আমাকে ক্ষমা করে দে রিমি। আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
.
আমার কথা শুনে রিমি কিছুক্ষণ শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ভাবলাম এবার মনে হয় সব মান-অভিমানের খেলা শেষ হবে। রিমি আমাকে আপন করে নিবে। কিন্তু রিমি আমার ধারণা এবং সব আশা-আঙ্কাখাকে ভেঙে দিয়ে ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দিলো। আমি অবাক হলাম খুব.! তাহলে কি রিমি আমাকে ভালোবাসেনা.?
চোখের কোণায় পানি এসে জমা হলো। অশ্রুসিক্ত চোখে রিমির পানে তাকিয়ে রইলাম কেবল। রিমি চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,
.
-- আজকে ক্ষমা চাওয়ার সময় হলো তোমার.? এতদিন কি গরুর ঘাস কাটতে গিয়েছিলে.? আমি তোমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না।
.
রিমির কথা শুনে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। আমি দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বললাম,
.
-- জাস্ট একটা বার সুযোগ দিয়ে দেখ। তোকে অনেক ভালোবাসবো।
.
-- তোমার ভালোবাসার দরকার নেই। আমি একাই অনেক ভালো আছি।
.
-- তাহলে এতদিন পর আবার ফিরে এলে কেন.?
.
-- আমি কি তোমার জন্য ফিরে এসেছি নাকি.? আমি শুধু তোমার মা মানে আম্মুকে দেখতে এসেছি।
.
-- এ-ছাড়া আর কিছু না.?
.
-- আর কি হবে শুনি.? তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সেজন্য ফিরে এসেছি.? ঘোড়ার আন্ডা। আমি তোমাকে ভালো-টালো বাসিনা। ওসব চিন্তা মাথা থেবে বের করে দাও।
.
-- কিন্তু শরীফ যে বললো তুই শুধু আমার জন্যই এসেছিস।
.
-- মিথ্যা বলেছে। উনার কথা বিশ্বাস করবে না।
.
আমি দ্বিতীয় বারের মত আশাহত হলাম। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম শুধু। গলাটা ভারি হয়ে এলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। কোনোমত শুধু এতটুকুই বলতে পারলাম,
.
-- তা কবে চলে যাবি.?
.
-- কালকেই চলে যাবো।
.
-- ভালো। আর হ্যাঁ, তোর বিয়ের দাওয়াত দিবি কিন্তু। এখনো তো বিয়ে-সাদি করলি না। দিনদিন তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস।
.
আমার কথার প্রত্ত্যুতরে রিমি কিছু বললো না। চুপ করে শুনলো কেবল। আমিও আরো কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু রিমির বিয়ের কথা বলার সময় গলাটা ধরে আসছিলো। মনে হচ্ছিলো কেউ আমার গলাটা চিপে ধরেছে। আমি গলা খাকড়ি দিয়ে রিমিকে চলে যেতে বললাম। খুব অসস্তি হচ্ছে আমার। দম বন্ধ হয়ে আসছে। রিমি আবার আমার পুরোনো ব্যথাটাকে জাগিয়ে দিয়েছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসলাম। রিমি নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো।
কিন্তু ২ মিনিট না যেতেই রিমি আবার আমার ঘরে এলো। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
.
রিমি আবার কেন ফিরে এসেছে বুঝতে পারছি না। আমি কিছু বলার আগেই রিমি ঢিসুম করে আমার বুকে কিল মারলো। আমি বুকে হাত দিয়ে 'আক' করে কঁকিয়ে উঠলাম। ব্যথায় বুক চিনচিন করে উঠলো।
আমি স্থির চোখে রিমির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি.? একটু আগে চড় মারলো, এখন আবার বলা নেই কওয়া নেই কিল মেরে হার্টবিট থামিয়ে দিয়েছে।
.
আমি এসব ভাবছিলাম তখন রিমি আরেকটা অবাক করা কান্ড ঘটালো। হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরে। ঘটনার আস্কমিকতায় তাল সামলাতে না পেরে আমি বিছানায় পড়ে গেলাম। আমি নিচে আর রিমি আমার উপরে। রিমি আমার উপরে শুয়ে এলোপাতাড়িভাবে আমার বুকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আমি রিমিকে আটকানোর সুযোগ পাচ্ছি না। সে লাগাতার আমার বুকে কিল মেরে চলেছে এবং ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কান্না করছে।
.
