.
-- কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট খাইস.? (রিমি)
.
মনের আনন্দে সিগারেট টানছিলাম হটাৎ কে
যেন পেছন থেকে কথাটা বলল।
আমি থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে তাকালাম।
দেখি, রিমি দাঁড়িয়ে আছে আর ওর হাতে একটা ঝাটা.!
রিমিকে এভাবে দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেল।
রাতের আবছা অন্ধকারে রিমিকে ঠিক রণমূর্তীর মত
লাগছে। আমার হাটু কাঁপতে লাগলো.!
.
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
.
-- রি... রি... রিমি, তুই.? (আমি)
.
-- হ্যা, জনাব আমি.! তা আপনি কোন ব্র্যান্ডের
সিগারেট খাচ্ছেন.? (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে বোকা বোকা ভাব
নিয়ে বললাম,
.
-- ইয়ে মানে... আসলে... আমি সিগারেট
খাই না। এমনি টেস্ট করছিলাম।
দেখলাম খেতে কেমন লাগে। (আমি)
.
-- ওহ্, তাই বুঝি.? (আমার কাছে এগিয়ে এসে)
.
-- হুমম, সত্যি.! (আমি)
.
-- তা সিগারেট খেতে কেমন লাগলো.? (রিমি)
.
-- একদম ফালতু.! আমি বুঝিনা মানুষ কিভাবে
এসব ফালতু জিনিস খায়...ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আমার তো বমি আসছে, ওয়াক থু.! (আমি)
.
-- কুত্তা, সিগারেট খেয়ে এখন সাধু সাজা
হচ্ছে, তাই না.? কানাকে বৃন্দাবন দেখাচ্ছিস.?
আজ একমাস ধরে তোকে ফলো করছি।
আমি অনেক আগেই টের পেয়েছি তুই সিগারেট খাইস
কিন্তু হাতে-নাতে ধরতে পারছিলাম না।
আজ যখন পেয়েছি এটাই তোর জীবনের শেষ দিন হবে।
আজ মেরে তোর চামড়া গুটিয়ে দিব.! (রিমি)
.
রিমি প্রচন্ড রেগে কথাগুলো বলেই আমাকে বেদাম
মারতে লাগলো। আমি সর্বশক্তি দিয়ে রিমিকে থামানোর
চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
এই পেন্তীটার সাথে কোন কালেই আমি ঝগড়া বা
মারামারিতে পেরে উঠে নি। আজও তার ব্যতিক্রম
হলো না।
.
আমি কোনো উপায় না পেয়ে দৌঁড়ে ছাদ
থেকে চলে আসলাম।
ঘরে এসে তাড়াহুরো করে দরজা বন্ধ করে লম্বা
লম্বা শ্বাস নিতে লাগলাম।
আরেকটু হলে পেন্তীটা আমাকে মেরেই ফেলতো.!
এদিকে,
রিমি আমার ঘরের কাছে এসে চিৎকার করে
আমাকে ডাকতে লাগলো।
.
-- এই কুত্তা, দরজা খোল.! (রিমি)
.
আমি কোনো কথা না বলে ভয়ে চুপ করে
বসে রইলাম।
আমি জানি, দরজা খুললেই রিমি আমাকে
আবার মারবে।
আর আমি যদি প্রতিবাদ করি, তাহলে বাড়ির সবাইকে
ডেকে আমার নামে মিথ্যাে নালিশ করবে।
তখন আরো বিপদ.! বাবার হাতে জুতা পেটা আর মা'র
হাতে খুন্তির বারি খাওয়া লাগবে.!
.
-- ওই বান্দর, এখনো দরজা খুলছিস না
কেন.? (রিমি)ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
আমি এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না।
ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,
.
-- দরজা খুললে তুই আমাকে মারবি.? (আমি)
.
-- মারবো না, তুই দরজা খোল। (রিমি)
.
-- না, খুলবো না। (আমি)
.
-- না খুললে, এক্ষুণি আম্মু আর আব্বুকে ডেকে
বলবো তুই সিগারেট খাইস.!
