.
-- আমি বিশ্বাস করি না। তুই আগে থেকেই জানতি
আমি বাথরুমে আছি এবং তুই নিজের ইচ্ছায়
বাথরুমে ঢুকেছিলি আমার সাথে উল্টা-পাল্টা
কিছু করতে। (রিমি)
.
সত্যি বলতে মেজাজটা এবার গরম হয়ে গেল।
এই মেয়েটা এত ঝগড়াটে কেন.? হুদাই খালি ঝগড়া করে।
আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
রাগের মাথায় রিমিকে ঠাস করে একটা
চড় মারলাম।
.
আমার হাতে চড় খেয়ে রিমি কিছুক্ষণ চুপ করে
দাঁড়িয়ে রইলো।
আমিও আর কিছু বললাম না।
কিন্তু একটুপর রিমি ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কান্না শুরু
করে দিল।
কাঁদতে কাঁদতে বললো,
.
-- কুত্তা, বদমাইশ, তুই আমাকে মারলি.? (রিমি)
.
আমি চোখ রাঙিয়ে কড়া গলায় বললাম,
.
-- মারবো না তো কি করবো.? তোকে কোলে
নিয়ে নাচবো.?
সেই তখন থেকে বলে যাচ্ছি আমি নিজের ইচ্ছায়
কিছু দেখি নি, ওটা একটা দূর্ঘটনা ছিল কিন্তু তুই
আমার কথা বিশ্বাস-ই করছিস না।
আমি নাকি নিজের ইচ্ছায় তোর সব দেখে ফেলেছি.!
আচ্ছা, আমাকে দেখে কি তোর অমন ছেলে
মনে হয়.? আমি কি এতটাই খারাপ.? (আমি)
.
আমার কথার জবাবে রিমি কোন
উত্তর দিল না।
আমি একটু দম নিয়ে বললাম,
.ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দে
তো, বাথরুমটা তোর না আমার.? (আমি)
.
রিমি কোনমত কান্না থামিয়ে ভাঙা
ভাঙা গলায় বলল,
.
-- তোর... (রিমি)
.ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
-- তাহলে কোন হিসেবে তুই আমার
দোষ দিচ্ছিস.?
তুই আমার-ই বাথরুমে ঢুকে দরজা না
আটকিয়ে গোসল করবি আর আমি ভুলবশত
সেটা দেখে ফেললেই দোষ.? (আমি)
.
রিমি কোন কথা না বলে কান্নার গতি আরো
বাড়িয়ে দিল।
রিমির কাজল কালো চোখ দিয়ে টপটপ করে
পানি পড়তে লাগলো।
.
সত্যি বলতে এমন অবস্থার জন্য আমি মোটেও
প্রস্তুত ছিলাম না।
সামান্য একটা চড় খেয়ে রিমি এত কান্না
করবে ভাবতেই পারি নি.!
তাছাড়া চড়টা তো আমি আস্তেইসমেরেছি, তার
তো ব্যাথা লাগার কথা না।
আমার ভাবলাম, "নরম গালে শক্ত হাত দিয়ে
মেরেছি, ব্যাথা লাগতেও পারে।"
.
এদিকে,
রিমি কোন দিকে ভ্রু-ক্ষেপ না দিয়ে একমনে কান্না
করেই যাচ্ছে। চুপ করার কোনো নামগন্ধ নেই।
রিমির এভাবে কান্না করা দেখে মনটা আরো
খারাপ হয়ে গেল।
ছোট বেলা থেকেই এই পেত্নীটার কান্না আমার একদম
সহ্য হয় না।
যখন-ই রিমি কাঁদে আমার মনটা হটাৎ করেই
খারাপ হয়ে যায়।
এমনটা কেন হয় আমি নিজেই জানি না।
এর উত্তর আমার অজানা।
.
যখন রিমির মা মারা যায় তখন রিমি খুব ছোট।
বুঝার বয়স হয়েছে কেবল।
সেদিন রিমি আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল।
কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল।
আমি সে দিন-ই শপথ নিয়েছিলাম রিমিকে আর কখনো
কাঁদতে দিবো না কিন্তু রিমি মাঝে মাঝে এমন সব কান্ড
করে যে তাকে না মেরে শান্তি পাই না।
আর একটু মারলেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দেয়।
.
আমি পুরোনো দিনের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে
রিমির দিকে তাকালাম। মেয়েটা এখনও কেঁদেই যাচ্ছে।
আমার কেন জানিনা রিমির উপর খুব রাগ উঠলো।
এত কান্নার কি আছে.? মনে হচ্ছে, ওর স্বামী মরেছে.!
আমি দিলাম একটা ধমক.! এক ধমকেই রিমি
চমকে উঠলো। সাথে সাথে কান্না বন্ধ।
আমি একটু কড়া গলায় বললাম,
.
-- খালি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেই যাবি
নাকি কিছু বলবি.?
এখনও কি তোর মনে হয় আমি নিজের ইচ্ছায়
তোকে ওই অবস্থায় দেখেছি.? (আমি)
.
