.
রাতে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসলাম। মনে হচ্ছে, না জানি কতদিন পর একসাথে খেতে বসেছি। পরিবারের একটা মাত্র সদস্য অসুস্থ ছিল তাতেই সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল।
মা আমাদের খাবার বেড়ে দিল। আমরা খাওয়া শুরু করলাম। খেতে খেতে বাবা বলল,
.
-- শাহিন, ১ সপ্তাহের মর্ধ্যে তোর আর তরীর বিয়েটা সেরে ফেলতে চাচ্ছি। তরীর বাবা দেরি করতে চাইছে না। কাল বিকালে তরী'কে আঙটি পড়াতে যাব এবং সামনে শুক্রবারে তোদের বিয়ে.! (বাবা)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
বাবার কথা শুনে মনে মনে প্রচন্ড খুশি হলাম কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করলাম না। ছোট করে বললাম,
.
-- ঠিক আছে, বাবা। আমার কোন সমস্যা নেই। (আমি)
.
-- ভালো। আর শোন, তোর সব বন্ধুদের আগে থেকেই বলে রাখিস। (বাবা)
.
-- ওরা সব জানে। আমার বিয়ে খাওয়ার জন্য শকুনের মত চেয়ে আছে সবাই। (আমি)
.
বাবা হো-হো করে হেসে উঠলো। আমিও সামান্য হাসলাম। কিন্তু আমার পাশে বসা রিমি আর সামনে দাঁড়িয়ে মা'র কোন সাড়াশব্দ নেই। তারা যেন আমাদের কথা শুনেও শুনছে না। জড় পদার্থের মত অনড় হয়ে আছে। বাবা মা'র দিকে তাকিয়ে বলল,
.
-- কি গো, তুমি কিছু বলছো না যে... (বাবা)
.
-- কি বলবো.? (গোমড়া মুখে)
.
-- আমাদের ছেলের বিয়ে, তোমার কিছু বলার নেই.? (বাবা)
.
-- বিয়েটা কয়দিন পর দিলে হয় না.? শাহিন আমাদের একমাত্র ছেলে। ওর বিয়ে এত তাড়াহুরো করে দেওয়ার কি আছে। আমাদের এত আত্মীয়স্বজন আছে, তারা বিয়েতে আসবে না.? শাহিনের খালা তো বিদেশে বসে ওর বিয়ে নিয়ে তৈজোগাড় করতেছে। সে বিয়েতে আসবে না.? তাছাড়া বিয়ের এত আয়োজন করা লাগবে। মাত্র ১ সপ্তাহের মর্ধ্যে এতকিছু হবে কিভাবে.? (মা)
.
-- ১ সপ্তাহ তো আর কম সময় না। এই কয়দিনে সব আয়োজন হয়ে যাবে। তাছাড়া আমি আছি তো, চিন্তা করো না। (বাবা)
.
মা আর কিছু বলল না। মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমার পাশে থেকে রিমি বলে উঠল,
.
-- আব্বু বিয়েটা কয়েকদিন পরে দিলেই ভালো হত। (রিমি)
.
-- কেন, তোর আবার কি সমস্যা.? (বাবা)
.
-- না মানে, বিয়েটা কয়েকদিন পর দিলে আমার প্ল্যান'টা ভালোভাবে সাক্সেসফুল হত। (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে আমি ভ্রু-কুঁচকে ওর দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
.
-- কিসের প্ল্যান করবি তুই.? (আমি)
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- আরে, তুই হলি আমার একমাত্র ভাই। তোর বিয়ে নিয়ে আমি আগে থেকেই অনেক প্ল্যানিং করে রেখেছি। এটা করবো, ওটা করবো, নাচবো, গাইবো, ঘুরবো, শপিং করবো, বিয়েতে হাজারটা ফটো তুলবো, আরো অনেক প্ল্যানিং আছে। এসব করতে একটু টাইম তো লাগবেই, তাইনা.? (রিমি)
.
-- হ্যাঁ, লাগবে কিন্তু এত সময় দেওয়া যাবে না। যা করার ১ সপ্তাহের মর্ধ্যে করে ফেলিস। (বাবা)
.
-- ঠিক আছে, কি আর করার। এখন আমাকে প্ল্যান'টা একটু চেঞ্জ করা লাগবে। হাজার হলেও একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা.! (রিমি)
.
