তানজু দুধের গ্লাস টা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমি উঠে ছাঁদে আসলাম । ওহ হ্যাঁ আমার একটা খরগোশ আছে ওর নাম পিউ। আমি রাতের বেলা সাধারণত ছাঁদে এসে ওর সাথে গল্প করি। যদিও বা পিউ কথা বলতে পারে না কিন্তু আমি মনে হয় ওর মনের ভাব বুঝতে পারি ।
পিউকে কোলে নিয়ে বসে আছি আর গল্প করছি।
আমিঃ আচ্ছা পিউ। বলতো মানুষ ভালোবাসে কেন? মানুষকে যখন সুখে থাকতে ভূতে সুড়সুড়ি দেয় মানুষ তখন ভালোবাসে।
আম্মুঃ কি রে আজ তোদের টপিক কি ভালোবাসা?
আমিঃ তুমি কখন আসলা?
আম্মুঃ এই তো এখনি । এসে তোদের গল্প শুনছি।
আমিঃ এটা ঠিক না। চুপিচুপি অন্যের কথা শুনতে হয় না ।
আম্মুঃ হুম । তুই কি তানজু কে কিছু বলেছিস?
আমিঃ কই না তো ।
আম্মুঃ তাহলে তোর রুম থেকে বের হওয়ার পর থেকে মন খারাপ করে বসে আছে ।
আমিঃ কে কখন মন খারাপ করবে কি কারণে করবে সেটা কি আমি জানবো নাকি। পিউ তুই কিছু বল।
আম্মুঃ হইছে আর পিউ কে জিজ্ঞেস করতে হবে না ।
আমিঃ হুম ।
আম্মুঃ রাত হইছে রুমে যা। নয়তো পেত্নী এসে তুলে নিয়ে যাবে ।
আমিঃ গেলে তো ভালোই হতো । পেত্নী কে ও দেখা হতো।
আম্মুঃ হুম । আমি গেলাম ।
( আম্মু চলে যাচ্ছে)
আমিঃ আম্মু
আম্মুঃ কিছু বলবি?
আমিঃ তানজু কতদিন থাকবে এখানে?
আম্মুঃ কতদিন কি? ও তো এখন থেকে এখানেই থাকবে।
আমিঃ এখানেই থাকবে মানে কি ( কিছুটা অবাক হয়ে)
আম্মুঃ হুম । ও তো আমাদের এখানে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে । তাই আমাদের বাসায় থেকে ভার্সিটি করবে।
আমিঃ কেন ওদের ঐখানে ভার্সিটি ছিলো না?
আম্মুঃ আরে বাবা এখানে চান্স পাইছে তাই এখানে ভর্তি হবে। আর এখানে ভর্তি হলে ভালোই হবে।
আমিঃ কেন? ভালো হবে কেন?
আম্মুঃ ওদের ঐখানে নাকি কিছু ছেলে ওকে বিরক্ত করে
আমিঃ আবার সেই বিরক্ত কেস? ( বিড়বিড় করে)
আম্মুঃ কিছু বললি?
আমিঃ কই না তো । তারপর বলো
আম্মুঃ আর এখানে ভর্তি হলে তো কেউ বিরক্ত করবে না । বর বাড়ির বউ বাড়িতেই থেকে যাবে।
আমিঃ বাড়ির বউ হিহিহি( তাচ্ছিল্যের সুরে)
আম্মুঃ কি হলো? এভাবে হাসছিস কেন?
আমিঃ কিছু না । এমনি হাসি পেলো কেন জানি । আর হ্যাঁ তোমার বান্ধবীর মেয়ে তো অনেক সুন্দরী। এখানে বিরক্ত করবে না কেন?
আম্মুঃ এখানে যারা বিরক্ত করে তারা সবাই তো তোদের গ্রুপটাকে ভয় পায় ।
আমিঃ কেন? আমরা বাঘ না ভাল্লুক?