আমি অবাক হয়ে রিমির মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছি। রিমি আরো বেশ কয়েকটা কিল-ঘুষি মারার পর শান্ত হলো। তবে কান্না বন্ধ হয়নি। কান্নার তালে তালে ফোঁফাচ্ছে এবং শরীর কেঁপে উঠছে। আমি তখনো রিমির এমন আচরণের কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। রিমি তো আমাকে ভালোবাসে না। তাহলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে কেন.?
আমি এসব ভাবছিলাম তখন রিমি আমার পেটে জোরে গুতো মেরে অভিমানী গলায় বললো,
.
-- খুব তো বললে আমাকে নাকি ভালোবাসো। কিন্তু যাওয়ার কথা বলার পরে আমাকে একবার আটকানোর চেষ্টা করলে না। এই তোমার ভালোবাসার নমুনা.?
.
কথাটা বলে রিমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো। আমিও শোয়া থেকে উঠে বসলাম। রিমি ও আমার মাঝে এক হাতের ব্যবধান। আমি সাহস করে রিমির কাধে হাত রাখলাম। সাথে সাথে রিমি ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে দিলো। আঙুল উঁচিয়ে হুমকির স্বরে বললো,
.
-- খবরদার আমার গায়ে হাত দিবে না। তোমার মত মানুষকে ভালোবাসাই আমার ভুল হয়েছে।
.
-- এই মাত্র না বললি আমাকে ভালোবাসিস না। এখন আবার ভালোবাসি বলছিস।
.
-- আচ্ছা তুমি কি মানুষ হবে না.? সারাজীবন কী গাধাই থাকবে.? আরে তোমাকে যদি ভালো নাই বাসি তাহলে ফিরে এলাম কেন হুঁ.?
.
-- মাকে দেখার জন্য এসেছিস।
.
কথাটা আমি মজার ছলে বললেও রিমি সেটা বুঝে নি। রাগে কটমট করে আমার দিকে তাকালো। মারার জন্য তেড়ে এসেও নিজেকে আটকালো। বড়বড় শ্বাস নিয়ে নিজের রাগকে সংযত করলো। তারপর চাপা স্বরে বললো,
.
-- তোমাকে আমার খুন করতে ইচ্ছা করছে। কী করলে তুমি আমাকে বুঝবে বলো তো.? তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি যে পাগল সেটা আর কবে বুঝবে.? আর কত কষ্ট দিবে আমাকে.? আমি আর সহ্য করতে পারছি না এই যন্ত্রণা।
.
রিমি ঢুকড়ে কেঁদে উঠলো। আমিও কেঁদে দিলাম এবার। রিমিকে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। রিমি এবার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপটি করে আমার বুকের মাঝে এটে রইলো। আমি রিমির মাথায় চুমু দিয়ে বললাম,
.
-- আজ থেকে আর কোনো কষ্ট বা যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না তোকে। সারাজীবন এভাবেই বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখবো।।
.
রিমি মুখ ভেটকালো। তারপর আমার বুকে আবার দুরুম করে কিল মেরে চলে যেতে লাগলো। আমি রিমির হাত টেনে ধরে তাকে আটকালাম। বেশ রাগী স্বরেই বললাম,
.
-- কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি.? এক পা ও নড়বি না এখান থেকে।
.
-- ইশ, কি ঢং.! হটাৎ এত ভালোবাসা আসলো কোথা থেকে.? ভালোবাসা যেন উতলে পড়ছে।
.
-- ভালোবাসার দেখছিসটা কি হ্যাঁ.? আজ থেকে দেখবি ভালোবাসা কাকে বলে। আমার ভালোবাসার সাগরে তোকে ডুবিয়ে মারবো।
.
কথাটা বলে আবার রিমিকে জড়িয়ে ধরলাম। প্রথমবার রিমি একটু ভনিতা করলেও এবার নিজে থেকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমার বুকে ও গলায় বেশ কয়েকটা চুমু খেলো। তারপর অভিমানী গলায় বললো,
.