এখন বল ভালই-ভালই দরজা খুলবি নাকি
আব্বুকে ডাকবো.? (রিমি)
.
আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে ধীরেধীরে
দরজাটা খুললাম।
দেখি, বাইরে রিমি ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে নিঃশব্দে
কান্না করছে। আমি কিছু বলতে যাবো তখন-ই হুট
করে রিমি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর হাউ-মাউ করে কাঁদতে লাগলো।
.
রিমির এমন কান্ডে আমি হতবাক হয়ে গেলাম।
অবাকের চরম মাত্রায় পৌছে গেলাম।
তব্দা খেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
আমার মাথায় আসছে না, রিমি হটাৎ কান্না
করছে কেন.? কি হলো তার.?
.
আমি ভাবাভাবি বাদ দিয়ে রিমিকে ধরে ঘরে
নিয়ে আসলাম।
রিমি এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
আমি রিমিকে ঘরে নিয়ে এসে বিছানার উপর বসালাম। রিমি ছোট বাচ্চার মত গুটিশুটি মেরে বসলো।
আমি শান্ত গলায় বললাম,
.
-- কি হয়েছে, তোর.? হুট করে এভাবে কান্না
করছিস কেন.? (আমি)
.
রিমি আমার কথার কোন উত্তর দিল না।
সে তার কান্নার গতি আরও বাড়িয়ে দিল।
আমি আবার বললাম,
.
-- কি হলো বল.? কান্না করছিস কেন.?
আরে, কান্না করার কথা তো আমার.!
আমি এতগুলা মাইর খেলাম, কোথায় আমি কাঁদবো
তা না উল্টো তুই কাঁদছিস.! (আমি)
.
রিমি ফোঁফাতে-ফোঁফাতে বলল,
.
-- কুত্তা, তুই সিগারেট খাইস কেন.? (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
.
-- আমি সিগারেট খাই বলে তুই কাঁদছিস.? (আমি)
.
-- হুমম। (রিমি)
.
-- কেন.? (আমি)
.
-- কুত্তা, তোর কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হবে.?
আমার কথাটা একবার ভেবেছিস.?ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
তোর কিছু হলে মরে যাবো আমি.!
জানিস না, সিগারেট খাওয়া খারাপ.?
ক্যান্সার হয়.! (রিমি)
.
রিমি কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল।
আমি হা করে ওর সেসব কথা শুনলাম। আমি রিমির
কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
কিন্তু কেন জানি না আমার বুকের ভিতরটা মোচড়
দিয়ে উঠলো। আমি কেঁপে উঠলাম।
সরু চোখে রিমির পানে তাকালাম।
.
কাঁদলে রিমিকে খুব সুন্দর দেখায়.!
কান্নামাখা চেহেরায় একটা মায়া ফুটে উঠে।
যার নাম আমার জানা নেই।
কখনো জানার চেষ্টাও করি নি! রিমির সেই মায়ায়
মুগ্ধ হতে সবাই বাধ্য.!
যেমনটা আমি হয়েছি, বহুবার, বারংবার, অসংখ্যবার
আর ভবিষ্যতেও হবো.! হতে থাকবো.!
আমি রিমিকে হাসানোর জন্য বললাম,
.
-- এই পেন্তী, আমার কিচ্ছু হবে না।
আর হলেও তুই তো আছিস আমার সেবা
করার জন্য.!
আমার বিনা বেতনের চাকরানী.! (আমি)
.
আমার কথা শুনে রিমি হাসার বদলে রেগে গেল।
আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
কিছু বলতে যাবে হটাৎ ওর হেঁচকি উঠে গেল।
আমি এক গ্লাস পানি রিমির দিকে এগিয়ে দিলাম।
পানি'টুকু খাওয়ার পর রিমি একটু স্বাভাবিক হলো।
ইতিমধ্যে কান্নাও থেমে গেছে।
.
হটাৎ রিমি আমার হাত ওর মাথার উপর
রেখে বলল,
.