আম্মুঃ দূর । তোর সাথে এত কথা বলতে পারবো না। আমি গেলাম ।
আম্মু চলে গেল ।
আমিঃ দেখলি পিউ যার মনের কোনেও আমার জন্য একটু ফিলিংস নেই আমার পাগলী মা তাকেই বাড়ির বউ ধরে বসে আছে ।
চল আজ অনেক হয়েছে । ঘুমাই গিয়ে ।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম ।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি আব্বু বসে আছে ।
আমিঃ আব্বু, আম্মু কই?
আব্বুঃ তানজু কে নিয়ে ভার্সিটি গেছে ।
আমিঃ এতো সকালে?
আব্বুঃ তোমার কাছে সকাল আছে । কিন্তু অনেক এর কাছে এখন দুপুর প্রায়।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১১ঃ৩০ বাজে।
রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে পিউ কে খাবার দিয়ে বের হলাম ।
আসার সময় যদিও আব্বু খেয়ে বের হতে বললো কিন্তু ক্ষুধা নেই বলে চালিয়ে দিলাম ।
চলে আসলাম সাকিবের ছাঁদেই । কিছু দিন ধরে কেউ ভার্সিটি যাই না । আসলে সবগুলো স্কুল ফ্রেন্ড একসাথে হলে যা হয় আর কি। একজন যে পথে যাবে বাকী সবাই তার পিছনে পিছনে ।
রাকিবঃ কি রে আজ এতো দেরী করলি যে?
সাকিবঃ বাসায় পরীর মতো সুন্দরী মেয়ে থাকলে কি আর বাইরে আসতে মন চায়?
মারুফঃ মানে কি?
আমিঃ ওর কথা বাদ দে তো।
সাকিবঃ আচ্ছা আমি কি মিথ্যা বললাম? তোর বাসায় সুন্দরী মেয়ে নেই?
আমিঃ আছে তো।
হাবিবঃ কস কি মামা হেইয়া কেডা?
আমিঃ ঐ যে কিছু দিন আগে যে মেয়েটার কথা বলছিলাম ।
রাকিবঃ তার মানে আমাদের ভাবি।
আমিঃ ভাবি মানে?
রাকিবঃ তোর বউ তো আমাদের ভাবিই হবে তাই না ।
আমিঃ দেখ ভাই নিশা আমাদের ভাবি কারণ ও হাবিবের গফ। শ্রাবণী আমাদের ভাবি কারণ ও সাকিবের গফ। কিন্তু তানজু আমাদের থুক্কু তোদের ভাবি নয় কারণ ও আমার গফ না।
মারুফঃ গফ না তো কি হইছে । গফ হইয়া যাইবো । আচ্ছা মেয়েটা কতদিন থাকবে এখানে?
আমিঃ আমাদের ভার্সিটিতে ভর্তি হইছে ।
রাকিবঃ তুমি তো মামা এখন ওডিআই খেলবা তাহলে ।
আমিঃ তুই প্রেম কইরা তোর গফটারে দে ওডিআই কেন ডিরেক্ট টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ট্রপি তোর হাতে ধরাই দিমুনি।
রাকিবঃ আমার গফ মানে তোর ভাবি। আর ভাবির দিকে নজর দিতে নাই বৎস।
আমিঃ ভুল বললি। তুই তো আমার ভাই । তাই তোর বউ মানে আমার বউ আর আমার বউ মানে তোর ভাবি ।
হঠাৎ আম্মু ফোন করে বললো বাসায় যেতে ।
তাই সবাই কে বিদায় জানিয়ে বাসায় আসলাম ।
বিকেলে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখি আম্মু আর তানজু লুডু খেলছে ।
বাহ আগে আমায় ডাকতো এখন আর ডাকেও না। খেলার সাথী পাইছে তো। দেখবো কয়দিন থাকে এই সাথী ।
আমি ওদের সাথে কোনো কথা না বসে বাইরে বের হলাম ।
আমার সব বন্ধুর বাসা একজায়গায় কিন্তু আমার একার বাসাই আলাদা জায়গায় । এলাকায় বেশি একটা বের হওয়া হয় না ।
বাইরে বের হয়ে কিছু পথ হাটার পর দেখি এলাকার ছেলেগুলো ক্রিকেট খেলছে । আমিও তাদের সাথে ক্রিকেট খেলে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম ।
ফ্রেশ হয়ে ছাঁদে আসলাম কারণ সন্ধ্যার এই আবহাওয়া টা খুবই ভালো লাগে । মন ভালো করে দেওয়ার জন্য বেষ্ট একটা সময়। তবে একাকী সময় কাটাতে হবে । একাকী সময় কাটানোর জন্য এটাই উপযুক্ত সময় ।
হঠাৎ পিছনে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম । মনে হয় আম্মু আসছে ।
তানজুঃ কি করছেন?