-- আমি ভেবেছিলাম আমাকে দেখা মাত্রই এভাবে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু তা না করে আমাকে এবং শরীফ ভাইকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করে দিয়েছিলে। আমি নাকি শরীফ ভাইকে বিয়ে করেছি।
আচ্ছা তোমার কি একবার মনে হয় নি, যেই আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য কত কিছু করেছি; এমনকি সুসাইড পর্যন্ত করেছিলাম একবার। সেই আমি কীভাবে তোমাকে ছাড়া অন্য একজনের সাথে ঘর বাঁধবো।
.
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে রিমি একটু থামলো। আমি চুপচাপ রিমির কথা শুনলাম। খুব খারাপ লাগলো আমার। লজ্জাও পেলাম খানিক। রিমিকে নিয়ে এমন কথা ভাবা আমার ঠিক হয় নি।
আমি রিমিকে ছেড়ে দিয়ে বিরস গলায় বললাম,
.
-- আসলে আমার মনে ভয় ঢুকে গেছিলো। তার উপর অনেকেই বলেছে তুই বিদেশে গিয়ে আমাকে ভুলে গেছিস। তোর আশা যেন ছেড়ে দেই। আবার তুই আমার কোনো খোঁজখবর নিস নি। তাই এতদিন পর তোর সাথে যখন শরীফকে দেখলাম তখন আর অন্যকিছু মাথায় আসে নি। শরীফকে তোর স্বামী ভেবে বসেছি।
.
-- সাধে কি আর তোমাকে গাধা বলি। এ-জন্যই বলি। শুনো, এই রিমি মরে যাবে তবুও অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। তাছাড়া আমি অনেক আগে থেকেই তোমাকে স্বামী মানি। স্বামী রেখে আরেকটা বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃখে হু.?
.
রিমির কথা শুনে এতো খুশি হলাম যে বলার বাহিরে। শান্তির ঢেউ খেলে গেলো আমার বুকে। কলিজায় হিমেল বাতাস এসে লাগলো যেন। আমি প্রশান্তিমাখা হাসি দিয়ে রিমির পানে চেয়ে রইলাম। আমার এভাবে তাকিয়ে থাকাতে রিমি লজ্জা পেলো মনে হয়। আমার হাতে জোরে চিমটি কেটে দুষ্টুমিভরা কন্ঠে বললো,
.
-- খুব তো বললে আমাকে সারাজীবন নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখবে। তাহলে তোমার বুক খালি করেছো কেন.? আমাকে তোমার বুকের মাঝে নাও।
.
রিমির কথামতো তাকে টেনে আমার বাহুডোরে নিলাম। রিমি গুটিশুটি মেরে আমার বুকের সাথে চেপে রইলো। একটুপর মুখ তুলে ভারি গলায় বললো,
.
-- একটা কথা জিজ্ঞেসা করবো.? সত্যি সত্যি উত্তর দিবে কিন্তু।
.
-- কি কথা.?
.
-- তখন বললে আমি নাকি দিনদিন বুড়ি হয়ে যাচ্ছি। সত্যি-ই কি আমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছি.?
.
-- তা একটু হচ্ছিস। আগের মতো রূপ যৌবন তোর আর নেই। তবুও তোর সাথে থাকতে হবে। কি আর করবো, হাজার হলেও তোকে ভালোবাসি।
.
আমি নেহাত মজার ছলেই কথাগুলো বললাম। একটু পরখ করতে চাচ্ছিলাম রিমি কি বলে। কিন্তু রিমি যে এতোটা রেগে যাবে ভাবিনি। তড়িৎ বেগে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। এমন একটা ভং ধরলো যেন আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। আমি মজা পেলাম খুব। রিমিকে আরো রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার 'বুড়ি' বলেও ডাকলাম। রিমি আরো তেঁতে উঠলো। চিৎকার করে বললো,
.
-- আমার মতো বুড়িকে তোমার ভালোবাসতে হবে না। তোমার তো ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই। কিছুদিন আগে তো তোমার অফিসের কলিগ আঁখি তোমাকে প্রপোজ করেছে। তার প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করে নিলেই তো পারো। তারপর তার সাথে প্রেম করবে। সুন্দরী একটা প্রেমিকা পাবে। আঁখি তো আমার থেকে অনেক সুন্দর।
.