রিমি কিছু না বলে জোরে জোরে নাক
টানতে লাগলো।
কেঁদে কেঁদে মেয়েটা চোখের পানি, নাকের পানি
এক করে ফেলেছে।
রিমি কিছু বলছে না বলে আবার ধমক দিলাম।
বললাম,
.
-- কিছু বলবি নাকি আরেকটা লাগাবো.? (আমি)
.
রিমি চোখের পানি মুছে নাক
টেনে বলল,
.
-- হ্যা, মার না মার... শুধু ঐটাই করতে পারবি।
কুত্তা, আমি তো মজা করে ওসব বলছিলাম।
তোর সাথে একটু মজা করছিলাম আর তুই
আমাকে মারলি।
বুঝতে পেরেছি তোদের বাড়িতে থাকি বলে আমাকে
আর সহ্য হয় না, তাই আমাকে ধরে ধরে মারিস।
ঠিক আছে থাকবো না আর তোদের বাড়িতে, চলে
যাচ্ছি আমি.! আর বদদোআ দিলাম, জীবনে তোর বিয়ে
হবে না। আমার গা'য়ে হাত তুলিস, কুত্তা তোকে আমি
দেখে নিবো। আমাকে তুই চিনিস না, হু.! (রিমি)
.
কথাগুলো বলেই রিমি নাক টানতে টানতে চলে গেল।
রিমির কথা শুনে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।
চড়টা না মারলেও পারতাম।
কিন্তু কে জানত পেত্নীটা আমার সাথে মজা করছিল।
আচ্ছা, রিমি কি এখন সত্যি সত্যি চলে যাবে.?
গেলে যাবে, পরে আবার গিয়ে নিয়ে আসবো।
পেত্নীটাকে ছাড়া বাড়িটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগে।
কিছুই ভালো লাগে না তখন...
.ডেঞ্জারাস মামাতো বোন
আমি আর অত কিছু না ভেবে গোসল করতে গেলাম।
গোসল করা শেষ করে বাইরে এসে রীতিমত
চমকে উঠলাম।
দেখি, রিমি বিছানার উপর বসে ফোন টিপছে।
আমাকে দেখে ওর বাকা ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে
হাসি ফুটে উঠলো।
.
কি ব্যাপার পেত্নীটা তাহলে যাই নি.? আমি তো
ভেবেছিলাম, সত্যি-ই হয় তোনচলে যাবে।
যাই হোক, যায় নি ভালই হয়েছে।
আমি মনে মনে একটু খুশি-ই হলাম কিন্তু মুখে তা
প্রকাশ করলাম না।
মাথা মুছতে মুছতে গম্ভীর গলায় রিমিকে বললাম,
.
-- কিরে যাইস নি এখনো.?
চলে যাবি বলে.? (আমি)
.
আমার কথা শুনে রিমি মাথা তুলে আমার দিকে
তাকালো। ভ্রু-কুঁচকে বলল,
.
-- চলে যাবো কেন.? এটা তোর বাড়ি নাকি, যে চলে
যেতে বলছিস। (রিমি)
.
আমি ভাব দেখিয়ে বললাম,
.
-- অবশ্যই এটা আমার বাড়ি.! চল ফুট
এখান থেকে। (আমি)
.
রিমি ভেঙচি দিয়ে বলল,
.
-- ইয়ে, ওর বাড়ি রে.! এটা আমার শ্বাশুড়ী
আম্মার বাড়ি ইয়ে মানে হচ্ছে শ্বশুড় বাড়ি
না মানে আম্মুর বাড়ি থুরি আব্বুর বাড়ি।
তাই এ বাড়িতে থাকার আমার যথেষ্ট অধিকার আছে। আমি এখানেই থাকবো। (রিমি)
.
রিমির কথায় খানিকটা অবাক হলাম।
চোখ পাকিয়ে বললাম,
.
-- এটা তোর শ্বশুড় বাড়ি.?
.
রিমি ভ্যাবলা মার্কা একটা হাসি দিল।
হেলেদুলে বলল,
.
-- হিহি, ওটা তো মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
তাছাড়া আমি শ্বশুড় বাড়ি বলি নি।
তুই তো গরু তাই কানে একটু কম শুনিস।
.
-- এই পেত্নী গরু কাকে বললি রে.? (রেগে)
.
-- কাকে আবার তোকে বললাম। (রিমি)
.
-- দেখ, এখন আমার একদম ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই।
তাই বিরক্ত না করে এখান থেকে যা। (আমি)
.
-- বাব্বাহ.! এত সাধু হলি কবে
থেকে.? (খোচা মেরে)
.
-- তোকে বলা লাগবে নাকি, যা এখান
থেকে... (আমি)
.
রিমি ভেঙচি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিছানার
উপর বসলাম। যাক বাবা, বাঁচা গেল।
এখন একটু শান্তিতে থাকা যাবে কিন্তু কিসের
শান্তি, রিমি মিনিট দু'য়েক পরেই আবার আমার ঘরে
এসে হাজির হলো।
.
আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে
ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল।
তেঁতো গলায় মধু ঢেলে মিষ্টি কন্ঠে বলল,
.
-- টাকা দে.! (রিমি)
.
-- কি বললি.? (অন্যমনস্ক হয়ে)
.
-- বললাম টাকা দে.! (রিমি)
.
-- কিসের টাকা.? (অবাক হয়ে)
.
-- আমার কাজের টাকা। (রিমি)
.
-- কাজ.? আরে কিসের কাজ, আর কিসের টাকা.?
আমি তোর কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝতে
পারছি না। (আমি)
.
-- বুঝছিস না নাকি বুঝেও না বোঝার
ভান করছিস.? (ভ্রু-কুঁচকে)
.
- আজব তো.! না বোঝার ভান করবো কেন.?
আমি সত্যি-ই তোর কথার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে
পারছি না। তুই কেন টাকা চাইছিস আর কি
কাজ করেছিস আমি ওসব জানি না। (আমি)
.
-- কি কাজ করেছি মানে.?
তুই চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছিস না কি
কাজ করেছি.? (রিমি)
.
-- না বললে দেখবো কি করে.? (আমি)
.
-- কুত্তা, আমি বাড়িতে চলে যাওয়ার পর তো
পুরো ঘর গোয়ালঘর বানিয়ে ফেলছিলি.!
জিনিসপত্র, জামা-কাপড়, বই-খাতা এদিক সেদিক
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছিলি।
পুরো ঘর থেকে কি বিচ্ছিরি আর বাজে বোটকা গন্ধ
বের হচ্ছিল। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না।
মনে হচ্ছিল এই ঘরে কোন মানুষ না গরু-ছাগল থাকে।
আর বিছানার কথা কি বলবো.! একেবারে যাচ্ছেতাই.!
জামা-কাপড়ে তো হাত দেওয়া যাচ্ছিল না, গন্ধে
বমি চলে আসছিল বারবার.!
আর এখন দেখ, পুরো ঘর চকচক করছে।
এসব কে পরিষ্কার করেছে শুনি.?
কে এত সুন্দর করে ঘরটা গুছিয়েছে.? (রিমি)
.
-- কে আবার, আমার শ্রন্ধেয় আম্মাজান.! (আমি)
.
-- ঘোড়ার আন্ডা.! আম্মুর তো আর খেয়ে-দেয়ে
কাজ নেই যে তোর ঘর গোছাতে যাবে। (রিমি)
.
-- তাহলে কে গুছিয়েছে.? (আমি)
.
-- কে আবার, আমি ছাড়া এ কাজটা আর কে
করে শুনি.? (রেগে)
.
-- তুই গুছিয়েছিস.? (আমি)
.
-- হুমম। (রিমি)
.
-- ওহ, তা গুছিয়েছিস ভালো কথা টাকা
চাইছিস কেন.? (আমি)
.
-- টাকা তো চাইবই, আমার কাজের টাকা
আমি নিবো না.? (রিমি)
.
-- এ্যাহ্, কাজের টাকা রে.! কি এমন কাজ
করেছিস যে টাকা দেওয়া লাগবে.!
সামান্য ক'টা কাজ করেই টাকা.? (আমি)
.
-- এত গুলা কাজ করলাম তবুও তোর
কাছে সামান্য.? ঘর গুছিয় দিলাম, বিছানা ঠিক
করে দিলাম, জামা-কাপড় ধুয়ে দিলাম
আর কি চাস.? (রিমি)
.
-- এসব তো তুই আগে থেকেই করতি। (আমি)
.
-- হু করতাম তো। (রিমি)
.
-- তাহলে টাকা চাইছিস কেন.?
আগে তো চাইতি না.! (আমি)
.
-- আগের দিন বাঘে খাইছে, তাই ওসব ভুলে যা।
এখন কোন কাজ-ই আর ফ্রিতে হবে
না, টাকা লাগবে.! (রিমি)
.
-- ইয়ে... টাকা লাগবে রে.?
একটা কানা কড়িও দিব না তোকে। (ভাব নিয়ে)
.
আমার কথা শুনে রিমি আমার কাছে
তেড়ে আসলো।
শার্টের কলার ধরে ধমক দিয়ে বলল,
.
-- কুত্তা, টাকা দিবি না মানে কি.? (রিমি)
.
-- টাকা দিবো না মানে দিবো না। (আমি)
.
-- তুই দিবি না, তোর বাপ দিবে.! (রিমি)
.
-- ঠিক আছে আমার বাবার কাছ
থেকে নিয়ে নিস। (আমি)
.
-- শ্বশুড় আব্বার কাছে থেকে টাকা নিতে
পারবো না। (রিমি)
.
রিমি কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলো।
আমি রাগী লুক নিয়ে রিমির দিকে তাকালাম।
.
.
.
চলবে..... ??????