( তানজুর কন্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে তাকালাম)
আমিঃ ওহহ আপনি । আমি ভাবলাম আম্মু ।
তানজুঃ সরি।
আমিঃ সরি কিসের জন্য?
তানজুঃ ঐদিন আপনার সাথে যা করছি সেটার জন্য । আসলে আমি বুঝতে পারি নি আপনি এতটা মাইন্ড করবেন যে বিয়ের আগেই চলে আসবেন।
( আজব প্রাণী মাইরি। ও নাকি বুঝতে পারে নি মাইন্ড করবো কি না)
আমিঃ ইটস ওকে । আর আমি তো ভুলে গেছি ওসব বাদ দেন ওসব কথা ।
তানজুঃ তাহলে আমি আসছি থেকে আপনি আমার সাথে কথা বলেন নি কেন?
আমিঃ বিরক্ত করতে চাই নি তাই ।
তানজুঃ ওহহহ।।
আমিঃ আজ তো ভার্সিটি গেছলেন। তো কেমন লাগলো আমাদের ভার্সিটি?
তানজুঃ এখন কিন্তু ওটা আমার ও ভার্সিটি।
আমিঃ ওহহ হ্যাঁ তো। তো কেমন কাটলো আপনার প্রথম দিন?
তানজুঃ ভালোই । একটা কথা বলি?
আমিঃ হ্যাঁ বলুন
তানজুঃ আপনি ভার্সিটি জান না কেন?
আমিঃ যাই তো। রোজ একবার করে ।
তানজুঃ সেটা তো আড্ডা দেওয়ার জন্য ।
আমিঃ মাঝে মাঝে ক্লাস ও করি। আর আমরা তো আপনার মতো এতটা রিগুলার স্টুডেন্ট না।
তানজুঃ আমি আপনার ছোট সো তুমি বলে বেশি ভালো হবে ।
আমিঃ হুম বলতে পারি কিন্তু একটা শর্ত আছে
তানজুঃ কি শর্ত?
আমিঃ তুমিও তাহলে তুমি বলবা
তানজুঃ আচ্ছা । একটা কথা বলি?
আমিঃ হুম বলো।
তানজুঃ আমরা তো এখন একসাথে থাকবো সো ঝগড়া না করে আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি না?