কথাটা বলেই রিমি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো। তারপর ঠোঁটে কামড় দিয়ে দুষ্টু একটা হাসি দিল। আমার বিষয়টা মোটেও ভালো ঠেকলো না।
.
যে মেয়েটা কয়েকদিন আগে আমার বিয়ের কথা শুনতেই পারতো না, সেই-ই আজ আমার বিয়ে নিয়ে এত প্ল্যানিং করে রেখেছে.! আবার মিষ্টি করে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছে। এসব কিছুর মানে কি.? কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে। কিন্তু ঠিক ধরতে পারছি না। এখন থেকে একটু এলার্ট থাকতে হবে, রিমির কোন বিশ্বাস নেই। কি থেকে কি করে বসে ঠিক নেই।
.
আমি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুমে চলে এলাম। রাত তখন প্রায় অনেক। ১১ টার কাছাকাছি। আমি ফোনে তরীর সাথে টুকটাক কথা বলছি। হটাৎ দরজায় কে যেন নক করলো। আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, বাইরে মা দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে মা'কে দেখে কিঞ্চিত অবাক হলাম। মা এত রাতে সচারাচর আমার ঘরে আসে না কিন্তু আজ হটাৎ কি মনে করে আসলো.? আমি কিছু বলার আগেই মা বলল,
.
-- ভেতরে আসবো.? (মা)
.
মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল। আমি তরীর ফোন কেটে দিলাম। তারপর তাগাদা দিয়ে মা'কে বললাম,
.
-- ছেলের ঘরে আসার জন্য আবার অনুমতি লাগে নাকি.? ভেতরে এসো। (আমি)
.
মা ঘরে এসে বিছানার উপর বসলো। কেমন যেন উদাস হয়ে আছে মা। আমার একটু খটকা লাগলো। আমি মা'র পাশে বসতে বসতে বললাম,
.
-- কিছু বলবে মা.? (আমি)
.
মা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো। তারপর স্লান গলায় বলল,
.
-- তরী'কে বিয়ে না করলে হয় না.? (মা)
.
-- What.?? কি বলছো এসব.? (চমকে উঠে)
.
-- ঠিক-ই বলছি। তুই বিয়েটা ভেঙে দে। (মা)
.
-- মা, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো.? বিয়ে ভেঙে দিবো কেন.? (রেগে)
.
-- কারণ তরী মেয়েটা ভালো না। আমার পছন্দ হয়নি। আমি চাই না তরীর সাথে তোর বিয়ে হোক। (মা)
.
-- মা, তুমি এসব বলছো.? কিছুদিন আগে তুমি নিজেই তো তরীর সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছিলে। তাহলে এখন কি হলো.? (আমি)
.
-- তখন তো আর জানতাম না তরী এত বাজে মেয়ে হবে। এখন ওর ব্যাপারে সব জেনে গেছি। তাই এখন আর চাই না তরীর সাথে তোর বিয়েটা হোক। (মা)
.
-- কি জেনেছো তুমি.? (আগ্রহ নিয়ে)
.
মা কিছু না বলে ফোনটা আমার দিকে বারিয়ে দিল। আমি মা'র ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনের দিকে তাকালাম। দেখি, স্কিনে তরীর বেশ কয়েকটা ফটো। যেগুলোতে তরী ওয়েষ্টার্ন ড্রেস মানে ছোট ছোট জামাকাপড় পড়ে আছে। আমাদের শহরের ভাষায় যাকে আধুনিক পোষাক বলে। তবে তরীর পোষাক দেখে মনে হলো, আধুনিক পোষাক ও এখন আপডেট হয়ে গেছে। তা না হলে আধুনিক পোষাক এত ছোট হওয়ার কথা না। তরী এতই ছোট পোষাক পড়েছে যে, তার শরীরের অনেক অংশ খোলামেলা দেখাচ্ছে। বিশেষ করে বুক আর পিঠ.!
.
আমি কিছু বলার আগেই মা দাঁত-মুখ খিচে শক্ত
গলায় বলল, ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
.
-- পোষাকের কি ছিরি দেখেছিস.? এই মেয়েকে বউ করে আনলে সংসার টিকবে কিভাবে.? (মা)
.
