.
একটুপর মামা গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি কিছুদূর যেতেই রিপা আমার দিকে ঢলে পড়ে গালে লম্বা একটা কিস করে বসে.! আমি চোখ বড় বড় করে রিপার দিকে তাকাই। কিছু বলার আগেই রিপা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে উঠে,
.
-- ইসস, রাস্তার কি অবস্থা। মনে হচ্ছে, গাড়ি নয় ঘোড়ার উপর বসে আছি। (রিপা)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
রিপার কথা বলা শেষ হতেই এবার রিমি আমার গা'য়ের উপর ঢলে পড়ে। তারপর আমার ঠোঁটে ঠোঁট জোড়া লাগিয়ে দেয়.! আমি নির্বাক হয়ে যাই। রিমি ঝড়ের বেগে আমার ঠোঁটে কিস করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর একদম নিষ্পাপ শিশুর মত জবুথবু হয়ে বসে থাকে। গাড়ির  জানালার কাচ নামিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের স্বরে বলতে থাকে,
.
-- রাস্তার অবস্থা একেবারে যাচ্ছেতাই.! শান্তিমত গাড়িতেও বসা যায় না। (রিমি)
.
কথাটা বলা শেষ করে রিমি আমার দিকে তাকায়। আমি চোখ পাকিয়ে বলি,
.
-- এটা কি হলো.? (রিমি)
.
-- কি হলো.? (না জানার ভান করে)
.
-- আমার ঠোঁটে কিস করলি কেন.? (আমি)
.
-- নিজের ইচ্ছায় করেছি নাকি.? গাড়ির ঝাড়িতে তাল সামলাতে না পেরে ওটা হয়ে গেছে। সব দোষ এই রাস্তার। রাস্তা ঠিক থাকলে এতকিছু হত না। (রিমি)
.
-- রাস্তা তো ঠিক-ই আছে। তুই নিজের ইচ্ছায় এমনটা করেছিস। (আমি)
.
-- ঠ্যাকা পড়ে নাই আমার। মরে যাব তবুও তোর সাথে এসব করার কথা চিন্তা করবো না। তুই আমার একমাত্র ভাই। যদিও নিজের না কিন্তু তাই বলে এসব কাজ করবো এটা ভাবলি কিভাবে.? আমাকে কি তোর এমন মেয়ে মনে হয়.? (রিমি)
.
-- আচ্ছা, সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আজ এত ভাই ভাই করছিস কেন.? আগে তো ভাই ডাকতে বললে মারার জন্য তেড়ে আসতি.! (আমি)
.
-- আজব ব্যাপার তো.! এখন তোকে ভাই ডাকাও যাবে না নাকি.? ওকে, তোকে এখন থেকে জান, কলিজা, গুরদা, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, হাড্ডি এসব বলে ডাকবো। (খুব রেগে)
.
রিমি রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলে উঠল। আমি অবাক হলাম। এ তো দেখি, চোরের মায়ের বড় গলা। নিজে দোষ করে আমাকে গরম দেখাচ্ছে। আমি কিছু বলতে যাব তখনি সামনে থেকে বড় মামা বলে উঠল,
.
-- তোমরা তিন জন সেই তখন থেকে কি সব গুজুরগুজুর করছো.? চুপ করে থাকা যায় না। (মামা)
.
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলাম। হটাৎ খেয়াল করলাম, রিমি আমার বাহু জড়িয়ে ধরেছে। আমি ফিসফিস করে বললাম,
.
-- কি করছিস, ছাড় আমাকে... (আমি)
.
রিমি আমার বাহু আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- রাস্তার অবস্থা ভাল না তাই জড়িয়ে ধরেছি। ঝাকি লাগছে খুব। (রিমি)
.
রিমির দেখাদেখি পাশে থেকে রিপাও আমার বাহু জড়িয়ে ধরলো। কিছু বলার আগেই সে বলে উঠল,
.
-- আমারও খুব ঝাকি লাগছে। আমিও একটু জড়িয়ে ধরি। (রিপা)
.
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। এরা দু'জন আমার সাথে এমন করছে কেন.? আমি কিছু বলতেও পারছি না আবার সইতেও পারছি না। কেন যে এদের সাথে বসলাম। আমার তখন-ই নেমে যাওয়া উচিত ছিল। আমি এসব ভাবছিলাম হটাৎ রিমি আবার আমার গালে কিস করে বসল। আমি দাঁত কিড়মিড় করে রিমির দিকে তাকালাম। রিমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
.
-- এবারও আমার কোন দোষ নেই। সব রাস্তার দোষ.! (রিমি)
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এই মেয়েকে আল্লাহ কোন মাটি দিয়ে বানিয়েছে স্বয়ং আল্লাহ পাক জানে। আমি শেষে কোন উপায় না পেয়ে দু'হাত দিয়ে দু'গাল চেপে বসে রইলাম। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে, রিমি যদি ঠোঁটে কিস করে বসে তখন আটকাব কিভাবে.?
.
.