( যারে বউ বানাতে চাই হেতি নাকি আমার বন্ধু হবে)
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে ।
এমন সময় আম্মু তানজুকে ডাকলো। তানজু চলে গেল ।
যেহেতু তানজু সরি বলছেন তাহলে ওর সাথে বন্ধুত্ব করাই যায়। আর কেউ যদি নিজের ভুলটা বুঝতে পারে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত । আর জগতের মহান মানব রা বলে গেছে প্রেমের শুরুটা বন্ধুত্ব থেকেই সৃষ্টি হয়। তারমানে হালকার উপর ঝপসা গ্রীন সিগনাল পেয়ে গেছি।
তানজু তো চলে গেল। একা একা থাকার থেকে পিউটা যদি থাকতো তাহলে ওর সাথে তানজু কে নিয়ে গল্প করা যেত। এখন আবার নিচে যাবো? না থাক খাওয়ার পর ওকে নিয়ে ছাঁদে আসবো।
আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে
আকাশের দিকে তাকালাম । একজায়গায় বেশ কয়েক টা তারা জমাট বেঁধে আছে । আমি বুঝি না এই তারাগুলো একসাথে এমন জমাট বেঁধে থাকে কেন? অন্য তারাগুলো কতটা দূরে দূরে থাকে। তবে দাদি বলে ঐ তারাগুলো নাকি সাতভাই চম্পা । যদিও বা এটা কুসংস্কার তবুও শুনতে ভালোই লাগে ।
তানজুঃ কি দেখো আকাশে তাকিয়ে?
আমিঃ তোমায় তো আম্মু ডাকলো
তানজুঃ হুম। এমনিতেই ডাকছিলো । এই নাও তোমার পিউ।
( আমি অবাক হয়ে তানজুর দিকে তাকালাম। আমি এইমাত্র পিউয়ের কথা ভাবছিলাম আর ও পিউ কে নিয়ে আসলো)
আমিঃ তুমি হঠাৎ পিউ কে নিয়ে আসলা যে?
তানজুঃ আন্টি বললো তুমি রোজ এর সাথে গল্প করো। তাই এটাকে ড্রয়িং রুমে ঘুরতে দেখে ধরে নিয়ে আসলাম ।
আমিঃ ওহহ আচ্ছা।
তানজুঃ এটাও ঠিক তোমার মতোই ফাজিল ।
আমিঃ কেন?
তানজুঃ যখনি ধরতে যাই দৌড়ে পালিয়ে যায় ।
আমিঃ হুম। দেখতে হবে না বন্ধু টা কার।
তানজুঃ হুম । যেমন গুরু তেমন শীর্ষ ।
আমিঃ হাহাহা।
তানজুঃ আচ্ছা রাস্তায় এদিকে ছেলেরা বিরক্ত করে না?
আমিঃ কেন?
তানজুঃ কাল থেকে একা একা ভার্সিটি যেতে হবে তো তাই জিজ্ঞেস করলাম ।
আমিঃ ওহহ। চিন্তা করিও না। আমি তোমায় রেখে আসবো এখন।
তানজুঃ আচ্ছা ঠিক আছে । তাহলে আমি নিচে গেলাম । একটু পরে আসিও রান্না শেষ হইছে ।
আমিঃ আচ্ছা ।
তানজু চলে গেল ।
আমিঃ পিউ কি বুঝলি? এটাই সুযোগ ওর মনে নিজের জায়গা করে নেওয়ার । আর তুই ওর সাথে ফাজলামি করলি কেন? তোর জন্য ও আমাকেও ফাজিল বললো। এখন থেকে তুই ও ফাজলামি করবি না আমিও করবো না কেমন।
পিউয়ের সাথে গল্প করতে করতে রুমে চলে আসলাম ।
.

আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে
রাতে খাওয়া করে একটু বই দেখে শুয়ে পড়লাম । সকাল বেলা কেউ দরজায় নক করছে।
আমিঃ আম্মু কি হইছে এতো দরজা ধাক্কা দিচ্ছো কেন?
তানজুঃ আমি তানজু।
আমিঃ তানজু? কোন তানজু?
তানজুঃ ওহহ এখন চিনতেও পারছো না। কেন স্বপ্নে কি কোনো পরী ঘুরে বেড়াচ্ছে?
আমি চোখ খুলে ভাবলাম আমি কি সব আবোল তাবোল বলছি।
আমিঃ ওহহ তানজু। হ্যাঁ বলো
তানজুঃ কয়টা বাজে? ভার্সিটি যেতে হবে না?