-- কথা দে, আর কোন দিন এসব ছাঁইপাশ
খাবি না... (রিমি)
.
-- আরে বললাম তো, আমার কিছু হবে না...
খামোখা চিন্তা করছিস। (আমি)
.
-- চিন্তা করার কারণ আছে বলেই করছি।ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
তোর কিছু হলে আমাদের সবার কি হবে.?
একবার ভেবেছিস সে কথা.? আমার কথা একবার
ভেবেছিস.? বোঝার চেষ্টা কর, প্লিজ.! (রিমি)
.
আমি রিমির মাথা থেকে হাত সড়িয়ে বললাম,
.
-- ভাবার দরকার নেই আর বোঝারও
দরকার নেই। (আমি)
.
-- জানিস, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে
বড় ব্যর্থতা.!
তুই আমাকে কোন দিনও বোঝার চেষ্টা
করলি না... (রিমি)
.
কথাটা বলেই রিমি আবার কান্না শুরু করে দিল।
আমি পড়লাম মুশকিলে। এই মেয়েটা অল্পতেই কেঁদে
দেয়। আমি কোনো উপান্তর না পেয়ে বললাম,
.
-- আচ্ছা, আর কখনো সিগারেট খাবো না।
খুশি এবার.? (আমি)
.
-- খুব খুশি.! (মুচকি হেসে)
.
তারপর রিমি ওর নরম-কোমল হাত দিয়ে
আমার গাল দু'টো চেপে ধরলো।
নরম সুরে বলল,
.
-- মাইরগুলো খুব লেগেছে, তাই না রে.? (রিমি)
.
আমি ঢং দেখিয়ে বললাম,
.
-- হুমম, খুব লেগেছে। ব্যাথায় আমার প্রাণ বেরিয়ে
যাওয়ার মত অবস্থা.! (আমি)ডেঞ্জারাস মামাতো বোনডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- আমি স্যরি.! বুঝতে পারি নি তুই এত ব্যাথা
পাবি। (রিমি)
.
কান্নামাখা গলায় বলল রিমি। আমি দুষ্টু হাসি
দিয়ে বললাম,
.
-- এখন আর স্যরি বলে কি লাভ.?
স্যরি বললে কি আর ব্যাথা কমে যাবে.? (আমি)
.
-- হুমম, তা কোথায় ব্যাথা করছে.? (রিমি)
.
-- পা'য়ে.! (আমি)
.
-- ওহ্.! আমি তেল মালিশ করে দিবো.?
তাহলে হয় তো ব্যাথা কমে যাবে.! (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে চিন্তা করলাম, সুযোগের
স্বদব্যবহার করা উচিত।
শরীর এমনিতেই প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
মালিশ করে নিলে মন্দ হয় না.!
আমি বললাম,
.
-- ঠিক আছে, মালিশ করলে কর। (আমি)
.
রিমি আর কিছু না বলে তেলের বাটি এনে আমার
পা দু'টো তেল মালিশ করতে লাগলো।
আমি চোখ বন্ধ করে রিমির কোমল হাতের
ছোঁয়া অনুভব করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ মালিশ করার পর রিমি বলল,
.
-- এখন কেমন লাগছে.? ব্যাথা কমেছে.? (রিমি)
.
-- হুমম। (হাসিমুখে)
.
-- ভালো। এখন একটু উঠে বস, আমি বিছানাটা
ঠিক করে দেই।
রাত অনেক হয়েছে, এখন ঘুমিয়ে পর। (রিমি)ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
আমি বিছানা থেকে উঠে সোফায় বসলাম আর
রিমি আমার বিছানা ঠিক করতে লাগলো।
হটাৎ বিছানার উপর থাকা আমার ফোনটা বেঁজে উঠলো।
আমি দূর থেকে আবছা ভাবে দেখলাম, মেঝ মামার
মেয়ে রিপা ফোন দিয়েছে।
আমি ফোন রিসিভ করতে যাবো তার আগেই রিমি
ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো...
.
.
.
চলবে..... ???????
0 Comments