১ ঘন্টা জার্নির পর আমরা তরী'দের বাড়ির সামনে এসে পৌছালাম। তরীর বাবা-মা সহ আরো কিছু আত্নীয়-স্বজন গেটের সামনে আমাদের অপেক্ষায় ছিল। আমি সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলাম। তরীর বাবা-মা আমাদের সাদরে গ্রুহণ করলেন।
.
আমরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। আমাদের ড্রইংরুমে বসতে দেওয়া হলো। বরাবরের মত এবারও রিমি আর রিপা আমার দু'পাশে বসল। আর আমি বেচারা তাদের মাঝখানে ফেসে গেলাম।
.
তরীর বাবা-মা আমাকে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। কিন্তু সেদিকে আমার খুব একটা আগ্রহ নেই। আমার মনটা তরী'কে দেখার জন্য ছটফট করছে। গতকাল রাতে তরী ফোন দিয়ে আজ কি কি পড়বে সেটা নিয়ে লম্বা একটা স্পিচ দিয়েছিল। তাই তরী'কে নতুন সাঁজে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে আছি। আশেপাশে আড় চোখে তাকিয়ে তরী'কে খোঁজার চেষ্টা করছি। মা মনে হয় আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে। আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে তরীর মা'কে বলল,
.
-- বেয়ান, আমার বউমা কোথায়.? (মা)
.
-- তৈরি হচ্ছে। আর বলবেন না, সেই সকাল থেকে তৈরি হচ্ছে কিন্তু এখনো হলো না। (তরীর মা)
.
কথাটা শেষ করেই তিনি পাশে একটা পিচ্চিকে বললেন,
.
-- বাবা শাওন, তোমার আপুকে ডেকে নিয়ে আসো যাও। (তরীর মা)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
পিচ্চিটা সিড়ি ভেঙে উপরে চলে গেল। মিনিট দু'য়েক পর ফিরে এসে গোমড়া মুখে বলল,
.
-- আপু আসবে না, দুলাভাইকে যেতে বলল। (শাওন)
.
আমি পড়ে গেলাম বিপাকে। সবাই এখানে তরী'কে দেখার জন্য বসে আছে আর তরী শুধু আমাকেই দেখার জন্য যেতে বলেছে। না জানি সবাই এখন কি মনে করে। আমি এসব ভাবছিলাম তখন তরীর মা বলে উঠল,
.
-- বাবা শাহিন, তুমি একটু তরীর কাছে যাও তো। ওকে নিচে নিয়ে এসো। (তরীর মা)
.
আমি মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। যেতে যাব তখন-ই রিমি আমার পাঞ্জাবি টেনে ধরে। আমি চোখ গরম করে রিমির দিকে তাকাই। ভ্রু নাচিয়ে বলি,
.
-- কি হয়েছে.? কিছু বলবি.? (আমি)
.
-- কিছু না, অল দি বেস্ট.! (রিমি)
.
আমি আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে তরীর ঘরের সামনে এলাম। ঘরের দরজা খোলাই আছে। আমি ঘরের ভিতর প্রবেশ করলাম। ঘরটা খুব সুন্দর করে গোছানো। দামি দামি আসবাবপত্র দিয়ে সাঁজানো।
.
আমি তরীর দিকে তাকালাম। মহারাণী আয়নার সামনে মাথানিচু করে বসে আছে। পরণে কলাপাতা রঙের শাড়ি। আমি পিছন থেকে তরী'কে জড়িয়ে ধরলাম। তরীর কোন রেসপন্স পেলাম না। আমি তরীর গলায় চুমু দিয়ে বললাম,
.
-- সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে আর তুমি এখানে বসে কি করছো.? (আমি)
.
তরী কোন উত্তর না দিয়ে ঝাটকা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিল। চোখ দু'টো অগ্নিবর্ণ ধারণ করে আমার দিকে তাকাল। আমি খেয়াল করলাম তরীর চোখে পানি টলমল করছে। আমি কিছু বলার আগেই তরী কেঁদে দিল।
আমি প্রচন্ড অবাক হলাম। হটাৎ কি এমন হলো যে, তরী কান্না করছে.? আমি তরীর গালে হাত দিয়ে বললাম,
.
-- কি হয়েছে তরী.? তুমি কান্না করছো কেন.? (আমি)
.
-- ঠাসস... (তরী)
.
তরী কিছু না বলে ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দিল। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। তরী আমার পাঞ্জাবি টেনে ধরে বলল,
.
-- কি হয়েছে তুমি জানো না.? আমি এই বিয়ে করবো না। (তরী)
.
তরীর কথা শুনে মনে হলো আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। আমি চোখ বড় বড় করে তরীর দিকে তাকালাম। তরী আমার দিকে রাগী লুক নিয়ে চেয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- কেন বিয়ে করবে না.? (আমি)
.
-- সেটা কি এখনো বলে দিতে হবে.? এসব কি.? (তরী)
.
তরী আমার দিকে তার ফোনটা বারিয়ে দিল। আমি কাঁপাকাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনের দিকে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
.
চলবে.... ?????