আমিঃ ওহহ। তুমি ৫ মিনিট অপেক্ষা করো আমি ৩০ মিনিটে আসছি।
তানজুঃ তাড়াতাড়ি আসো।
তানজুর সাথে কথা বলা শেষ করে আবার ঘুম । এবার ফোন বাজতে শুরু করলো।
সাকিব ফোন দিছে
আমিঃ হ্যাঁ বল
সাকিবঃ তুই নাকি ভার্সিটি যাবি? কই তুই?
( ওতেরি। কাল তো সবাইকে ফোন করে বলছি আজ ভার্সিটি যাবো। এখন যদি জানতে পারে আমি এখনো শুয়ে আছি তাহলে আমার গুটিল ছুটিয়ে দিবে)
আমিঃ হারামজাদা আমি অর্ধেক রাস্তায়। তুই কই। ( একটু পার্ট নিয়ে)
সাকিবঃ কুত্তা আমি ভার্সিটির সামনে মামার দোকানে বসে আছি । তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস তাই না ।
আমিঃ আরে না রে তুই একটু দারা আমি আসছি।
না আর শুয়ে থাকা যাবে না। তাড়াতাড়ি উঠে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হলাম ।
এরমাঝে তানজু আবার একবার ডেকে গেছে ।
আমিঃ হুম চলো।
তানজুঃ খাওয়া করবে না?
আমিঃ না থাক। ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো।
তানজুঃ না। তুমি খেয়ে নাও এরপর বের হবো।
আমিঃ তোমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে।
তানজুঃ দেরি হবে জন্য তুমি না খেয়ে বের হবা। দরকার নেই তুমি খেয়ে নাও।
তানজুর জিদের কারণে একটু খেয়ে এরপর বাইক নিয়ে বের হলাম ।
ভাবতেই কেমন জানি লাগছে তানজু আজ আবার আমার বাইকের পিছনে । তবে আজ ও আমার কাঁধে হাত দিয়ে ধরে আছে । আর টুকটাক কথাও বলছে ।
হঠাৎ সামনে কয়েক জন পুলিশ দেখতে পেলাম ।
আমিঃ তানজু
তানজুঃ হুম বলো।
আমিঃ ঐ দেখো সামনে পুলিশ।
তানজুঃ তো?
আমিঃ আজ বলবা না যে আমি ইভটিজার? হিহিহি
তানজু আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো । হঠাৎ একটা নিরিবিলি জায়গায় বাইক থামাতে বললো।
তানজুঃ বাইক থামাও।
আমিঃ কেন?
তানজুঃ তোমায় থামাতে বলছি তুমি থামাবা।
বাইক ব্রেক করলাম ।
তানজু নেমে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো।
আমিও বাইক টা রেখে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমিঃ কি হলো? তুমি হঠাৎ এই জায়গায় বাইক থামাতে বললা যে।
তানজুঃ তুমি জানো তোমার ঐদিন চলে আসায় আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি? কতটা বিরক্ত হয়েছি নিজেই নিজের উপর । নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারি নি । আর তুমি আবার
আমিঃ আরে আমি তো মজা করে বললাম। তুমি আবার এটাকে সিরিয়াস নিয়ে নিছো? এই দিকে দেখো
( তানজুকে আমার দিকে ফিরিয়ে নিলাম । তানজুর চোখ ছলছল করছে । )
আমিঃ এই পাগলী কান্না করছো কেন?
তানজুঃ আমি এসব সহ্য করতে পারি না ।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে বাবা আর বলবো না । হ্যাপি?
তানজুঃ হুম ।
আমিঃ এখন চলো যাওয়া যাক
তানজুঃ হুম ।
সাকিবরা যে টং দোকানে বসে আছে সেখানে এসে থামলাম । সবাই তো তানজুকে আমার পিছনে দেখে অবাক হয়ে গেছে।
আমি বাইকা টা একটু স্লো করে শুধু সাকিবকে বললাম
আমিঃ তোরা একটু বস আমি ওকে নামিয়ে দিয়ে আসি।
সাকিব কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু আমি ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভার্সিটির ভিতরে ঢুকলাম ।
তানজুকে রেখে আসলাম ।
শ্রাবণীঃ কি রে মেয়েটা কে?