প্রথমে রিমির কথা শুনে মজা পেলেও শেষের কথাগুলো শুনে একদম তাজ্জব বনে গেলাম। রিমি, আঁখির কথা জানলো কীভাবে.? আঁখি আমার কলিগ। আমরা একই অফিসে চাকরি করি। অনেকদিন থেকেই আঁখি আমার পিছনে পড়ে আছে। সপ্তাহখানেক আগে প্রোপোজ ও করেছে। আমি না করে দিয়েছি। কিন্তু রিমি এতোকিছু খবর পেল কীভাবে.? আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,
.
-- তুই আঁখির কথা জানিস কীভাবে.?
.
রিমি মুচকি হাসলো। চেহেরা জুড়ে রহস্য। আমি আবার তাগাদা দিয়ে বললাম,
.
-- চুপ করে আছিস কেন.? তাড়াতাড়ি বল।
.
-- তুমি কি ভেবেছো আমি কিছুই জানবো না। আরে আমি বিদেশে থাকলে কি হবে, মনটা সারাক্ষণ তোমার কাছেই পড়ে ছিলো। এই ৫ বছরের এমন একটা দিন নেই যে তোমার কথা ভাবি নি, তোমার খোঁজ রাখি নি। ঘুম থেকে উঠেই আগে তোমার মাকে ফোন দিয়ে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছি, কলেজে আমার বান্ধবীদের থেকে তোমার খোঁজ নিয়েছি। এমনকি পড়ালেখা শেষ করে তুমি যখন চাকরিতে ঢুকলে, তখন তোমাদের অফিসে আমার এক বান্ধবীকে ঢুকিয়ে দিলাম যাতে তোমার উপর নজর রাখতে পারি। আমার সেই বান্ধবী তোমার ব্যাপারে আমাকে প্রতিদিন আপডেট দিতো। তুমি কখন অফিসে যাও, কার সাথে মেলামেশা করো, কোন মেয়েকে নিয়ে মাঝেমাঝে ডিনারে যাও- সব আমি জানি।
.
রিমির এসব কথা শুনে একদম হা হয়ে গেলাম। আমি এতোদিন ভেবে এসেছি বিদেশে গিয়ে রিমি আমাকে ভুলে গেছে। অথচ সে আড়াল থেকে ঠিক-ই আমার উপর নজর রেখে গেছে। একেই মনে হয় সত্যিকারের ভালোবাসা বলে। আমি বুঝিনা রিমি আমাকে এতো ভালোবাসে কেন.? আমার চোখে পানি এসে জমা হলো। কষ্টের নয়, আনন্দের.! রিমির মতো একজন ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে আনন্দে চোখে অশ্রু খেলা করছে। আমি কাতর গলায় বললাম,
.
-- এতোকিছু জানিস আর এটা জানিস না তোকে ছাড়া এতোগুলো দিন আমার কীভাবে কেটেছে। তোর জন্য আমি কতো চোখের পানি ঝরিয়েছি, কতো রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছি- সে খবর রেখেছিলি.?
.
-- শুধু তুমি একাই কষ্ট পেয়েছো নাকি.? তোমার চেয়ে আমি বেশি কষ্ট পেয়েছি।
.
-- তাহলে ফিরে আসতে এতো দেরি করলি কেন.?
.
-- যাতে আমার ভালোবাসাটা তুমি অনুভব করতে পারো। আর এই পাগল, তুমি কাঁদছো কেন.? এতোদিন পর আমি তোমার কান্না দেখতে এসেছি নাকি.? হাসো একটু।
.
রিমির আমার চোখের পানি মুছে দিলো। আমি সামান্য হেসে রিমির কপালে চুমু খেলাম। তারপর কান্নাভেজা গলায় বললাম,
.
-- খুশিতে কাঁদছি। তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস কেন.?
.
-- জানি না। তবে ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর তুমি আমার হাত ধরে বলেছিলে সারাজীবন আমার পাশে থাকবে। সেদিন থেকে আমি তোমার প্রতি দুর্বল হতে থাকি, তোমাকে নিজের সবকিছু ভাবতে থাকি এবং ধীরে ধীরে তা ভালোবাসায় রূপ নেয়।
.
-- আফসোস, আমি তোর ভালোবাসা বুঝতে কতো দেরি করে ফেলেছি।
.