তরীর এসব পোষাক পড়াতে মা'র রাগ করাটা জায়েজ আছে। আমি নিজেও এসব পছন্দ করি না। তরী যেদিন প্রথম আমাকে এই ফটোগুলো দেখিয়েছিল, আমি খুব রাগ করেছিলাম। তরীকে বলেছিলাম, আর যেন এসব পোষাক না পড়ে। তরী আমার হাত ধরে বলেছিল, সে আর এসব পোষাক পড়বে না।
.
বিষয়টা তখনই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রিমি এসব ফটোগুলো কিভাবে পেয়েছে আল্লাহ পাক জানে। নিশ্চয় আমার ফোন থেকে চুরি করেছে আর মা'কে এসব দেখিয়ে আমার বিয়েটা ভাঙার তালে আছে।
আমি একটু চুপ থেকে শান্ত গলায় মা'কে বললাম,
.
-- মা, তরী এতদিন বিদেশে ছিল। আর বিদেশে এসব পোষাক পড়া স্বাবাভিক। তাছাড়া তরী এখন এসব পোষাক পড়ে না। আমি ওকে মানা করে দিয়েছি। (আমি)
.
-- সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তরী যে অনেকগুলো ছেলের সাথে প্রেম করে এটা জানিস.? (মা)
.
-- What.?? এসব কথা তোমাকে কে বলেছে.? (অবাক হয়ে)
.
-- বলেছে একজন। আমি শুনলাম, তরী নাকি শোভন নামে একটা ছেলের সাথে প্রেম করে। (মা)
.
মা'র কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বুঝতে আর বাকি রইলো না এসব রিমির কাজ। রিমি-ই মা'কে তরীর নামে এসব মিথ্যা কথা বলেছে।
.
-- এসব রিমি বলেছে তাইনা.? (আমি)
.
মা মাথা নাড়িয়ে বলল,
.
-- রিমি কেন এসব বলবে.? আমি নিজে এসব জেনেছি। (মা)
.
-- একদম মিথ্যা বলবে না। আমি জানি, এসব রিমি তোমাকে বলেছে। (আমি)
.
মা কিছু বললো না। তবে মা'র নিরবতাই বলে দিচ্ছে, মা এসব রিমির কাছ থেকে শুনেছে। আমার রাগে গাঁ জ্বলে উঠলো। আমি কড়া গলায় বললাম,
.
-- রিমি বলল আর ওমনি তুমি বিশ্বাস করে নিলে। জানো না, তরী'কে দেখে রিমির হিংসা হয়। রিমি চায় না, তরীর সাথে আমার বিয়ে হোক। আর তাই তরীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিয়েটা ভাঙতে চাইছে। শোন মা, তরী খুব ভালো মেয়ে। ওর সাথে বিয়ে হলে আমরা দু'জনেই খুব সুখী হবো। (আমি)
.
-- কিন্তু..... (মা)
.
-- কোন কিন্তু নয়, মা। তুমি চাওনা আমি সুখী হই.? যদি চাও তাহলে আর অমত করো না। (আমি)
.
-- ঠিক আছে, যা ভালো হয় কর। (মা)
.
কথাটা বলে মা চলে গেল। আমি মুখ ভার করে বসে রইলাম। প্রচন্ড রাগ উঠলো রিমির উপর। ওর কান্ডকারখানা দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। কত বড় মিথ্যাবাদী.! নিজে প্রেম করে তরীর উপর দোষ দেয়। আবার মা'কে মিথ্যা কথা বলে বিয়েতে ব্যাগড়া দিতে চাইছে। আজ ওকে ছাড়ছি না। আমার বিয়ে ভাঙার সাধ ওকে ভুলিয়ে দিবো।
.
আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রিমির ঘরের সামনে গেলাম। রিমির ঘরের দরজা খোলা আছে। আমি পা টিপেটিপে ঘরের ভিতরে ঢুকলাম। রিমি বিছানায় বসে মাথা নিচু করে একমনে ফোন টিপছে। আমি রিমির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। রিমি এখনো আমাকে খেয়াল করে নি। আমি গলা খাকড়ি দিতেই রিমি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো। আমাকে দেখেই চমকে গেল রিমি। সাথে সাথে ফোনটা পিছনে লুকিয়ে ফেলল।
. ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আমার একটু সন্দেহ হলো। আমি জোর করে রিমির হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিলাম। ফোনের স্কিনের দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল। রিমি যে এত খারাপ আমার জানা ছিল না। আমি চোখ বড় বড় করে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আজ আমার একদিন আর রিমির যতদিন লাগে.!
.
চলবে..... ??????