সাকিবঃ বুঝতে পারছো না কে? ওর উনি।
রাকিবঃ কাল কি ভাবটাই না নিলো। আর আজ বাইকের পিছনে করে রং করা হচ্ছে ।
আমিঃ আরে তোরা যেটা ভাবছিস সেটা না। আমিও ভার্সিটি আসছিলাম তাই সাথে করে নিয়ে আসলাম ।
নিশাঃ বুঝি বুঝি । সবই বুঝি কোনটা ডাল কোনটা সুজি।
আমিঃ বোঝা ভালো।
শ্রাবণীঃ আমাদের সাথে পরিচয় ও করিয়ে দিলি না?
আমিঃ ওর ক্লাসের সময় হয়ে গেছে তাই রেখে আসলাম । ক্লাস শেষে পরিচয় করিয়ে দিবো ।
শ্রাবণীঃ হুম ।
মারুফঃ তো এখন কি ক্লাস করবি? না কি
আমিঃ চল যাই দেখে আসি ক্লাস রুমটা কেমন আছে । আর হ্যাঁ ভালো কথা আমাদের কোন রুমে ক্লাস হয় সেটাই তো মনে নাই ।
রাকিবঃ জিও গুরু। তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ ।
আমিঃ ওহহ তাই না কি। তোকে যদি আমার কথা জিজ্ঞেস করে বলবি খুব ব্যাস্ত মানুষ এখন দেখা দিতে পারবে না ।
হাবিবঃ বকবক বাদ দিয়ে এখন চল।
ভার্সিটির ভিতরে একটা জায়গায় বসে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি । 
আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে
এমন সময় আন্টি ফোন দিলো ওখানে থেকে উঠে একটু সাইডে আসলাম
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম শ্বাশুড়ি।
আন্টিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম । কেমন আছিস?
আমিঃ আমি তো ভালোই তুমি কেমন আছো?
আন্টিঃ হ্যাঁ ভালো । আমার মেয়ে কই?
আমিঃ ওকে তো ওর ক্লাসে নামিয়ে দিয়ে আসছি
আন্টিঃ ওহহ। তোর বউকে তোর কাছে পাঠিয়ে দিছি। খেয়াল রাখবি।
আমিঃ সেটা আবার বলতে
( আন্টির সাথে কথা বলতে সময় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো)
আমিঃ আন্টি কে যেন ফোন দিচ্ছে । আমি তোমায় একটু পরে ফোন দিচ্ছি কেমন?
আন্টিঃ আচ্ছা
আন্টির ফোন কেটে দিয়ে অপরিচিত নাম্বার টা রিসিভ করলাম।
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম ।
একটা মেয়েঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আমিঃ কে বলছেন?
মেয়েটাঃ বলো তো কে হতে পারি?
