দূরে পাঠিয়ে দিবেন(মা)
—– ও যা করেছে তার জন্য এই শাস্তি কোন বড় কিছু নয়। শুনো এখন পুরো বাড়ি অতিথিতে ভরা সবাই যাক তারপর কাল সকালে এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাবুই তুমি গিয়ে জারার পাশে বসো।
—– হুম।
.....চলবে.... ভালোবাসার প্রতারণা