-- সমস্যা নেই। এখন থেকে বেশি করে ভালোবেসে সব পুষিয়ে দিবে।
.
-- ঠিক আছে। এখন থেকেই তাহলে শুরু করে দিচ্ছি।
.
কথাটা বলে আমি রিমির ঠোঁটের কাছে এগিয়ে গেলাম। রিমি বুঝে ফেললো আমি কি করতে চলেছি। তাই বাঁধ সাধলো। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে অভিমানী গলায় বললো,
.
-- আমি তো বুড়ি হয়ে গেছি। আমার কাছে না এসে আঁখির কাছে যাও।
.
রিমির কথা পাত্তা দিলাম না। বরং জোর করে মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে তার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম। প্রথমবারের মতো রিমির ঠোঁটের সাথে আমার ঠোঁটের মিলন ঘটলো।
আমার সারা শরীরে হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলো যেন। রিমির নরম ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে আমি দিক বেদিক হারিয়ে ফেলেছি। চুম্বকের মতো টানছে রিমির ঠোঁট জোড়া। না পারছি ছাড়তে আবার না পারছি শ্বাস নিতে। দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। এক পর্যায়ে রিমির ঠোঁট ছেড়ে দিলাম। তারপর দু'জনেই হাঁপাতে লাগলাম।
.
শান্ত হওয়ার পর আবার রিমির কাছে এগিয়ে গেলাম। রিমির গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। আমি দু'হাতে রিমির গাল দু'টো আলতো করে চেপে ধরে বললাম,
.
-- আমার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হচ্ছিস তুই। তোর সৌন্দর্যের কোনো তুলনা নেই। সারাজীবন আমার চোখে এমন-ই থাকবি।
.
আমার কথা শুনে রিমির চোখ-মুখ চকচক করে উঠলো। এতোটাই খুশি হলো যে ছোট বাচ্চার মতো কেঁদে দিলো। আমি চোখের পানি মুছে দিয়ে হাসিমুখে বললাম,
.
-- কাঁদলে তোকে একদম ছোট বাচ্চার মতো লাগে। আমার গুলুমুলু বাবু.!
.
আরো কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই রিমি আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার সারা মুখে কিস করতে লাগলো। আমি তাল সামলাতে না পেরে রিমিকে নিয়ে বিছানায় পড়ে গেলাম। রিমি আমার উপর শুয়ে থেকে অনবরত কিস করে চলেছে আমাকে। ওর লালা দিয়ে আমার পুরো মুখ মেখে গেছে। থাকতে না পেরে আমিও রিমির সাথে তাল মেলাতে লাগলাম। রিমি আমার চুল খামচে ধরে ঠোঁট কামড়াতে লাগলো। মাঝে মাঝে আবার পাগলের মতো আমার জিহ্বা চুষতে লাগলো। গভীর ভালোবাসায় আমাকে জড়িয়ে নিলো।
*
*
দরজার পাশে থেকে শাহিনের মা মিসেস সাজিয়া বেগম নিঃশব্দে সরে গেলেন। এখানে থাকা আর ঠিক হবে না। দু'জন যা শুরু করেছে তাতে লজ্জায় শাহিনের মায়ের মুখ লাল হয়ে গেছে।
তিনি দ্রুত পায়ে নিচে এসে রিমির বাবাকে ফোন দিলেন। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব শাহিন ও রিমির বিয়েটা সেরে ফেলতে চান তিনি। খুশি যেন আর ধরে না উনার। একমাত্র ছেলের বিয়ে, তাও আবার রিমির মত লক্ষী মেয়ের সাথে.! আর কী চাই.? অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আজ। রিমিকে নিজের ছেলের বউ করে পাকাপাকিভাবে ঘরে তুলবে। ইশ, কতো কাজ বাকি। ডেকোরেশনের লোকদেরকেও খবর দিতে হবে। অনেকদিন পর বাড়িটা আবার বিয়ের আমেজে ভরে উঠবে.!
.
অন্যদিকে, শাহিন ও রিমি একে অন্যের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে। তাদের ভালোবাসায় যেন কারো নজর না লাগে। বাকিটা জীবন যেন তারা এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারে। তাদের বিশুদ্ধ ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলাম আমরা। জয় হোক ভালোবাসার.!