আমিঃ সরি খালাম্মা আমি বলতে পারবো না। বাই।
মেয়েটাঃ ঐ আমি তানজু
আমিঃ জানি। প্রথমেই বুঝে গেছি।
তানজুঃ তাহলে এতো নাটক করলা যে
আমিঃ তুমি ড্রামা করলা তাই ।
তানজুঃ ওহ। তো কার সাথে ফোনে এতো বিজি শুনি।
আমিঃ আপনার আম্মু ।
তানজুঃ ওহহ আচ্ছা। আমার তো ক্লাস শেষ হয়ে গেছে ।
আমিঃ ওহহ। তুমি এখন কই।
তানজুঃ একটা রাস্তা দিয়ে হাটছি। রাস্তায় লেখা মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট
আমিঃ ওহহ আচ্ছা । তুমি ওখানেই থাকো আমি আসছি।
তানজুঃ আচ্ছা ।
সবাইকে বলে তানজুকে নিতে গেলাম ।
তানজুকে নিয়ে এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম ।
এভাবেই চলছিলো আমাদের দিন।
খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমাদের মাঝে । এখন ওর সব কিছু আমার সাথে শেয়ার করে আমিও আমার সব কিছু ওর সাথে শেয়ার করি।
ও প্রতিদিন সকালে আমায় ঘুম থেকে তুলে দেয়। আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখে।
আর আমি আগের থেকে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে গেছি ওর উপর । শুধুমাত্র ওর জন্য প্রতিদিন ভার্সিটি যাই। ক্লাস না থাকলেও গিয়ে আড্ডা দেই।
আজ তানজুর জন্ম দিন । দিনটা ওর কাছে স্পেশাল আমার কাছেও।
সবাই মিলে ওকে সারপ্রাইজ দেওয়া প্ল্যান করলাম ।
শ্রাবণী আর নিশা তানজু কে নিয়ে ঘুরতে গেছে । এটাও প্ল্যানের একটা অংশ ।
এদিকে আমরা সবাই মিলে তানজুর রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখি । তানজুর আসার আগে আগেই একটা অনেক বড় বক্সের ভিতর আমি একহাতে কেক আর অন্য হাতে বেশ কিছু বেলুন নিয়ে ঢুকে পরি । 
আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে
একটু পরেই তানজু রুমে আসে । রুমে এসে ও তো অবাক । ও সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে । এরপর আমায় খুঁজতে শুরু করলো
তানজুঃ সুমন কই? ওকে যে দেখছি না।
সাকিবঃ ও একটা কাজে বাইরে গেছে । ফিরতে অনেক রাত হবে নাকি।
তানজুঃ কি আজব। আজ আমার জন্ম দিন আর ও সেটাও ভুলে গেছে ।
শ্রাবণীঃ কষ্ট পেয়ো না। হয়তো কোনো কাজ আছে তাই তো গেছে ।
( আমি ওদের কথা শুনছি আর মুচকি মুচকি হাসছি)
তানজুঃ এটা কিসের বক্স?
মারুফঃ এটাতে তোমার গিফট আছে । খুলে দেখো।
তানজু ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বক্সের উপর যে ফিতা দিয়ে বাঁধা ছিলো সেটা খুলতেই বেলুন গুলো উড়িয়ে দিলাম । এরপর ধীরে ধীরে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম । তানজু আমায় দেখে খুশিতে আমায় জড়িয়ে ধরলো । সবাই হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। যদিও বা এটা নিয়ে পরে অল্প ফাজলামি করে নি।
এরপর সবাই মিলে খুব আনন্দ করি।
এভাবেই চলছে আমাদের দিন। কাটছে সময় আনন্দের ধারায় । কিন্তু হঠাৎ সেই আনন্দের ধারায় একটা দালান বাঁধা হয়ে দাড়ালো।
একদিন ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছি সবাই মিলে হঠাৎ একটা ছোট ভাই আসলো
ছোটভাইঃ ভাইয়া আপনি এখানে। তাহলে ভাবি ওখানে কার সাথে বসে
( পরিচিত ছোট ভাই গুলো তানজুকে ভবি বলে। সেটা আমাদের সামনে তানজুর সামনে বলে না)
আমিঃ কি বলো?
ছোটভাইঃ হ্যাঁ । আমি এখনি দেখে আসলাম ভাবি কার যেন সাথে হাত ধরে বসে আছে । আমি ভাবলাম আপনি। কিন্তু আপনি তো এখানে ।
কথাটা শুনে আমার প্রায় সবকিছু থমকে দাঁড়ালো । সত্যি কি তানজু কারো হাত ধরে বসে গল্প করছে???
.
..
...
....
...আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে
..
.
To be continue........