বেস্ট ফেন্ড - রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প


 

--আপনি কি করেন...?
--টাকার জন্য কামলা খাটি। তো শহরের কোথায় আপনার বাসা..?
--সদরপুর।
খায়ছে, এই মেয়ে দেখি খালার এলাকার, যেখানে আমি যাচ্ছি। তবে কি বিয়েটাও ওটাই..! ট্রেনের বাতাসে বেশ ঘুম পাচ্ছে। কয়েক বছর আগে হলেও এমন সুন্দরীর পাশে বসে সারারাত জেগে যেতাম। এখন সেই ইচ্ছা টা মরে গেছে। আজ আবার আয়শাকে খুব মনে পড়ছে। সপ্ন ছিল ওর হাতে হাত রেখে সারারাত জেগে ট্রেনে জার্নি করার।
--আমরা চলে এসেছি। উঠুন।
(রুহি)
--আপনি ঘুমান নি রাতে...?
--ঘুম আসেনি রাতে...।
--রুহি, আপনাকে আপনার বাড়ি পর্যন্ত লিফ্ট দিতে পারি। যদি একটা উপকার করেন।
--কি উপকার... (ভয়ে)
--পৌছানর পরে আপনি ভুলে যাবেন আমার সাথে কখন আপনার দেখা হয়েছিল।
রুহি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, যার ভয়ে সে সারা রাত জেগে কাটিয়েছে কেন যেন তাকে এখন ভালমানুষ ভাবতে ইচ্ছা করছে। আচ্ছা লোকটা পাগল নয়ত। কথা গুল এমন উল্টাপাল্টা কেন। চেহারাটাও কঠিন। মাপা হাসি ছাড়া মন খুলে হাসতেও দেখেনি। এমন সুন্দরী মেয়ে পাশে, অথচ কথা বলার কোন ইচ্ছাই নেই তার ভেতরে। এই শেষ রাতে কোন গাড়ি পাওয়া যাবে না। কেন যেন মনে হচ্ছে মানুষটিকে বিশ্বাস করলে ঠকবে না।
আমার খালার বাড়ির দুই বাড়ি পরেই রুহিদের বাড়ি। ওকে পৌছে দিয়ে আমি গিয়ে বাড়ি ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়েই লম্বা ঘুম। ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার খালাতো ভাই আদি সাথে রুহিও। আমাকে দেখেই হা হয়ে গেছে।
--ফারহান সাহেব আপনি...?
(রুহি)
--রুহি, তুই ফারহান ভাইকে চিনিস? ভাই তুমি চেন নাকি রুহিকে..?
(আদি)
না, চিনি না। বলে সোজা কেটে পড়লাম। সারা বাড়ির সব খবর দুষ্টু আদিটা ঠিক বের করে নেয়। জানি, এটাও বের করে ফেলবে।
বড় ভাই হিসাবে পরবর্তি দুই দিন খুব ব্যাস্ত কাটালাম। আর সবসময় দেখছি রুহি আমার আশপাশেই থাকে। আবার আমি তাকালেই গায়েব। দুর থেকে মিষ্টি করে হাসি দেয়। কেন জানি মেয়েটা চোখের সামনে না থাকলে আমারো ভালো লাগে না। আমার মনে কি ওর জন্য যায়গা তৈরি হচ্ছে। না এ সম্ভব না। আমার যে কোন মন ই নেই।
বিয়ের আগের রাত। সব কিছু গুছিয়ে রেখে সিগারেট হাতে ছাদে এসে দাড়ালাম। চকচকে বিয়ে বাড়ি। একদিন আমারো এমন একটা বিয়ে বাড়ির সপ্ন ছিল। সেই সপ্ন আজ সিগারেটের ধুয়া হয়ে উড়ে যায়।
--কিছু জিনিষ ভুলে যেতে হয়। মনে রেখে নিজের ক্ষতি করতে হয় না।(পেছনে ঘুরে দেখি রুহি দাড়িয়ে। ও কি তাহলে সব জেনে গেছে..?)
--আপনি এখানে কেন...?
--আপনার টাকাটা দিতে এসেছিলাম। এখন ভাবছি দেব না।
--কেন..?
 বেস্ট ফেন্ড - রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
--টাকাটা বাকি থাকলে আপনি আমাকে নিয়ে ভাববেন। আর আমাকে সহজে ভুলতেও পারবেন না। তাই দিবনা টাকাটা।
--চিন্তা করবেন না ভুলে যাব।
-- (হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে) এসব যেন আর কখন খেতে না দেখি।
অন্য সময় হলে যে কাউকে বেশ কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতাম। কিন্তু মেয়েটিকে কেন যেন বকা দিতে ইচ্ছা হচ্ছে না। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। না না, আমাকে শক্ত হতে হবে।
--আমার বিষয়ে কথা বলার আপনি কে..?
--এখনো কেউ না, তবে সবকিছু হতে চায়।
কথাটা বলেই রুহি দৌড়ে চলে গেল। আমি শুধু তাকিয়েই রইলাম। বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখে মা কেও রুহি পটিয়ে ফেলেছে। পুরো বিয়ে বাড়ি কানাকানি চলছে পরবর্তী বিয়ে ফারহান আর রুহির । নাহ্ আর থাকা যাবে না। ব্যাগটা গুছিয়ে পালিয়ে যেই মাত্র বাড়ির গেট পেরিয়েছি, কেউ একজন আমার হাত টেনে ধরল। তাকিয়ে দেখি রুহি । শাড়িতে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তার সাথে করুন দৃষ্টি আর চোখের পানি যেন কলিজায় আঘাত করছে।
--আমাকে আপনার পছন্দ না সেকথা বলে দিলেই হতো। এভাবে কেন পালাচ্ছেন। আমি আর কখন আপনার সামনে আসবো না। তবু প্লিজ চলে যাবেন না।
*--কে বলেছে তোমাকে আমার পছন্দ হয়নি..? আমি শুধু ভয় পেয়েছি। এখানে থাকলে সেই ভুলটা আবার করে ফেলব, যেটা একবার আমার স্বাভাবিক জীবনটাকেই কেড়ে নিয়েছে।
--আমাকে নাহয় একটা সুযোগ দিন আপনাকে সেই পুরনো আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার।
--কখন ছেড়ে যাবে না তো...?
এবার আর মুখে জবাব পেলাম না। তবে কেউ একজন আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আর না। আমি ওকে আর ছাড়তে পারব না। ও ই আমার অগোছালে জীবনটা জড়িয়ে ধরে রাখুক না।
"সমাপ্ত"
 বেস্ট ফেন্ড - রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প